নয়াদিল্লি: প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভকে ঘিরে ফের বিপর্যয়। কুম্ভের পুণ্যার্থীদের ভিড়ে নয়াদিল্লি স্টেশনে বেসামাল হয়ে গেল ভিড়। পদপিষ্ট হয়ে শিশু-সহ কমপক্ষে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতও হয়েছেন বহু মানুষ। শুরুতে যদিও পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা অস্বীকার করে রেল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানান রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। এর পর ঘটনাস্থল থেকে একের পর ছবি, ভিডিও এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান সামনে আসতে থাকলে, মৃত্য়ুর খবরে সিলমোহর দেন দিল্লির লেফটেন্য়ান্ট গভর্নর। পদপিষ্ট হয়ে প্রাণহানি ঘটেছে বলে জানান। কিন্তু পরে ফের সেই ট্যুইটে কাটছাঁট করেন তিনি। (New Delhi Station Stampede)


কখনও আগুন, কখনও পদপিষ্ট হয়ে মৃত্য়ু, এবারের মহাকুম্ভ ঘিরে একের পর এক অঘটন ঘটেই চলেছে। শনিবার রাতে ফের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেল। উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে আয়োজিত কুম্ভমেলায় যাওয়ার পথে প্রাণহানি হল কমপক্ষে ১৮ জনের। নয়াদিল্লি রেল স্টেশনে যাত্রীদের ভিড় উপচে পড়লে ধাক্কাধাক্কি-দমবন্ধকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত শিশু ও মহিলা-সহ কমপক্ষে ১৮ জনের মৃত্যুর খবর জানা যায়। আহত হয়েছেন অনেকে। (Maha Kumbh Rush Leads to Stampede)



কিন্তু এই ঘটনাকে ঘিরেও তীব্র টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। গত ২৯ জানুয়ারি মহাকুম্ভের দু'জায়গায় পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা যেন প্রথমে লুকনোর অভিযোগ ওঠে, এক্ষেত্রেও তেমন অভিযোগ উঠছে। কারণ রাত ৯টা-৯.৩০টা নাগাদ নয়াদিল্লি স্টেশনে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা যখন সামনে আসে, সেই সময় রেলের তরফে প্রথমে পদপিষ্ট হওয়ার মতো কিছু ঘটেছে বলেই অস্বীকার করা হয়। রেলের তরফে দাবি করা হয়, নয়াদিল্লি স্টেশনে কোনও পদপিষ্টের ঘটনা ঘটেনি। গুজব ছড়ানোর কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে দাবি করেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। প্রথমে তিনি লেখেন, 'নয়াদিল্লি রেল স্টেশনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দিল্লি পুলিশ, রেলপুলিশ পৌঁছেছে ঘটনাস্থলে। আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। স্পেশাল ট্রেন চালানো হচ্ছে, যাতে ভিড় সামলানো যায়'। কিন্তু একটি বারও পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা বা পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর উল্লেখ করেননি তিনি।



আর সেই আবহেই সামনে আসতে শুরু করে একের পর এক বিচলিত করে দেওয়া ছবি। প্রত্যক্ষদর্শীরা ভয়াবহ পরিস্থিতি বর্ণনা করেন। দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভিকে সাক্সেনা সেই আবহে সোশ্যাল মিডিয়ায় পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা স্বীকার করে নেন। তিনি লেখেন, ‘নয়া দিল্লি রেল স্টেশনে দুর্ভাগ্যজনক এবং দুঃখজনক ঘটনা ঘটে গিয়েছে, যেখানে বিশৃঙ্খলার জেরে পদপিষ্ট হয়ে প্রাণহানি ঘটেছে। এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার জন্য পীড়িত পরিবারগুলিকে সমবেদনা জানাই’।



কিন্তু কিছু সময় পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের মন্তব্যে কাটছাঁট করেন ভিকে সাক্সেনা। পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর উল্লেখ মুছে দিয়ে লেখেন, ‘নয়াদিল্লি স্টেশনে একিট দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছে। মুখ্যসচিব এবং পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা হয়েছে। পরিস্থিতি দেখতে বলেছি ওঁদের’। কিন্তু লেখা সংশোধন করার বিষয়টি কারও নজর এডডায়নি। সেই নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর কথা জানিয়ে সোশ্য়াল মিডিয়ায় পোস্ট লেখেন। এর পর অশ্বিনী ফের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে লেখেন, 'উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে'। একের পর এক ট্রেন দুর্ঘটনা থেকে এখন আবার পদপিষ্ট, এমনিতেই রেলমন্ত্রীর ভূমিকায় বার বার প্রশ্ন উঠেছে। শনিবার রাতের ঘটনায় নতুন করে পদত্যাগের দাবি উঠতে শুরু করেছে। 


আরও পড়ুন: শেষ মুহূর্তে প্ল্যাটফর্ম বদল ট্রেনের? মহাকুম্ভ যেতে হুড়োহুড়ি পড়ে যায় দিল্লিতে, পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু বেড়ে ১৮