নয়াদিল্লি: অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং AtraZeneca সংস্থার তৈরি Covishield টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া  নিয়ে কাটাছেঁড়া চলছেই। সেই আবহেই এবার নোভেল করোনাভাইরাসের দেশী টিকা Covaxin-এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক মাথাচাড়া দিল। হায়দরাবাদে স্থিত Bharat Biotech-এর তৈরি কোভিড-১৯ টিকা CoVaxin-এর ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক জার্নালে, তাতে Indian Council of Medical Research (ICMR)-কেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ গবেষণায় ICMR-এর যোগদানের কথা জানানো হয়। কিন্তু তাতে আপত্তি জানিয়েছে ICMR. রিপোটটি প্রত্যাহারের দাবি তুলেছে তারা। (Covaxin Safety Reports)


Covaxin-এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এবং ঝুঁকি নিয়ে রিপোর্টটি সামনে আসার পরই শোরগোল পড়ে যায়। আর তার পরই, শনিবার ভারতীয় বিশ্ব বিদ্যালয়ের গবেষক এবং আন্তর্জাতিক জার্নালের সম্পাদককে চিঠি দেন ICMR-এর ডিরেক্টর জেনারেল রাজীব বহেল। তিনি জানিয়েছেন, এই দুর্বল গবেষণার সঙ্গে ICMR-কে যুক্ত করা যাবে না। গবেষণায় পদ্ধতিগত ত্রুটির পাশাপাশি ভুলক্রমে গবেষণাপত্রে ICMR-কে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। জার্নাল থেকে গবেষণাপত্রটি তুলে নেওয়ারও আর্জি জানিয়েছেন বহেল। এমনকি ভারতীয় গবেষকদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। পাশাপাশি, ICMR-এর কাছে গবেষকদের ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি জানিয়েছেন তিনি। (ICMR)


বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটির (BHU) গবেষকরা মিলে সম্প্রতি Covaxin-এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। 'long Term Safety Analysis of the BBVIS52 Coronavirus Vaccine in Adolescents and Adults: Findings from a 1 Year Prospective Study in North India' শীর্ষ একটি গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করা হয় সম্প্রতি। ওই রিপোর্টে বলা হয়, যে ৯২৬ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের এক তৃতীয়াংশের শরীরেই Covaxin-এর ক্ষতিকর প্রভাব লক্ষ্য করা গিয়েছে, যাকে 'Adverse Events of Special Interest' (AESI) হিসেবে উল্লেখ করেছেন গবেষকরা।,


BHU-এর ওই গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের অগাস্ট মাস পর্যন্ত ৯২৬ জনকে নিয়ে পরীক্ষা চালানো হয়, যাতে ৬৩৫ জন কিশোর, ২৯১ জন প্রাপ্তবয়স্ক যাঁরা Covaxin নিয়েছিলেন। টিকা নেওয়ার এক বছরের মধ্যে শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় তাঁদের শরীরে। সাধারণ জ্বর, ব্যথা-যন্ত্রণার থেকে সেই অসুস্থতা একেবারেই আলাদা ছিল বলে জানিয়েছেন তাঁরা।


আরও পড়ুন: Cooch Behar: ২১ বছরের তরুণের মেরুদণ্ডের সফল অস্ত্রোপচার, নজির কোচবিহার মেডিক্যালে


গবেষণাপত্রে আরও বলা হয়েছে, বিশেষ ধরনের এই অসুস্থতা, যার পোশাকি নাম AESI, তার উপর Covaxin-এর প্রভাব থাকতে পারে। কারণ যাঁরা টিকা নিয়েছিলেম, তাঁদের ৫০ শতাংশ এক বছরের মধ্যে ভাইরাল আপার রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট সংক্রমণের শিকার হন। স্ট্রোক এবং Guillain-Barre Syndrome দেখা যায় ১ শতাংশের মধ্যে।  Guillain-Barre Syndrome একটি অটোইমিউন স্নায়ুঘটিত রোগ। এই রোগ অত্যন্ত বিরল একটি রোগ, যার আওতায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্নায়ুকে আক্রমণ করে। এই রোগ হাত-পা দুর্বল হয়ে যায়, শরীর কাঁপতে থাকে। পায়ের পাতা আঙুল হয়ে শরীরের উপরের অংশ ঝনঝন করে। সিঁড়ি ভেঙে উঠতে কষ্ট হয়, শুয়ে থাকলেও শ্বাসকষ্ট হয় এবং লালা আটকে দমবন্ধ হওয়ার জোগাড় হয়।  টাইফয়েডের কথাও উল্লেখ রয়েছে রিপোর্টে, পাশাপাশি, টিকা নেওয়ার পর মেয়েদের অনিয়মিত ঋতুস্রাবের ঝুঁকির কথাও উল্লেখ রয়েছে।


গবেষকদের তত্ত্বাবধানে তৈরি ওই রিপোর্টটি Springer Nature জার্নালে প্রকাশিত হয়, যা আসলে আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা International Society of Pharmacovigilance-এর অধীনে রয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ওষুধের সঠিক এবং নিরাপদ ব্যবহার নিয়ে নানা গবেষণা তুলে ধরে তারা। BHU-এর গবেষণাপত্রটিও সেখানেই প্রকাশিত হয়। টিকা নেওয়ার পর চার জনের মৃত্যুও হয় বলে দাবি করা হয়েছে গবেষণাপত্রে। তাঁদের সকলেরই ডায়বিটিস ছিল, হাইপারটেনশনে ভুগতেন তিন জন, টিকা নেওয়ার আগে কোভিড হয়েছিল দু'জনের।  এর মধ্যে দু'জনের স্ট্রোকে মৃত্যু হয় বলে জানানো হয়েছে। একজনের মৃত্যু হয় কোভিড পরবর্তী রাইনোসেরিব্রাল মিউকারমাইকোসিস এবং অন্য জন টিকা নেওয়ার পর থেকে প্রায়শই অজ্ঞান হয়ে যেতেন, মৃত্যুর আগেও সেই ধারা বজায় ছিল বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।