নয়াদিল্লি: দিনভর বিক্ষোভ, উত্তেজনার পর সেনাবাহিনীতে নিযুক্তির 'অগ্নিপথ' প্রকল্পে (Agnipath Military Recruitment Scheme) বয়সের ঊর্ধ্বসীমা বাড়াল কেন্দ্রীয় সরকার। আগে ওই প্রকল্পে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা ছিল ২৩ বছর। বৃহস্পতিবার তা বাড়িয়ে ২৩ বছর করল কেন্দ্র। গত দু'বছরে যেহেতু কোনও নিযোগ হয়নি, তাই বেশি সংখ্যক মানুষকে সুযোগ দিতেই এমন সিদ্ধান্ত বলে জানা গিয়েছে।
বৃহস্পতিবার পিআইবি-র তরফে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। সংস্থার ট্যুইটার হ্যান্ডলে লেখা হয়, 'অগ্নিপথ প্রকল্পে আবেদনের জন্য ন্যূনতম বয়স সাড়ে ১৭ এবং সর্বোচ্চ বয়স ২১ বছর রাখা হয়েছিল। কিন্তু গত দু'বছরে কোনও নিয়োগ হয়নি যেহেতু, তাই ২০২২-এর নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্য এককাকলীন ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। বয়সের ঊর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে ২৩ করা হল।'
'অগ্নিপথ' প্রকল্প ঘিরে দফায় দফায় বিক্ষোভ
এই 'অগ্নিপথ' প্রকল্প ঘিরে মঙ্গলবার থেকে দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে দেশের একাধিক রাজ্যে (Protest Against Agnipath Scheme) । বিহার, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, পঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, ঝাড়খণ্ড, দিল্লির মতো রাজ্যে প্রতিবাদ, আন্দোলন হিংসাত্মক আকারও ধারণ করে। বয়সের ঊর্ধ্বসীমা ছাড়াও, সেনাবাহিনীর চাকরি চুক্তিভিত্তিক করে দেওয়ার কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান পড়ুয়া এবং চাকরিপ্রার্থীরা। কোথাও ভাঙচুর চালানো হয় ট্রেনে, কোথাও টায়ার জ্বালিয়ে চলে বিক্ষোভ, কোথাও আবার পুলিশকে লক্ষ্য করে চলে ইটবৃষ্টি, ট্রেন অবরোধ। পাল্টা কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে বিক্ষোভকারীদের হটানোর চেষ্টা করে পুলিশ। লাঠিচার্জও করা হয় ব্যাপক।
সেনাবাহিনীতে নিয়োগের জন্য সম্প্রতি 'অগ্নিপথ' প্রকল্পের ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সরকার (Agnipath Scheme) । তার আওতায় সেনা, নৌসেনা এবং বায়ুসেনায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কথা জানানো হয়। বলা হয়, 'অগ্নিপথ' প্রকল্পের আওতায় চার বছরের জন্য ‘অগ্নিবীর’ নিয়োগ করা হবে। প্রথম বছর এই ‘অগ্নিবীর’রা পাবেন মাসে ৩০ হাজার টাকা। চতুর্থ বছরে সেই টাকার অঙ্ক দাঁড়াবে ৪০ হাজারে। আয়ের ৩০ শতাংশ তাঁরা জমাতে পারবেন। সম পরিমাণ টাকা দেবে সরকারও।
নয়া প্রকল্পে চার বছরের মেয়াদ শেষে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের ২৫ শতাংশকে স্থায়ী কর্মী হিসেবে সেনাবাহিনীতে নেওয়া হবে বলে জানানো হয়। বাকি ৭৫ শতাংশ আর সেনাবাহিনীতে রাখা হবে না। সেই সময় তাঁদের দেওয়া হবে ১০-১১ লক্ষ টাকা ভাতা, যা হবে সম্পূর্ণ করমুক্ত। চার বছর পর স্কিল গেইন সার্টিফিকেট, ক্রেডিট ফর হায়ার এডুকেশন সার্টিফিকেট পাবেন প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা। তবে অবসরের পরে ওই ৭৫ শতাংশ ‘অগ্নিবীর’রা সেনাবাহিনীর অবসরকালীন কোনও সুবিধা পাবে না।
কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাস্তায় পড়ুয়ারা
কেন্দ্রের তরফে আরও জানানো হয় যে, মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে চুক্তিভিত্তিক ওই অগ্নিবীররা নিজেদের 'প্রাক্তন সেনাকর্মী’ বলে উল্লেখ করতে পারবেন না। পাবেন না পেনশন কিংবা গ্র্যাচুইটির সুবিধাও। তবে চার বছর কর্মরত অবস্থায় কোনও ‘অগ্নিবীর’এর মৃত্যু বা অঙ্গহানি হলে মিলবে আর্থিক সাহায্য। আগামী ৩ মাসের মধ্যেই দেশজুড়ে ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র।