নয়াদিল্লি: গুরু নানকের জন্মদিনে (Guru Nanak Birthday) তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi)। এই ঘোষণায় তোলপাড় তেল। টুইট (Tweet) ঝড় অব্যাহত। তবে এরমধ্যেই কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে 'ভোটের ভয়' (Fear Of Vote) বলেই আখ্যা দিয়েছে কংগ্রেস।
এ দিন ঘোষণার পরেই চিদাম্বরম (P Chidambaram) ট্যুইটে লিখেছেন, এই সিদ্ধান্ত নীতি পরিবর্তন বা হৃদয় থেকে নেওয়া নয়। আসন্ন ভোটে আসনের ভয় থেকেই এই ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীকে (PM Narendra Modi) কটাক্ষ করে চিদাম্বরম (P. Chidambaram) আরও লিখেছেন গণতান্ত্রিক প্রতিবাদ গড়ে তুলে যা অর্জন করা যায় না, আসন্ন নির্বাচনের ভয়ে তা অর্জন হয়। ট্যুইটে লিখেছেন চিদাম্বরম। এ দিন ঘোষণা মাত্রই ট্যুইটে চিদাম্বরম লেখেন, কৃষকদের দীর্ঘ আন্দোলন এই আইন প্রত্যাহারের কারণ নয়। বরং আসন্ন নির্বাচনের কারণে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
কংগ্রেস নেতা তথা পঞ্জাবের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নভজ্যোত সিং সিধু (Navjot Singh Sidhu) লিখেছেন, সরকার হয়ত চারপাশের রাজনীতি বিবেচনা করেছে, 'কালো আইন বাতিল করা একটি সঠিক পদক্ষেপ। কিষাণ মোর্চার আন্দোলন ঐতিহাসিক সাফল্য পেয়েছে, আত্মত্যাগের লাভ মিলেছে। পঞ্জাবে চাষাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করাই পঞ্জাব সরকারের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। প্রশংসা।'
দেশজুড়ে প্রতিবাদের মুখে পড়ে শেষপর্যন্ত ৩টি কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার (Central Govenment)। গুরু নানকের (Guru Nanak) জন্মদিনে আজ জাতির উদ্দেশে ভাষণে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে এই ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী (Narendra Modi)। এই ঘোষণা করে মোদির আবেদন, কৃষকরা এবার খেতে ফিরে আসুন।
২০২০-র সেপ্টেম্বরে বিতর্কিত কৃষি আইন (Farm Laws Repeal) সংসদের উভয় কক্ষে পাস করিয়ে নেয় কেন্দ্রীয় সরকার (Central Government)। তারপরই রাস্তায় নামেন কৃষকরা। এই ইস্যুতে প্রায় প্রতিদিনই কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ শুরু করেন রাহুল গান্ধী। তিনি গত ১৪ জানুয়ারি জানিয়েছিলেন, এই আইন আগামীদিনে প্রত্যাহার করতে বাধ্য হবে কেন্দ্র। ১৯ নভেম্বর ঠিক তাই হল। দেশের অন্যান্য বিরোধী দলও সরব হয় কৃষি আইনের বিরুদ্ধে।
হরিয়ানা, পাঞ্জাব ও দেশের অন্যান্য রাজ্যের কৃষকদের (Farm Laws Repeal) মিছিল এসে হাজির হয় রাজধানীর দরজায়। আগামী বছরের শুরুতেই রয়েছে পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে, বছরের শেষে এসে কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা করল কেন্দ্রীয় সরকার। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, সংসদের পরবর্তী অধিবেশনে এই তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। এ বছরের শুরুতেই অবশ্য সুপ্রিম কোর্ট ওই তিনটি কৃষি আইন কার্যকরের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেছে।
মোদি সরকার যে তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহারের (Farm Laws Repeal) ঘোষণা করেছে, তার মধ্যে প্রথমটি হল, ফারমার্স প্রোডিউস ট্রেড অ্যান্ড কমার্স (প্রোমোশন অ্যান্ড ফেসিলিটেশন) অ্যাক্ট, ২০২০। যেখানে বলা হয়েছে, বড় ব্যবসায়ী বা বেসরকারি সংস্থা চাইলে সরাসরি চাষির কাছ থেকে কৃষিজ পণ্য কিনতে পারবে। সরকারের যুক্তি, এর ফলে কৃষকরা বাজারের সর্বোচ্চ মূল্য পাবেন। কিন্তু কৃষকদের দাবি, এভাবে বাজারের নিয়ন্ত্রণ ব্যবসায়িক সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।
দ্বিতীয় আইনটি হল ফারমার্স (এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড প্রটেকশন) এগ্রিমেন্ট অব প্রাইস অ্যাসিওরান্স অ্যান্ড ফার্ম সার্ভিসেস অ্যাক্ট, ২০২০। এই বিল অনুযায়ী কোনও বেসরকারি বাণিজ্য সংস্থা বা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সংস্থা চাইলে কৃষকদের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে সেই জমিতে কৃষিজ পণ্য ফলাতে পারবে। সরকারের যুক্তি, এতে দেশীয় কৃষিজ পণ্যের চাহিদা বাড়বে। কৃষি পণ্য রফতানির পথ প্রশস্ত হবে। কিন্তু কৃষকদের দাবি, এর ফলে তাঁদের জমি আর তাঁদের থাকবে না।
তৃতীয় আইনটি হল এসেনশিয়াল কমোডিটিজ (সংশোধিত) বা অত্যাবশ্যক পণ্য আইন। এই বিল অনুযায়ী চাল, ডাল, গম, ভোজ্য তেল, তৈলবীজ ইত্যাদি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সামগ্রী মজুতের ঊর্ধ্বসীমা বলে কিছু থাকবে না। সরকারের যুক্তি, এর ফলে ফড়েদের দাপট শেষ হবে। কৃষিক্ষেত্রে বেসরকারি এবং বিদেশি বিনিয়োগও আসবে।
কৃষকদের পাল্টা দাবি, এভাবেই অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা ঘুরপথে চলে যাবে বড় ব্যবসায়ীদের হাতে।