নয়াদিল্লি: গালওয়ান সংঘর্ষের প্রায় চার বছর পর লাদাখ সীমান্তে নজরদারি চালানো নিয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছল ভারত ও চিন। সেখানে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর এলাকায় নজরদারি চালানো নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছনো গিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদেশমন্ত্রকের সচিব বিক্রম মিসরি। এর ফেল সীমান্ত সংঘাত নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা খানিকটা প্রশমিত হবে বলে আশাবাদী দিল্লি। পাশাপাশি, অরুণাচল প্রদেশ নিয়েও দু'পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে বলে খবর। (India-China Conflict)


দেপসাং সমতল এলাকা এবং দেমচকে নজরদারি চালানো নিয়ে ঐক্যমত্যে এসে পৌঁছেছে ভারত এবং চিন। দুই দেশের সেনাই সেখানে টহল দিতে পারবে। গালওয়ান উপত্যকা এবং প্যাংগং হ্রদ অঞ্চল থেকে দু'বছর আগেই সেনা সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দুই দেশ।  বাফার জোন তৈরি করা হয়েছিল। সেখানকার পরিস্থিতি বদলাবে না। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় মোতায়েনসেনার সংখ্যা কমবে। শীত নামার আগে বিষয়টি নিয়ে মীমাংসায় পৌঁছনো লক্ষ্য ছিল দুই দেশেরই। (India-China Border Conflict)


লাদাখের উত্তরে অবস্থিত দেপসাং,দক্ষিণে দেমচক। দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে যে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর যে পয়েন্ট থেকে আগে নজরদারি চলত, আগামী দিনেও তা বহাল থাকবে। অর্থাৎ দেপসাংয়ে প্যাট্রোলিং পয়েন্ট ১০ থেকে ১৩ পর্যন্ত টহল দিতে পারবে ভারতীয় সেনা। দেমচকের শার্দিং নুল্লাতেও টহল দেওয়া যাবে। ২০২০-র আগে মাসে দু'বার প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর টহল চলত।


দুই দেশের এই সমঝোতায় আশা দেখছে কূটনৈতিক মহল। বিশেষজ্ঞদের মতে,


১) দুই দেশেই সেনার সংখ্যা কমাবে, যাতে ফের সংঘর্ষ না বাধে। সাধারণত ১৩ থেকে ১৮ বাহিনী মোতায়েন থাকে, তবে এখন থেকে ১৪ থেকে ১৫ বাহিনী মোতায়েন থাকবে। যদি গন্ডগোল, ঝামেলা সম্পর্কে পরস্পরকে ওয়াকিবহাল রাখবে দুই পক্ষই।


২) সেনার সংখ্যা কমিয়ে পরস্পরের বিশ্বাস অর্জনের চেষ্টা হবে,  যাতে ভবিষ্যতেও আলোচনার পথ সুগম হয়। দিল্লি সূত্রে খবর, সীমান্ত নিয়ে মাসে অন্তত একবার দুই পক্ষ বৈঠকে হবে। 


৩) দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নতিসাধনের চেষ্টা।  আগামী দিনে আন্তর্জাতিক স্তরে আলাপ-আলোচনা হতে পারে। 


৪) এই সমঝোতার ফলে সীমান্তের পরিকাঠামো উন্নয়নে সময় পাবে ভারত। এখনই কোনও বিপদ নেমে আসার সম্ভাবনা কম। আবার রাশিয়া বনাম ইউক্রেন এবং পশ্চিম এশিয়া যখন যুদ্ধে তপ্ত, সেই সময় এই সমঝোতা আন্তর্জাতিক মহলের জন্যও আশাব্যাঞ্জক।


পূর্ব লাদাখে এমন সাতটি জায়গা রয়েছে, যা নিয়ে ২০২০ সাল থেকে ভারত এবং চিনের মধ্যে সমস্যা চলে আসছে। গালওয়ানের প্যাট্রোলিং পয়েন্ট ১৪, হট স্প্রিংয়ের প্যাট্রোলিং পয়েন্ট ১৫, গোগরার প্যাট্রোলিং পয়েন্ট ১৭-এ, প্যাংগং হ্রদের উত্তর এবং দক্ষিণ তীর, দেপসাং সমতল এবং শার্দিং নুল্লা। এর মধ্যে প্রথম ছয়টি প্যাট্রোলিং পয়েন্টে ভারতের ঢোকা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। 


এর মধ্যে দেপসাংয়ে টহল দেওয়া ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারাকোরাম পাসের ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত দেপসাং পার্বত্য এলাকার মধ্যে একমাত্র সমতল ভূমি। সেখান থেকে হামলা চালাতে পারে যে কোনও দেশ, একেবারে চুসুলের মতোই। তবে পুরোপুরি উদ্বেগ কাটছে না বলে মত কূটনীতিকদের।