নয়াদিল্লি: পূর্ব লাদাখে চিনের সঙ্গে ও জম্মু-কাশ্মীরে পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত সংঘাত এবং করোনা মহামারী আবহের জেরে আগামী মাসে রাশিয়ায় শুরু হতে চলা বহুদেশীয় সামরিক মহড়ায় অংশগ্রহণ করবে না বলে জানিয়ে দিল ভারত। ইতিমধ্যেই, রুশ কর্তৃপক্ষকে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রক।


আগামী ১৫-২৬ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ রাশিয়ার অস্ত্রাখানে হতে চলা ওই যুদ্ধ মহড়ার নাম রাখা হয়েছে "কাভকাজ ২০২০"। রাশিয়া ও ভারত ছাড়াও ওই যুদ্ধ মহড়ায় অংশ নিচ্ছে চিনা ও পাকিস্তানি সেনা।


প্রতিরক্ষামন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার সাউথ ব্লকে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক বসেছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) জেনারেল বিপিন রাওয়াত। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, চিন ও পাক সেনা যেখানে উপস্থিত রয়েছে, এমন কোনও সামরিক মহড়ায় ভারতের অংশ নেওয়া অনুচিত।


পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সীমান্তে সমস্যা জটিল আকার ধারণ করেছে। ভারত ও চিনের সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকেছে। বিশেষ করে গত ১৫ জুন, গালওয়ান উপত্যকায় চিনা সেনার বর্বরোচিত হামলায় ২০ জন ভারতীয় জওয়ান প্রাণ হারিয়েছেন। ভারতের জবাবে হতাহত হয় প্রায় ৪০ চিনা সেনাকর্মী। বৈঠকে একটা বিষয়ে সবপক্ষ সহমহ হন যে, এই পরিস্থিতিতে চিনা সেনার সঙ্গে যৌথ মহড়া দেশবাসীর কাছে ভুল বার্তা পৌঁছে দেবে।


একইভাবে, কাশ্মীর সীমান্তে পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রমাগত সংঘাতের আবহ রয়েছে। পাক সেনা নিয়মিতভাবে সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘন করে সীমান্তে গোলাগুলি বর্ষণ করে চলেছে। প্রাণ হারাচ্ছেন ভারতীয় জওয়ান থেকে শুরু করে নিরীহ গ্রামবাসী। এর পাশাপাশি, ভারতে নাশকতামূলক কার্যকলাপে ক্রমাগত মদত দিয়ে চলেছে পাক শীর্ষ প্রশাসন ও সেদেশের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। এই পরিস্থিতি তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ যুদ্ধ মহড়ায় অংশ নেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই।


প্রতিরক্ষামন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে, রাশিয়া ও ভারত হল দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগত অংশীদার। রাশিয়ার আমন্ত্রণে অতীতে বহু আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে ভারত। কিন্তু, বর্তমান করোনা পরিস্থিতির জেরে মহড়ায় যে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তা মাথায় রেখে ভারত সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবছর "কাভকাজ ২০২০"-তে অংশগ্রহণ করবে না।


এদিকে, আগামী ৪-৬ সেপ্টেম্বর রাশিয়ায় সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির প্রতিরক্ষামন্ত্রকের বৈঠকে অংশ নিতে মস্কো যাচ্ছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। সদস্য দেশ হিসেবে ওই বৈঠকে থাকবেন চিনা প্রতিনিধিও। কিন্তু, সূত্রের খবর, সেখানেও চিনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে রাজনাথের কথা হওয়ার সম্ভাবনা কার্যত নেই। এর আগে, গত জুন মাসে মস্কোর রেড স্কোয়ারে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৭৫ তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ভিক্টরি ডে প্যারেডে অংশ নিয়েছিল ভারত ও চিনা সেনা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। যদিও, তাঁদের মুখোমুখি সাক্ষাত হয়নি।


প্রসঙ্গত, এসসিও গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির মধ্যেই এই সামরিক মহড়া হচ্ছে। ভারত ছাড়াও পাকিস্তান, চিন ও রাশিয়া এই গোষ্ঠীর সদস্য। এছাড়া, এই মহড়ায় অংশ নেবে ইরান, তুরস্ক সহ মোট ১৮টি দেশ। আগে স্থির ছিল, ভারতীয় স্থলসেনা, বায়ুসেনা ও নৌসেনা থেকে মোট ২০০ জন জওয়ান-অফিসার ওই মহড়ায় অংশ নেবেন। এর মধ্যে স্থলসেনার ১৬০ জন ও নৌসেনা ও বায়ুসেনা মিলিয়ে ৪০ জন অংশ নেবেন।