কলকাতা: উত্তর ভারতে তওতের তাণ্ডব শেষ হতে না হতেই ধেয়ে আসছে ইয়াস। ঘূর্ণিঝড়ের নাম দিয়েছে ওমান। আরবি ভাষায় যার অর্থ হতাশা। আবহবিদদের আশঙ্কা, ধারে ভারে আমফান কিংবা আয়লার চেয়েও শক্তিশালী হতে পারে ইয়াস।


গতবছর ২০ মে, দক্ষিণবঙ্গের বুকে কাঁপুনি ধরিয়ে বয়ে গিয়েছিল আমফান। বছর ঘুরে আবারও একটা ঘূর্ণিঝড়ের ভ্রুকুটি। এবার আসছে ইয়াস। ইয়াস নামটি দিয়েছে ওমান। আরবিতে ইয়াস কথার অর্থ ডেসপেয়ার বা হতাশা। কঠিন করোনা আবহে চারপাশে যখন আতঙ্ক, লকডাউনের ধাক্কায় হতাশা গ্রাস করছে মানুষকে, ঠিক তখনই প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘনিয়ে আসছে বাংলার আকাশে।


আবহবিদ সুজীব কর আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ঝড়টা পাস করতে অনেক বেশি সময় নেবে, আমফানের চেয়েও ভয়ানক হবে। ২০০৯ সালে আয়লার সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড় আমফান বয়ে গিয়েছিল ঘণ্টায় ১৩৩ কিলোমিটারের গতিতে। কতটা দাপট দেখাবে ইয়াস? এটাই এখন সবার আশঙ্কা। আবহবিদ রামকৃষ্ণ দত্ত বলেন, আয়লা যেমন ক্ষতি করেছিল, তার চেয়ে বেশি উইন্ডস্পিড থাকবে, যত বেশি জলে থাকবে তত বেশি সঞ্চয় করবে, আয়লার চেয়ে বেশি প্রভাব থাকবে। এটা যেহেতু পূর্ণিমার সময় হচ্ছে, জলোচ্ছ্বাস আরও ২ মিটার বেশি হবে।


মেটেরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন ও ইউনাইডেট নেশনস ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়ার সদস্য দেশগুলি ঝড়ের নামকরণ করে। এই তালিকায় - ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমার, পাকিস্তান, মলদ্বীপ, ওমান, শ্রীলঙ্কা, তাইল্যান্ড, ইরান, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং ইয়েমেন। এই ১৩টি দেশ মিলে এখনও অবধি ১৩টি করে ঝড়ের নাম দিয়েছে। সবমিলিয়ে সংখ্যাটা ১৬৯। ওমান যেমন ইয়াসের নাম রেখেছে, তেমনই এর পরবর্তী ঘূর্ণিঝড়ের নাম রেখেছে পাকিস্তান। যার নাম গুলাব। তারপর আছে কাতার। তাদের দেওয়া সাইক্লোনের নাম শাহিন। এভাবেই ক্রমান্বয়ে সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা, তাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং ইয়েমেনের দেওয়া ঝড়ের নামই ব্যবহার করা হবে।


উ্ল্লেখ্য, ২০০৮ সালে মায়ানমারে ছোবল মেরেছিল ঘূর্ণিঝড় নার্গিস।  প্রাণ গিয়েছিল প্রায় ১ লক্ষ ৩৮ হাজার মানুষের। ২০০৭-এ বাংলাদেশে আছড়ে পড়ে সাইক্লোন সিডার। যাতে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। ২০০৪-এর সুনামিতে ভারত, তাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া মিলিয়ে প্রায় ২ লক্ষ ২৭ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। ১৯৯১-এ বাংলাদেশ সাইক্লোন এক লক্ষের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়েছিল। ১৯৭৭-এ অন্ধ্রপ্রদেশ সাইক্লোনে প্রাণ হারিয়েছিলেন প্রায় এক লক্ষ মানুষ। ১৯৭৫-এ চিনে ঝাপটা মারে টাইফুন নিনা। তাতে মৃত্যু হয় ২ লক্ষ ২৯ হাজার মানুষের। ১৯৭০ সালে ভারত ও পূর্ব পাকিস্তানে ছোবল মেরেছিল ঘূর্ণিঝড় ভোলা। তাতে মৃত্যু হয়েছিল প্রায় ৫ লক্ষ মানুষের।