অরুণাচলের তাওয়াং জেলা দিয়ে বয়ে চলেছে সামডোরং চু নদী। নামকা চু ও নিয়ামজাং চুর সঙ্গম থেকে উত্তর পূর্বে বইছে এই নদী। চিনা সেনা ১৯৮৬-তে লাংরো লা পাস এলাকায় এই নদীর তীরের ২০২ একর ঘাসজমি দখল করার চেষ্টা করে। সে সময় ভারত-চিনের সেনা পরস্পরের মুখোমুখি মোতায়েন ছিল দীর্ঘ ৮ মাস ধরে। লাদাখ সংঘর্ষের আগে সেই শেষবার চিনের বিরুদ্ধে এক জায়গায় মোতায়েন হন ২০০ ভারতীয় সেনা।
সামডোরং চু বিতর্কের শুরু ১৯৮০-তে। দেশের প্রধানমন্ত্রী তখন ইন্দিরা গাঁধী। চিনের হাত থেকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই উপত্যকা বাঁচানোর চেষ্টায় ১৯৮২-৮২ সালে ইন্দিরা তৎকালীন জেনারেল কেভি কৃষ্ণ রাওয়ের পরিকল্পনায় মঞ্জুরি দেন। কৃষ্ণ রাও বলেছিলেন, ভারত-চিন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় সর্বাধিক সেনা মোতায়েন করতে হবে। এরপর ১৯৮৪-র গ্রীষ্মে সামডোরং চু-তে অবজার্ভেশন পোস্ট তৈরি করে ভারত। গ্রীষ্মে সেখানে সেনা থাকত, শীতে ফাঁকা হয়ে যেত। এভাবে ২ বছর কাটার পর ১৯৮৬-র জুনে ভারতীয় টহলদারি দল দেখে, চিনা সেনা ওই এলাকায় স্থায়ী পোস্ট বানিয়ে ফেলেছে, তৈরি করেছে হেলিপ্যাড। এরপর ভারত সেখানে বরাবরের জন্য ২০০ সেনা মোতায়েন করে। চিনকে প্রস্তাব দেয়, যদি তারা শীতের মধ্যে ওই এলাকা থেকে সেনা সরিয়ে নেয়, তবে ভারত তা পুনর্দখল করবে না। কিন্তু চিন সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এরপর ৮ মাস ধরে ওই এলাকায় মুখোমুখি ছিল ভারত ও চিন সেনা। কোনও সংঘর্ষ না হলেও ভারতীয় সেনার আয়তন দেখে চিন এলাকা ছেড়ে হঠে যায়।
এখন পূর্ব লাদাখে ভারত-চিন অশান্তির জেরে অরুণাচলেও ভারতীয় সেনার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। চিন সীমান্তের কৌশলগত এলাকাগুলিতে সবরকম প্রস্তুতি রাখছে ভারত। সামডোরং চু-র যে ২০২ একর জমি নিয়ে বিতর্ক ছিল, সেটিতে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত পরিকাঠামো নির্মাণে হাত দিয়েছে দিল্লি। ১২ তারিখ প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ নেচিফু টানেল নামে তাওয়াংমুখী একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। এই টানেল তৈরি হয়ে গেলে চিন সীমান্তে পৌঁছে যাওয়া সেনার পক্ষে সহজ হবে। ওই এলাকায় স্থানীয় মানুষ গবাদি পশু পালন করেন। কিন্তু ২০১৩-র পুনর্বাসন আইন অনুযায়ী স্থানীয় পঞ্চায়েতের অনুমতি ছাড়াই প্রতিরক্ষা, রেলওয়ে ও যোগাযোগ সংক্রান্ত কারণে যে কোও জমি দখল করতে পারে কেন্দ্র। জানা গিয়েছে, ওই জমি দখলের জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রক গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের আওতায় থাকা ভূমি সম্পদ দফতরকে চিঠি লিখেছে।