নয়াদিল্লি: ফের ভারতীয় অভিবাসীদের নিয়ে পঞ্জাবে নামল আমেরিকার সেনার বিমান। এবার ১১৬ জন ভারতীয় অভিবাসীকে ফেরত পাঠাল আমেরিকার ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার। শনিবার মধ্যরাতে অমৃতসরে নামে আমেরিকার সেনার A C-17 বিমানটি। আগে যে সময়সূচি দেওয়া হয়েছিল, তার চেয়ে প্রায় ৯০ মিনিট দেরিতে এসে পৌঁছয় ওই বিমান।
শনিবার রাত ১১টা বেজে ৪০ মিনিটে অমৃতসর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামে আমেরিকার সেনার বিমান। যে ১১৬ জন অভিবাসীকে ফেরত পাঠিয়েছে আমেরিকার সরকার, তার মধ্যে ৬৭ জন পঞ্জাবের বাসিন্দা, ৩৩ জন হরিয়ানার, ৮ জন গুজরাতের, ৩ জন উত্তরপ্রদেশের। গোয়া, মহারাষ্ট্র এবং রাজস্থান থেকে ২ জন করে, হিমাচলপ্রদেশ এবং জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ১ জন ছিলেন বিমানে। দেশে ফেরা কয়েক জনের পরিবার বিমানবন্দরেও উপস্থিত ছিলেন।
বিমানবন্দরে নামার পর আমেরিকা ফেরত ভারতীয়দের প্রথমে অভিবাসী প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। সেখানে তাঁদের পরিচয় যাচাই করা হয়, চলে জিজ্ঞাসাবাদ। এর পর বাড়ি যেতে অনুমতি দেওয়া হয়। এই নিয়ে দ্বিতীয় দফায় আমেরিকা থেকে ভারতীয় অভিবাসীদের ফেরত পাঠাল ট্রাম্প সরকার। আগের বার হাতে হাতকড়ি, পাযে শিকল পরিয়ে ভারতীয়দের বিমানে তোলা হয়েছিল। এবারেও কি তেমনই হয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি এখনও পর্যন্ত। কারণ বিমানের অন্দরের বা বিমানবন্দরে ভারতীয় অভিবাসীরা নামার পর তাঁদের কোনও ছবি প্রকাশ করা হয়নি।
তবে এখানেই শেষ নয়। রবিবারই তৃতীয় দফায় আরও ১৫৭ ভারতীয়র দেশে ফেরার কথা। তাঁদের মধ্যে ৫৯ জন হরিয়ানার, ৫২ জন পঞ্জাবের, ৩১ জন গুজরাতের। অন্য রাজ্যের বাসিন্দারাও রয়েছেন তালিকায়। কেন্দ্র আগেই জানিয়েছিল, আরও ৪৮৭ জনকে ফেরত পাঠাচ্ছে আমেরিকা সরকার। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কারণ আমেরিকায় বৈধ কাগজপত্র ছাড়া বসবাসকারী প্রায় ১৮০০০ ভারতীয়কে ট্রাম্প সরকার চিহ্নিত করেছে বলে জানা গিয়েছে।
এর আগে, গত ৫ ফেব্রুয়ারি ১০৪ জন ভারতীয়কে নিয়ে অমৃতসরে নামে আমেরিকার সেনার বিমান। ওই ১০৪ জনের মধ্যে ৩৩ জন হরিয়ানার, ৩৩ জন গুজরাতের, ৩০ জন পঞ্জাবের, ৩ জন মহারাষ্ট্রের, ৩ জন উত্তরপ্রদেশের, ২ জন চণ্ডীগড়ের ছিলেন। টেক্সাস থেকে তাঁদের নিয়ে রওনা দেয় বিমানটি। হাতে হাতকড়া, পায়ে বেড়ি পরিয়ে বিমানে তোলা হয়েছিল সকলকে। সেই নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। এবারও পঞ্জাবের আম আদমি পার্টি সরকার রাজ্যে আমেরিকার সেনার বিমান নামানো নিয়ে সরব হয়েছে। বেছে বেছে পঞ্জাবেই কেন আমেরিকার সেনার বিমান নামানো হচ্ছে, কেন রাজ্যকে বদনাম করা হচ্ছে, প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান।
দ্বিতীয় বার আমেরিকার মসনদে ফেরার আগেই বেআইনি অভিবাসীদের দেশ থেকে বিতাড়িত করবেন বলে ঘোষণা করেছিলেন ট্রাম্প। ক্ষমতায় এসেই সেই কাজে হাত দিয়েছেন তিনি। কিন্তু যে সময় ভারতীয় অভিবাসীদের ফেরত পাঠাতে শুরু করেছেন তিনি, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমেরিকা সফরের ঠিক আগে ভারতীয়দের নিয়ে প্রথম বিমানটি নামে অমৃতসরে। সফর মেটার পরও দ্বিতীয় বিমানটি নামল, আবার তৃতীয়টিও আসছে। তাই মোদি সরকার ট্রাম্পের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখার কথা বললেও, ট্রাম্প মোটেই তাতে সাড়া দিচ্ছেন না বলে মত কূটনীতিকদের।
নাগরিকদের হাতে হাতকড়া, পায়ে বেড়ি পরানো নিয়ে কেন নরেন্দ্র মোদি সরকার কোনও প্রতিবাদ জানাচ্ছে, সেই নিয়ে আগেও প্রশ্ন ওঠে। কিন্তু এ নিয়ে ভারতের তরফে প্রকাশ্যে আমেরিকার নিন্দা করা হয়নি। বরং বেআইনি অনুপ্রবেশকে উৎখাত করার কথাই শোনা যায় তাঁর মুখে। অন্য দেশ যখন নিজেদের নাগরিকদের হাতে-পায়ে বেড়ি পরানোর বিরোধিতা করছে, ভারতের তরফে এমন নরম অবস্থান কেন, সেই নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরাও।
পাশাপাশি, এত সংখ্যক মানুষ কেন ঝুঁকি নিয়ে দেশ ছাড়ছেন, কেন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারছে না সরকার, উঠছে সেই প্রশ্নও। শনিবার রাতে আমেরিকা থেকে ফেরা এক ভারতীয়র পরিবার জানিয়েছে, তাদের ছেলে ২০ দিন আমেরিকা পৌঁছন। এজেন্ট ধরে আমেরিকা পৌঁছনোর জন্য ৪৫ লক্ষ টাকা খরচ করে ওই পরিবার। গয়না এবং জমিও বিক্রি করে দেয় তারা। যথেষ্ট কর্মসংস্থান না থাকাতেই এই ঝুঁকি নেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছে ওই পরিবার।
পঞ্জাবের আর এক কৃষক পরিবার জানিয়েছে, গত ২৭ জানুয়ারি তাদের আমেরিকা পৌঁছন তাদের ছেলে। জমি বিক্রি করে ছেলের যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ৫০-৫৫ লক্ষ টাকা জোগাড় করে ছেলের ব্যবস্থা করা হয়। সব খুইয়ে দেশে ফিরল ছেলে। কেন ভুয়ো এজেন্টদের বিরুদ্ধে সরকার কোনও পদক্ষেপ করছে না, প্রশ্ন তুলেছে পরিবারগুলি।