নয়াদিল্লি: ভাল ভাবে বাঁচার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন। জমি-ভিটে বিক্রির পাশাপাশি, ঋণ পর্যন্ত নিয়েছিলেন ব্য়াঙ্ক থেকে। কিন্তু আমেরিকা থেকে হাতে হাতকড়া, পায়ে-কোমরে শিকল পরিয়ে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে তাঁদের। কী যন্ত্রণাময় অভিজ্ঞতা হয়েছে, একে একে তা তুলে ধরছেন দেশে ফেরা ভারতীয় অভিবাসীরা, যা রীতিমতো শিউরে ওঠার মতো। (Illegal Indian Immigrants)


বুধবার আমেরিকার বায়ুসেনার বিমান এসে নামে পঞ্জাবের অমৃতসরের শ্রী গুরু রামদাসজি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। যে ১০৪ জন ভারতীয় অভিবাসী সেখানে নামেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন পঞ্জাবের তরুণী সুখজিৎ কৌর। সুখজিতের হবু স্বামী আমেরিকায় থাকেন। বিয়ে সারতেই আমেরিকা রওনা দেন তিনি। কিন্তু বৈধ কাগজপত্র না থাকায়, এজেন্টের দ্বারস্থ হন। কিন্তু আমেরিকার সীমান্তে ধরা পড়ে যান সুখজিৎ। সেখান থেকে তাঁকে ফেরত পাঠিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার। (Donkey Route to US)


আত্মীয়রা জানাচ্ছেন, ২৬ বছর বয়সি সুখজিৎ অসৎ এজেন্টের চক্করে পড়ে যান। সুখজিতের বাবা কাবুল সিংহ এই মুহূর্তে ইতালিতে রয়েছেন। মা এবং ভাই রয়েছেন পঞ্জাবেই। সুখজিতের মতো এমন অনেকেই লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেছিলেন। কিন্তু খালি হাতে ফেরত আসতে হয়েছে তাঁদের। পঞ্জাবের NRI বিষয়ক মন্ত্রী কুলদীপ সিংব ঢালিওয়াল জানান, পঞ্জাব সরকার সকলের পাশে আছে। আমেরিকা যাওয়ার জন্য যাঁরা ঋণ নিয়েছিলেন, ব্যাঙ্ক যাতে সুদটুকু মকুব করে দেয়, সেই চেষ্টা করবেন তাঁরা। 


আমেরিকা যেতে কেউ ৩০ লক্ষ, কেউ ৪০ লক্ষ, কেউ আবার ৫০ লক্ষ টাকা খরচ করেছিলেন। ভেবেছিলেন, কোনও ভাবে একবার ঢুকে পড়তে পারলে, পরবর্তীতে আশ্রয় চেয়ে আবেদন জানাবেন। চরণজিৎ সিংহ নামের এক প্রবীণ জানিয়েছেন, তাঁর নাতি দিন ১৫ আগে আমেরিকার উদ্দেশে রওনা দেন। তিনি রাজি হননি। কিন্তু নাতিকে নিরস্ত করতে পারেননি কিছুতেই। কত টাকা যে বেরিয়ে গিয়েছে, তা ভেবে তল পাচ্ছেন না চরণজিৎ।


সালেমপুরের এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, তাঁর পরিবারের এক সদস্য মাসখানেক আগে আমেরিকায় পৌঁছন।  সেখানে বাস চালাচ্ছিলেন। দুই সন্তানও রয়েছে ওই ব্যক্তির। ৩০ লক্ষ টাকা খরচ করে আমেরিকায় ঢুকেছিলেন তিনি। গত ১৫ দিন ধরে কোনও যোগাযোগ ছিল না। বৃহস্পতিবার সকালে থানা থেকে ফোন পেলেন সরাসরি।


স্বর্ণ সিংহ নামের এক কৃষক জানিয়েছেন, তাঁর ৩ একর মতো জমি রয়েছে। উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকা যেতে চেয়েছিলেন ছেলে। IELTS দিয়ে ভিসার জন্য আবেদন করেও লাভ হয়নি। আট-ন’মাস আগে ছেলে ট্রাক চালকের কাজ নিয়ে দুবাই চলে যান। সেখানে পৌঁছে বেআইনি ভাবে আমেরিকা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ছেলে। সেই মতো দু’দফায় ছেলেকে ৪০-৪৫ লক্ষ টাকা পাঠিয়েছিলেন স্বর্ণ। তার আগে, দুবাইয়ে থাকার জন্য পাঠিয়েছিলেন ৬০ লক্ষ টাকা।  ছেলেকে ফেরত পাঠিয়েছে আমেরিকা থেকে। কিন্তু টাকার কথা ভাবছেন না স্বর্ণ। ছেলে যে ফিরে এসেছে, তাতেই শান্তি তাঁর।