নয়াদিল্লি : নজরে ছিল প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর উত্তেজনার আবহ কমানো। সেই লক্ষ্যে চুক্তিও করেছিল দুই দেশ। সেই টহল চুক্তি হওয়ার কয়েক দিনের মাথায় মুখোমুখি অবস্থান থেকে বাহিনী সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করল ভারত ও চিন। পূর্ব লাদাখের দেমচক ও দেপসাং পয়েন্ট থেকে নিজ নিজ বাহিনী সরিয়ে নিল উভয় দেশ। সেনা সূত্রে এমন খবর প্রকাশিত হয়েছে একাধিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, উভয় দেশ ২০২০ সালের এপ্রিল মাসের আগে যে যে জায়গায় নিজেদের বাহিনী ছিল সেই অবস্থানে তা সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে। উভয় দিকে যে অস্থায়ী পোস্ট, শেড, তাঁবু এবং অন্যান্য কাঠামো তৈরি করা হয়েছিল তা ভেঙে ফেলা হয়েছে। আগামী কয়েকদিনও উভয় দেশই খতিয়ে দেখবে বাহিনী সরিয়ে নেওয়ার যে সমঝোতা হয়েছে তা ঠিকঠাক পালন করা হচ্ছে কি না। সূত্রের খবর, উভয় দেশের গ্রাউন্ড কম্যান্ডার স্তরে পারস্পরিক আলোচনা চলবে। দীপাবলি উপলক্ষ্যে উভয় দেশের মধ্যে মিষ্টি বিতরণও হতে পারে।
গালওয়ান উপত্যকায় ভারত-চিন সেনা সংঘর্ষের মধ্যে দিয়ে উভয় দেশের সম্পর্কের অবনতি হয়। তারপর থেকে একাধিক সময়ে উভয় দেশের বিভিন্ন সীমান্তে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। চার বছরের বেশি সময় ধরে চলেছে সেই টানাপোড়েন। এরপর গত ২০ অক্টোবর পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর উভয় দেশের মধ্যে টহলদারি সংক্রান্ত এক চুক্তি হওয়ার কথা ঘোষণা করে ভারত। এই ঘোষণার পর রাশিয়ায় আয়োজিত BRICS সম্মেলনের সাইডলাইডে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। ২৪ অক্টোবর থেকে উভয় দেশ বাহিনী সরিয়ে নেওয়া শুরু করে। খবর অনুযায়ী, ১০-১২টি অস্থায়ী কাঠামো ও তাঁবু ভেঙে ফেলা হয়েছে।
প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় নিয়ে অশান্তি বাড়তে বাড়তে ২০২০ সালের জুন মাসে গালওয়ান উপত্যকায় ভারতীয় সেনার সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে চিনা বাহিনীর। গোলাগুলি না চললেও, সংঘর্ষ চলাকালীন চিনা সেনা বিশেষ ভাবে তৈরি অস্ত্র ব্যবহার করে বলে জানা যায়। ওই সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সৈনিকের মৃত্যু হয়। পরে তাদের পাঁচ সৈনিকের মৃত্যুর কথা স্বীকার করে চিনও। গালওয়ান সংঘর্ষের জেরেই ভারত-চিনের বোঝাপড়া তলানিতে এসে ঠেকে।
লাদাখ থেকে অরুণাচল প্রদেশ,লাগাতার চিনা আগ্রাসনের খবর সামনে আসে সাম্প্রতিককালে। শুধু রাস্তা বা সেতু তৈরিই নয়, ভারতীয় ভূখণ্ডের উপর আস্ত গ্রাম গড়ে তোলার ছবিও সামনে এসেছে। সীমান্তে চিনা আগ্রাসন নিয়ে সম্প্রতি মুখ খোলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় ‘অস্বাভাবিক’ হারে সেনা মোতায়েন রয়েছে বলে জানান তিনি। Indian Chamber of Commerce আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন জয়শঙ্কর। সেখানেই চিনা আগ্রাসন নিয়ে মুখ খোলেন তিনি। জানান, গালওয়ান সংঘর্ষের পর সীমান্তে অতিরিক্ত সেনমা মোতায়েন করে জবাব দেয় ভারত। দেশের নিরাপত্তার সঙ্গে আপসের কোনও প্রশ্ন ওঠে না। তাই ‘অস্বাভাবিক’ হলেও, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় প্রচুর সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।