নয়াদিল্লি: ভারতে এগোচ্ছে। উন্নত হচ্ছে বিজ্ঞানে, এগোচ্ছে প্রযুক্তিতে। বিশ্বে ভ্যাকসিন সরবরাহ করছে, মহাকাশ বিজ্ঞানেও সাফল্য পাচ্ছে। কিন্তু এতগুলো 'আছে'র মধ্যে অনেকটা বড় 'নেই'ও রয়েছে। ভারতের (India) এত সাফল্যের উল্টোদিকে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে গ্রামের 'নেই'এর ছবিটা। সরকারি রিপোর্ট বলছে, ভারতের গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ধুঁকছে। প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ডাক্তার ও কর্মী রয়েছে। কম রয়েছে পরিকাঠামোও (infrastructure)। যদিও গত এক দশকে অনেকটাই বেড়েছে ডাক্তার-নার্সের সংখ্যা। কিন্তু তারপরেও বাড়তি চাহিদা (Demand) ছুঁতে পারেনি।


কোন রিপোর্ট কী বলছে?
গ্রামীন স্বাস্থ্য পরিসংখ্যান বা Rural Health Statistics 2020-21. চলতি মাসেই এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মান্ডব্য। সেখানেই এই ছবিটা স্পষ্ট হয়েছে।


সারা দেশে রয়েছে:
১ লক্ষ ৫৭ হাজার ৮১৯ টি সাব সেন্টার (Sub Centre)। ৩০ হাজার ৫৭৯টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। ৫৯৫১টি কমিউনিটি হেল্থ সেন্টার (Community Health Centre)। এছাড়াও ১২২৪টি সাব ডিভিশনাল (Sub Divisional Hospital) এবং ৭৬৪টি জেলা হাসপাতাল (District Hospital) রয়েছে।


বেড়েছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র:
রিপোর্ট বলছে , ২০০৫ সালের তুলনায় ২০২১ সালে দেশজুড়ে বিভিন্ন স্তরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের (Health Centre) সংখ্যা বেড়েছে। গত দেড় দশকে জাতীয় স্তরে সাব সেন্টার বেড়েছে দশ হাজারেরও বেশি। সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি দেখা গিয়েছে, রাজস্থান (Rajasthan), গুজরাত (Gujrat), মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তীসগঢ়ে। একই ধারা বজায় রেখে জাতীয় স্তরে বেড়েছে কমিউনিটি হেল্থ সেন্টারের সংখ্যাও। মোট ২১৩৫টি CHC বেড়েছে। বৃদ্ধির দিকে প্রথম দিকে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ (UttarPradesh), পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal), তামিলনাড়ু, রাজস্থান এবং বিহার। ২০০৫ সালের তুলনায় ২০২১ সালে বেড়েছে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সংখ্যাও। জম্মু-কাশ্মীর, কর্নাটক, গুজরাত, অসমে বেড়েছে phc. কিন্তু তারপরেও গ্রামীন এলাকায় স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।


অভাব কোথায়:
পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে তুলমূল্য বিচার যদি করা যায়। তাহলে গ্রামীন স্বাস্থ্যক্ষেত্রে (Rural Healthcare) আগের তুলনায় পরিকাঠামো বা ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা কোনওটাই কমেনি। সংখ্যা বেড়েছে কিন্তু প্রয়োজন অনুপাতে বাড়েনি। যার ফলে প্রকট হয়েছে অভাব।  
 
এএনএম কর্মী:
প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর মূল স্তম্ভ বলা যায় অক্সিলিয়ারি নার্স মিডওয়াইফ (ANM কর্মী), আশা কর্মীদের। মা-শিশুর স্বাস্থ্য থেকে, কমিউনিটি হেলথ, কোনও এলাকায় কোনও সংক্রমণের প্রকোপ। সব কিছুর উপরেই নজর রাখেন এঁরা। ২০০৫ সালের সঙ্গে ২০২১ সালের তথ্য বিচার করলে দেখা যাবে মহিলা স্বাস্থ্যকর্মী, ANM কর্মীদের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু তার সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে খালি পদের সংখ্যা। ফলে শতকরার বিচারে অভাবও বেড়েছে। ২০১৫ সালে যেখানে ফাঁকা পদ ছিল মোট পদের ৫ শতাংশ। ২০২১ সালে সেটা দাঁড়িয়েছে ২০ শতাংশে।  




প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তার:
একই ছবি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতেও (Primary Health Care)। ডাক্তারের সংখ্যা বাড়লেও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ফাঁকা পদের সংখ্যা। ২০০৫ সালের তুলনায় ২০২১ সালে ফাঁকা পদের সংখ্যা দ্বিগুণ রয়েছে।




বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সঙ্কট:
গ্রামীন স্বাস্থ্য পরিষেবায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন এঁরা। ঠিকমতো স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে শল্যচিকিৎসক (surgeons), প্রসূতি বিশেষজ্ঞ (obstetricians and gynaecologists) এবং শিশু বিশেষজ্ঞের (paediatricians) প্রয়োজন থাকে। কিন্তু এখানে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির ছবিটা ফুটে উঠেছে তথ্যে। ২০০৫ সালের এই ক্ষেত্রে ফাঁকা পদ ছিল ৫৩ শতাংশ। ২০২১ সালে এসে সেই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৮ শতাংশে। এই তথ্য অনুযায়ী সারা দেশে গ্রামীন স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ৯০০০-এরও বেশি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের ঘাটতি রয়েছে।




সঙ্কট নার্সেরও:
স্বাস্থ্য পরিষেবায় অন্যতম ভিত্তি নার্সরা (Nurse)। সেখানেও বেড়েছে সঙ্কট। গ্রামীন এলাকার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ২০১৫ সালের তুলনায় ২০২১ সালে Sanctioned Post প্রায় তিনগুণের কাছাকাছি বেড়েছে। নার্সের সংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু তা চাহিদার কাছাকাছিও যেতে পারেনি। ২০০৫ সালে যেখানে নার্সদের ফাঁকা পদ ছিল ১৫ শতাংশ। ২০২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ শতাংশে।  




ল্যাব টেকনিশিয়ান:
চিকিৎসা করানোর জন্য প্রয়োজন পরীক্ষা। কিন্তু ল্য়াব টেকনিশিয়ানের (Lab Technician) অভাব থাকলে গোড়াতেই ধাক্কা খাবে চিকিৎসা পরিষেবা। ঠিক সেটিই দেখা যাচ্ছে সদ্য প্রকাশিত RHS-সমীক্ষার তথ্যে। ২০০৫ সালেলর তুলনায় ২০২১ সালে পদ বাড়লেও, ফাঁকা পদের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় পাঁচ গুণের কাছাকাছি। ১৬ শতাংশের জায়গায় ২০২১ সালে ফাঁকা পদের শতকরা হার বেড়েছে ৩১ শতাংশ।


শুধু তাই নয়, ফার্মাসিস্ট (Pharmacist) এবং রেডিওগ্রাফারের সঙ্কটও রয়েছে দেশে। এমন অভাব নিয়ে কীভাবে চলছে গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবা (Rural Health)? এর মধ্য়েই গত দু'বছরেরও বেশি সময় ধরে কোভিডে ভুগছে ভারত। দ্বিতীয় ঢেউয়ে মারাত্মক ধাক্কাও লেগেছে। সেখানে গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর এমন ছবি দেখে কার্যত চোখ কপালে বিশেষজ্ঞদের।  


আরও পড়ুন: আট বছরে রেকর্ড মূল্যস্ফীতি! কীভাবে চলবে সংসার?