নয়াদিল্লি: ঘোষণার পর থেকেই মাথাচাড়া দিয়েছে বিতর্ক। সেনাবাহিনীতে চুক্তিনির্ভর নিয়োগ ঘিরে এ বার পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দফায় দফায় বিক্ষোভ শুরু হয়েছে বিহার, উত্তরপ্রদেশ এবং হরিয়ানার মতো রাজ্যে। ভাঙচুর, পাথরবৃষ্টি, রেল অবরোধ, টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখা গিয়েছে জায়গায় জায়গায়। কেন্দ্রীয় সরকার যুব সমাজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছেলেখেলা করছে বলে অভিযোগ চাকরিপ্রার্থী তথা পড়ুয়াদের। সেনাবাহিনীতে নিয়োগে পূর্বের নীতি ফিরিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা। 


'অগ্নিপথ' প্রকল্প নিয়ে বিক্ষোভ একাধিক রাজ্যে


বুধবারও কেন্দ্রের 'অগ্নিপথ' প্রকল্প নিয়ে এখদফা বিক্ষোভ হয় বিহারে। বৃহস্পতিবার সকালে নতুন করে বিক্ষোভ মাথাচাড়া দেয় একাধিক জায়গায়। সেখানে ভাভুয়া রোড রেল স্টেশনে ঢুকে ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনের জানলার কাচ ভেঙে দেন বিক্ষোভকারীরা। নতুন নিয়োগ নীতির বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে যান। আরা স্টেশনে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে বিক্ষোভকারীদের। পুলিশকে লক্ষ্য করে এলোপাথাডি় ইটবৃষ্টি শুরু হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। স্টেশন মাস্টারের ঘর এবং সংলগ্ন চত্বর থেকে আসবাবপত্র রেললাইনে ছুড়ে ফেলতে দেখা যায় বিক্ষোভকারীদের। আগুও ধরিয়ে দেওয়া হয়। সংবাদমাধ্যমে সেই আগুন নেভাতে দেখাতে গিয়েছে রেল কর্মীদের। 



জেহানাবাদেও পুলিশকে লক্ষ্য করে ব্যাপক ইটবৃষ্টি হয়। তাতে বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মী তো বটেই, সাধারণ মানুষও আহত হয়েছেন। সেখানে রেললাইন অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। হটাতে গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ এবং বিক্ষোভকারীরা পরস্পরকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়েন সেখানে। নওয়াড়ায় রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান পড়ুয়ারা। নওয়াড়া স্টেশনে রেললাইনের উপর টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান। রেলের সম্পত্তি ব্যাপক ভাঙচুরও করা হয়। সেখানে মোদি বিরোধী স্লোগান ওঠে। সেনায় চাকরির জন্য দীর্ঘদিন ধরে প্রশিক্ষণ নেওয়া যুবকেরা রেললাইনের উপরই কসরত করে প্রতিবাদ জানান। তাঁদের প্রশ্ন, এত দিনের পরিশ্রম, এত কষ্ট, সব কি চার বছরের চাকরির জন্য? তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সরকার বিন্দুমাত্র ভাবিত নয় বলেও দাবি করেন বিক্ষোভকারীরা।


এ ছাড়াও, সহর্ষ স্টেশনে ভিড় করেন পড়ুয়ারা। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি করেন। ছাপরায় বিক্ষোভ হিংসাত্মক আকার ধারণ করে। লাঠিসোঁটা নিয়ে রাস্তায় নামেন বিক্ষোভকারীরা। রাজ্য পরিবহণ বিভাগের একাধিক বাসে ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ। উত্তরপ্রদেশের একাধিক জায়গাতেও বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। গতকাল মুজফ্ফরনগর, বক্সারে রাস্তায় নামেন পড়ুয়ারা। চার বছর পর কী করবেন, সরকারের কাছে জবাব চান। 


আরও পড়ুন: India Coronavirus Updates: বিরাট লাফ ! ৩৮ শতাংশ বেড়ে গেল দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা


সেনাবাহিনীতে নিয়োগের জন্য সম্প্রতি 'অগ্নিপথ' প্রকল্পের ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সরকার। তার আওতায় সেনা, নৌসেনা এবং বায়ুসেনায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কথা জানানো হয়। বলা হয়, 'অগ্নিপথ' প্রকল্পের আওতায় চার বছরের জন্য ‘অগ্নিবীর’ নিয়োগ করা হবে। প্রথম বছর এই ‘অগ্নিবীর’রা পাবেন মাসে ৩০ হাজার টাকা।  চতুর্থ বছরে সেই টাকার অঙ্ক দাঁড়াবে ৪০ হাজারে।  আয়ের ৩০ শতাংশ তাঁরা জমাতে পারবেন। সম পরিমাণ টাকা দেবে সরকারও। 



নয়া প্রকল্পে চার বছরের মেয়াদ শেষে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের ২৫ শতাংশকে স্থায়ী কর্মী হিসেবে সেনাবাহিনীতে নেওয়া হবে বলে জানানো হয়। বাকি ৭৫ শতাংশ আর সেনাবাহিনীতে রাখা হবে না। সেই সময় তাঁদের দেওয়া হবে ১০-১১ লক্ষ টাকা ভাতা, যা হবে সম্পূর্ণ করমুক্ত। চার বছর পর স্কিল গেইন সার্টিফিকেট, ক্রেডিট ফর হায়ার এডুকেশন সার্টিফিকেট পাবেন প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা। তবে অবসরের পরে ওই ৭৫ শতাংশ ‘অগ্নিবীর’রা সেনাবাহিনীর অবসরকালীন কোনও সুবিধা পাবে না। 


কেন্দ্রের তরফে আরও জানানো হয় যে, মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে চুক্তিভিত্তিক ওই অগ্নিবীররা নিজেদের 'প্রাক্তন সেনাকর্মী’ বলে উল্লেখ করতে পারবেন না। পাবেন না পেনশন কিংবা গ্র্যাচুইটির সুবিধাও। তবে চার বছর কর্মরত অবস্থায় কোনও ‘অগ্নিবীর’এর মৃত্যু বা অঙ্গহানি হলে মিলবে আর্থিক সাহায্য। আগামী ৩ মাসের মধ্যেই দেশজুড়ে ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র।


পুরনো নিয়োগ প্রক্রিয়া ফেরানোর দাবি 


করোনাকালে গত দুই বছর সেনাবাহিনীতে নিয়োগ বন্ধ। অথচ পদ লাগাতার খালি হচ্ছে। তাই সেনাবাহিনীর লোকবল অক্ষুণ্ণ রেখে, অনধুনিকীকরণ ঘটাতেই এমন পদক্ষেপ বলে জানানো হয়। কিন্তু কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, চার বছর পর ভবিষ্যৎ কী, তার পরিকল্পনা নেই সরকারের।