নয়াদিল্লি: সীমান্ত সংঘাত পর্ব কেটে গিয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বরফ গলেছে একটু একটু করে। ভারত এবং চিনের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়ায় আরও উন্নতি চোখে পড়ল এবার, যার দরুণ পাঁচ বছর পর ফের কৈলাস-মানস সরোবর যাত্রা শুরু হতে চলেছে। চলতি বছরে, আসন্ন গ্রীষ্মেই কেলাস-মানস সরোবর যাত্রা নতুন করে শুরু করতে সম্মত হয়েছে দুই দেশ। তীর্থযাত্রা নিয়ে আগে থেকে যে চুক্তি রয়েছে দুই দেশের মধ্যে, সেই অনুযায়ীই সবকিছু হবে বলে জানিয়েছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। শুধু তাই নয়, ভারত এবং চিনের মধ্যে পুনরায় সরাসরি বিমান পরিষেবা চালু করা নিয়েও একপ্রস্থ আলোচনা হয়েছে, যাতে দুই তরফেই সায় বিলেছে বলে জানা গিয়েছে। (Kailash-Mansarovar Yatra)
ভারত এবং চিনের মধ্যে বিদেশ সচিব পর্যায়ের বৈঠকের আয়োজন হয়েছিল। দু’দিনের ওই বৈঠকে যোগ দিতে বেজিং গিয়েছিলেন ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিসরি। বৈঠকে দুই দেশ একাধিক বিষয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছেছে বলে খবর। বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে কাজানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে যে বৈঠক হয়েছিল, স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনতে যে যে কথা হয়েছিল, বিদেশ সচিব পর্যায়ের বৈঠকে সেগুলি পর্যালোচনা করে দেখা হয়। আর তাতেই কৈলাস-মানস সরোবর যাত্রা নতুন করে শুরু করতে সম্মত হয়েছে দুই দেশ। (India-China Relations)
কৈলাস পর্বত এবং তিব্বতের মানস সরোবর হ্রদকে ঘিরেই আবর্তিত হয় এই কৈলাস-মানস সরোবর যাত্রা। ২০২০ সালে অতিমারি পরিস্থিতিতে যাত্রা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তার পর নয় নয় করে পাঁচ বছর কেটে গেলেও, পুনরায় তীর্থযাত্রা শুরু করা যায়নি। বরং লাদাখ এবং অরুণাচলে সীমান্ত সংঘাত যত গভীরতর হয়েছে, তীর্থযাত্রার ভবিষ্যৎ নিয়ে ততই অনিশ্চয়তা বাড়তে থাকে। বিশেষ করে গালওয়ানে দুই দেশের সেনার মধ্যে সংঘর্ষ বাধলে, পরিস্থিতি আরও ঘোরাল হয়ে ওঠে। অবশেষে সেই জট কাটতে চলেছে। এবছর থেকেই ফের কৈলাস-মানস সরোবর যাত্রা শুরু হচ্ছে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে কৈলাস পর্বত হল ভগবান শিবের পবিত্র বাসস্থান। ভগবান ব্রহ্মা নিজে মানস সরোবরের সৃষ্টি করেছিলেন বলেও বিশ্বাস হিন্দুদের। মানস সরোবরে স্নান করলে সমস্ত পাপ ধুয়ে যায়, পাপের প্রায়শ্চিত্ত হয় বলেও মনে করা হয়। আবার বৌদ্ধদের কাছেও মানস সরোবরের ধর্মীয় গুরুত্ব রয়েছে। তাই ওই অঞ্চলে তীর্থ করতে যান বহু মানুষই। দীর্ঘদিন সেই যাত্রা বন্ধ থাকলেও, মানুষের স্বার্থেই পুনরায় তা চালু করতে রাজি হল ভারত ও চিন।
শুধু তাই নয়, নৈতিক ভাবে সরাসরি বিমান পরিষেবা পুনরায় চালু করা নিয়েও ঐক্যমত্যে পৌঁছেছে ভারত ও চিন। করোনাকালে এবং পরবর্তীতে কূটনৈতিক টানাপোড়েনের জেরে গত পাঁচ বছর ধরে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান পরিষেবা বন্ধ ছিল। নতুন করে তা চালু হতে চলেছে আবার। প্রযুক্তিগত বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করতে শীঘ্রই বৈঠকে বসবেন দুই দেশের প্রতিনিধিরা। পাশাপাশি, জলচুক্তি নিয়েও বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের বৈঠক হতে চলেছে। এর আওতায় সীমান্তের নদ-নদী থেকে জলবণ্টন নিয় আলোচনা হবে দুই দেশের মধ্যে। অর্থনীতি এবং বাণিজ্যনীতি নিয়েও দুই দেশের মধ্যে কথা হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের বিদেশমন্ত্রক।