অনির্বাণ বিশ্বাস, কলকাতা: এবার থেকে সেনাবাহিনীতে জওয়ান নিয়োগ হবে ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পের মাধ্যমেই। আধুনিকীকরণের স্বার্থে এবং সেনাবাহিনীর লোকবলকে অক্ষুণ্ণ রাখতে এই প্রকল্পের গুরুত্ব অপরিসীম। এমনটাই সওয়াল একাধিক বিশেষজ্ঞের। আবার উল্টোদিকে উঠে আসছে ভিন্ন মতও। চার বছর চাকরির পর ভবিষ্যৎ কী? উঠছে সেই প্রশ্নও। মঙ্গলবার, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর স্থল, নৌ এবং বায়ুসেনায় নিয়োগের ক্ষেত্রে এই নতুন প্রকল্পের ঘোষণা করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।
বিশেষত্ব কোথায়?
- ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পের মাধম্যে যাঁদের নিয়োগ করা হবে, তাঁদের বয়স হবে সাড়ে ১৭ থেকে ২১ বছর।
- এই প্রকল্পে যাঁদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করা হবে, তাঁরা ‘অগ্নিবীর’ হিসেবে পরিচিতি পাবেন।
কীভাবে নিয়োগ:
- প্রতিবছর সেনাবাহিনীর বিভিন্ন রেজিমেন্টে কী ধরনের শূন্যপদ তৈরি হচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করছে কতজন করে প্রতিবছর নিয়োগ করা হবে।
- প্রথম বছর ৪০ হাজার নিয়োগ হবে।
- প্রথম বছর এই ‘অগ্নিবীর’রা পাবেন মাসে ৩০ হাজার টাকা।
- চতুর্থ বছরে সেই টাকার অঙ্ক দাঁড়াবে ৪০ হাজারে।
- আয়ের ৩০ শতাংশ তাঁরা জমাতে পারবেন।
- সম পরিমাণ টাকা দেবে সরকারও।
- ৪ বছরের মেয়াদ শেষে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের ২৫ শতাংশকে স্থায়ী কর্মী হিসেবে সেনাবাহিনীতে নেওয়া হবে।
- বাকি ৭৫ শতাংশ আর সেনাবাহিনীতে রাখা হবে না
তাঁদের কী হবে?
- যাঁদের বাহিনীতে রাখা হবে না তাঁদের দেওয়া হবে ১০-১১ লক্ষ টাকা ভাতা। যা হবে সম্পূর্ণ করমুক্ত।
- ৪ বছর পর স্কিল গেইন সার্টিফিকেট, ক্রেডিট ফর হায়ার এডুকেশন সার্টিফিকেট পাবেন প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা।
- কিন্তু, অবসরের পরে ওই ৭৫ শতাংশ ‘অগ্নিবীর’রা সেনাবাহিনীর অবসরকালীন কোনও সুবিধা পাবেন না।
- ‘প্রাক্তন সেনাকর্মী’ বলে উল্লেখ করা যাবে না।
- মিলবে না পেনশন কিংবা গ্র্যাচুইটির সুবিধাও।
- তবে কর্মরত অবস্থায় কোনও ‘অগ্নিবীর’এর মৃত্যু বা অঙ্গহানি হলে মিলবে আর্থিক সাহায্য।
চিফ অফ স্টাফ, ইস্টার্ন কমান্ড লেফটেন্যান্ট জেনারেল কেকে রেপসোয়াল বলেন, 'করোনার জন্য ২ বছর প্রক্রিয়া বন্ধ। শূন্যতা পূরণে অগ্নিপথ প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। ৭৫ শতাংশ বাদ যাচ্ছে ৪ বছর পর। কাজে জওয়ান হিসেবে যোগ দিতে গেলে অগ্নিপথই একমাত্র পথ হবে। এই ৪ বছর এদের অগ্নিবীর হিসেবেই পরিচিতি পাবেন। ২৫শতাংশ পরে জওয়ান হিসেবে পরিচিতি। যুদ্ধের পরিস্থিতিতে ৭৫ শতাংশ প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের দেশের কাজে ডেকে পাঠানো হতে পারে।'
কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা:
সরকারের এই নতুন প্রকল্প নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্তাদের মধ্যেই মিশ্র মত উঠে আসছে। এক পক্ষ বলছে, অপর পক্ষ বলছে, ৪ বছর পর কী হবে? অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল পৃথ্বীরঞ্জন দাস বলেন, 'সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছে। সেনাবাহিনীর লোকবলকে অক্ষুন্ন রেখে আধুনিকীকরণ।' অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার প্রবীর সান্যাল বলেন, '৪ বছর পর ভবিষ্যৎ কি? পরিকল্পনা নেই। ২৫ শতাংশের পরের অংশ চলে যাবে বিদেশি প্রাইভেট এজেন্সিতে। বিভিন্ন দেশে গিয়ে লড়াই করবে সিরিয়া, ইউক্রেন। বাকিরা ক্রাইম করবে। টোটালস্কিম নিয়ে আরও ভাবা উচিত।' সূত্রের খবর, আগামী ৩ মাসের মধ্যেই দেশজুড়ে ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
আরও পড়ুন: স্নানযাত্রার পর এখন জগন্নাথের কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, ১৫ দিন থাকবেন নিভৃতবাসে