নয়া দিল্লি : যুগান্তকারী নির্দেশ দেশের শীর্ষ আদালতের। বিবাহিত (Married) হোক বা অবিবাহিত (Un-Married), সব মহিলারই আইনত ও নিরাপদে গর্ভপাতের (Abortion) অধিকার আছে। এব্যাপারে কোনও বৈষম্য করাকে অসাংবিধানিক (Un-Constitutional) বলে ধরা হবে বলে আজ জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট। এর পাশাপাশি মেডিক্যাল টার্মিনেশন অফ প্রেগন্যান্সি অ্যাক্টের আওয়ায় ধর্ষণের যে সংজ্ঞা রয়েছে তার অন্তর্ভুক্ত হবে বৈবাহিক ধর্ষণের বিষয়টিও।


কী বলছে শীর্ষ আদালত ?


সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, একজন মহিলা বিবাহিত না বিবাহিত নন, তা কখনো তাঁর গর্ভপাতের অধিকারের ক্ষেত্রে আলোচ্য বিষয় হতে পারে না। এমনকী অবিবিহাতি মহিলাও ২৪ সপ্তাহের মধ্যে এই অধিকারের যোগ্য। শুধু এখানেই থামেনি শীর্ষ আদালত, এমনও বলেছে যে, কোনও অবিবাহিত মহিলাকে গর্ভপাতের অধিকার না দেওয়া মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের সমান। এর আগে গত ৭ অগাস্ট দেশের শীর্ষ আদালত বলেছিল, মেডিক্যাল টার্মিনেশন অফ প্রেগন্যান্সি অ্যাক্টে বিবাহিত ও অবিবাহিত মহিলাদের পার্থক্য করা হয়েছে। যার মাধ্যমে ২০ সপ্তাহ পর কোনও সিঙ্গল মহিলাকে গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া হয় না। যা তাঁর ব্যক্তিগত অধিকার লঙ্ঘনের সমান। এছাড়া তখন আদালতের তরফে এও বলা হয়, মেডিক্যাল টার্মিনেশন অফ প্রেগন্যান্সি অ্যাক্ট এবং এই সম্পর্কিত আইনগুলি তারা খতিয়ে দেখবে যাতে অবিবাহিত মহিলারা ২৪ সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভপাতের অনুমতি পান। তা অবশ্যই চিকিৎসকের উপদেশমতো। 


প্রসঙ্গত, বিবাহিত মহিলাদের ক্ষেত্রে গর্ভপাতের সর্বোচ্চ সময়সীমা ২৪ সপ্তাহ পর্যন্ত। এছাড়া ধর্ষণের শিকার, বিশেষভাবে সক্ষম বা নাবালিকা, পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে সহবাসের পর কোনও অবিবাহিত মহিলা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে-এইসব বিশেষ ক্ষেত্রে ২০ সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভপাত করা যেত। এই পরিস্থিতিতে গত অগাস্ট মাসে অ্যাপেক্স কোর্টের তরফে প্রশ্ন তোলা হয়, মেডিক্যাল টার্মিনেশন অফ প্রেগন্যান্সি অ্যাক্ট, ১৯৭১ অনুযায়ী যদি বিবাহিত মহিলাদের ক্ষেত্রে ২৪ সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভপাতের সময় দেওয়া যেতে পারে, তাহলে কেন একই নিয়ম অবিবাহিতদের ক্ষেত্রে মানা হয় না ? এরপর আজ এই নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের।


উল্লেখ্য, ২৫ বছরের এক যুবতীর দায়ের করা মামলার ভিত্তিতে এই যুগান্তকারী রায় ঘোষণা সুপ্রিম কোর্টের। ওই মহিলা দিল্লি হাইকোর্টের একটি নির্দেশিকার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন। ওই মহিলার বক্তব্য ছিল, তিনি অবিবাহিত হওয়ায় গর্ভপাত করতে দেওয়া হয়নি। সেই সময় তিনি ২৩ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। অভিযোগে তিনি জানান, তাঁর প্রেমিক বিয়ে করতে অস্বীকার করেছেন। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি বড় এবং বাবা-মা উভয়েই কৃষক। তাই, একজন সন্তানকে লালন-পালনের ক্ষমতা নেই তাঁর। এই পরিস্থিতিতে ২১ জুলাই তাঁকে গর্ভপাতের অনুমতি দেয় আদালত।


ওই মহিলার যাতে কোনও ক্ষতি না হয় তার জন্য একটি বোর্ড গঠন করে দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি আদালত কেন্দ্রকে নোটিস দেয়। তাতে গর্ভপাতের ক্ষেত্রে বিবাহিত না বিবাহিত নন, সেই সংক্রান্ত প্রশ্ন তোলা হয়। ২৩ অগাস্ট এই মামলার রায় রিজার্ভ রাখা হয়েছিল।


আরও পড়ুন ; বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধের আওতায় আনা যায় কি! কেন্দ্রের মতামত জানতে চাইল সুপ্রিম কোর্ট