নয়াদিল্লি: পাশাপাশি অবস্থান হওয়া সত্ত্বেও, যত সময় যাচ্ছে ততই দূরত্ব বাড়ছে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে। এ বার সিন্ধু জলচুক্তি (Indus Water Treaty) ঘিরে নতুন করে শুরু হল টানাপোড়েন। চুক্তি নিয়ে  একরোখা আচরণের অভিযোগে পাকিস্তানকে সরাসরি নোটিস ধরাল ভারত।  তাতে বলা হয়েছে, গত ৬২ বছর ধরে খাতায় কলমে তো বটেই, নৈতিক অবস্থান থেকেও সিন্ধু জলচুক্তির শর্তাবলী মেনে চলেছে ভারত। কিন্তু পাকিস্তান যে আচরণ করছে, তাতে নোটিস ধরানো ছাড়া উপায় ছিল না (India Pakistan Conflict)।


চুক্তি নিয়ে একরোখা আচরণের অভিযোগে পাকিস্তানকে সরাসরি নোটিস ধরাল ভারত


প্রায় ন’বছর টানাপোড়েনের পর ১৯৬০ সালে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু জলচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সাক্ষী হিসেবে তাতে সই করে বিশ্ব ব্যাঙ্কও। সিন্ধু নদ এবং সংলগ্ন বিভিন্ন নদ-নদীর জলের ব্যবহার নিয়ে তাতে পারস্পরিক সহযোগিতা, তথ্য আদান-প্রদানে সম্মত হয় দুই দেশ। চুক্তিতে বিপাশা, ইরাবতী এবং শতদ্রু, পূর্বের এই তিন নদীর উপর ভারতের নিয়ন্ত্রণে কথা বলা হয়। পশ্চিমের সিন্ধু, চন্দ্রভাগা এবং ঝিলমের উপর পাক নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয় চুক্তিতে। তবে চাষের কাজে পশ্চিমের নদীগুলি থেকে সীমিত পরিমাণ জল ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। জল খরচ না করে, নদীর গতিপথ রুদ্ধ না করে বিদ্যুৎ উৎপাদন, মৎস্যচাষের ক্ষেত্রে যদিও কোনও সীমা নেই, দুই দেশের ক্ষেত্রেই যা প্রযোজ্য।


জম্মু ও কাশ্মীরে ঝিলম নদীর উপর কিষেণগঙ্গা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং চন্দ্রভাগার উপর  র‍্যাটল জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়েই ঝামেলা বাধে।  প্রযুক্তিগত কারণ দেখিয়ে ওই প্রকল্পে আপত্তি জানায় পাকিস্তান। তাদের দাবি ছিল, ৩৩০ মেগাওয়াটের কিষেণগঙ্গা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং ৮৫০ মেগাওয়াটের র‍্যাটল জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে নদীর গতিপথ রুদ্ধ হবে। এতে পাকিস্তানে জলের জোগানেও ঘাটতি দেখা দেবে বলে জানায় তারা। যদিও ভারতের দাবি ছিল, দু’টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পই ‘রান অফ দ্য রিভার প্রকল্প‘, অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে নদীর জল মজুতের প্রশ্ন নেই।


 কিন্তু ভারতের দাবি মানতে নারাজ পাকিস্তান। কারণপাকিস্তানের সেচ ব্যবস্থার ৮০ শতাংশই সিন্ধু এবং তার উপনদীগুলির উপর নির্ভরশীল। কোনও ভাবে তা আটকে গেলে কৃষিকাজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেখা দিতে পারে জসলসঙ্কটও। চুক্তি অনুযায়ী, চন্দ্রভাগার জল বিনা বাধায় পাকিস্তানে ঢুকতে দেওয়ার কথা ভারতের। কিন্তু উরি হামলার পর সেই জল নিয়ে হুঁশিয়ারি শোনা গিয়েছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাষণে। জল এবং রক্ত একসঙ্গে প্রবাহিত হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি। তার পর থেকে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে আরও একরোখা অবস্থান নিতে দেখা গিয়েছে পাকিস্তানকে।


আরও পড়ুন: Share Market Crash: হিনডেনবার্গের রিসার্চ রিপোর্টের প্রভাব, ১৮ শতাংশ পতন এই গোষ্ঠীর স্টকে


সেই নিয়ে ঝামেলা চলছে দুই দেশের মধ্যে। প্রযুক্তিগত কারণ দেখিয়ে ওই প্রকল্পে আপত্তি জানায় পাকিস্তান। তার জন্য ২০১৫ সালে সিন্ধু জলচুক্তি নিয়ে নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ নিয়োগের দাবি তোলে তারা। এর পর, ২০১৬ সালে আবার নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ নিয়োগের দাবি থেকে সরে আসে পাকিস্তান। তার পরিবর্তে আইনি পথে, আদালতের মধ্যস্থতায় বিহিত চেয়ে সরব হয়। তাতে বেঁকে বসে ভারত।


ভারতের তরফে বলা হয়, পাকিস্তানের এমন একতরফা, একরোখা আচরণ সিন্ধু জলচুক্তি লঙ্ঘন করছে। কারণ সিন্ধু জলচুক্তির নবম ধারায় বিবাদ নিষ্পত্তির পদ্ধতির পরিষ্কার উল্লেখ রয়েছে। সেই নিরিখে নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞের কাছে ভারত বিষয়টি উত্থাপন করার জন্য আলাদা করে অনুরোধও জানিয়েছে।  


ভারতের দাবি, সমস্যার সমাধান অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু তার জন্য একই সঙ্গে, একই সময়ে, একসঙ্গে দুই পৃথক রাস্তা ধরা কাম্য নয়। এতে অসমঞ্জস্য তৈরি হবে। আইনি জটিলসতায় অসহনীয় পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হবে দুই দেশকে। ২০১৬ সালে এই নিয়ে বিশ্ব ব্যাঙ্কও ভারতের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেও জানানো হয় দিল্লির তরফে। দিল্লি জানায়, একসঙ্গে পৃথক পথ অনুসরণ না করে, পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছনোর পক্ষে বিশ্ব ব্য়াঙ্কও।


২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সিন্ধু জলচুক্তি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে পাঁচ বার বৈঠক


কিন্তু তার পরও, পাকিস্তান নিজের অবস্থানে অনড় থেকেছে। ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সিন্ধু জলচুক্তি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে পাঁচ বার বৈঠক হয়েছে। বিশ্বব্যাঙ্কও জানিয়েছে, এক সমস্যার সমাধান পৃথক উপায়ে হতে পারে না। তাই বিশেষজ্ঞ দিয়ে বিষয়টি পর্যালোচনা এবং আইনি প্রক্রিয়া স্থগিত করে দেওয়া হয়। তার পরও পাকিস্তান অবস্থান পাল্টায়নি। তাতেই চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগে তাদের নোটিস ধরানো হয়েছে বলে দাবি ভারতের।