পাটনা: সেনায় নিয়োগে নতুন প্রকল্প ঘিরে পুড়ছে রাজ্য। সেই নিয়ে অসন্তোষে গলা মেলাল নীতীশ কুমারের (Nitish Kumar) দল। বিহারে (Bihar Protests) বিজেপি-র সঙ্গে জোট সরকারে রয়েছেন নীতীশ। কিন্তু বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সরকারের 'অগ্নিপথ' প্রকল্পে ((Agnipath Scheme) শুধু যুবসমাজের ভবিষ্যৎই অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে না, দেশের নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মত তাদের। তাই এই নয়া প্রকল্প পুনর্বিুবেচনা করে দেখার আর্জি জানিয়েছেন তারা। 


বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে বিহার


একের পর এক ট্রেন যখন দাউদাউ করে জ্বলছে, বিক্ষোভের আগুনে যখন জ্বলছে গোটা রাজ্য (Agnipath Scheme Protests), সেই সময় ট্যুইটারে মুখ খোলেন সংযুক্ত জনতা দল (JDU)-এর সভাপতি রাজীবনরঞ্জন সিংহ। তিনি লেখেন, 'অগ্নিপথ প্রকল্প ঘিরে যুবসমাজ এবং পড়ুয়াদের মধ্যে অসন্তোষ, হতাশা এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কা স্পষ্ট। বিহারও তার ব্যাতিক্রম নয়। কেন্দ্রের উচিত অবিলম্বে অগ্নিপথ প্রকল্প পুনর্বিবেচনা করে দেখার। কারণ তাদের এই সিদ্ধান্ত দেশের প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তার সঙ্গেও যুক্ত।'


ছাত্রদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন জেডিইউ সংসদীয় বোর্ডের অধ্যক্ষ উপেন্দ্র কুশওয়াহাকেও। ট্যুইটারে তিনি লেখেন, 'সেনা, নৌসেনা এবং বায়ুসেনায় নিযুক্তির অগ্নিপথ প্রকল্প অবিলম্বে পুনর্বিবেচনা করে দেখা উচিত কেন্দ্রের।' বিজেপি-র প্রাক্তন শরিক লোক জনশক্তি পার্টির প্রধান চিরাগ পাসোয়ান ইতিমধ্যেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে চিঠি লিখেছেন। 'অগ্নিপথ' প্রকল্প প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। 



বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জিতন রাম মাঝি বলেন, "অগ্নিপথ প্রকল্প দেশের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক, দেশের যুবসমাজের জন্যও। তাই অবিলম্পে এই প্রকল্প প্রত্যাহার করে নেওয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ, অবিলম্বে এই প্রকল্প তুলে নিন। সেনায় নিয়োগের আগের নিয়মই বহাল রাখা হোক।"


আরও পড়ুন: Rahul Gandhi on Agnipath Scheme: 'দেশবাসীর চাহিদা বোঝেন না মোদি, শুধু বন্ধুদের কণ্ঠ শুনতে পান,' 'অগ্নিপথ' নিয়ে তীব্র আক্রমণ রাহুলের


বিহারের বিরোধী দলনেতা তথা রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতা তেজস্বী যাদবও এই প্রকল্পের বিরোধিতা করেছেন। তাঁর সাফ যুক্তি, সেনার চাকরি কোনও ঠিকে চাকরি নয়। দেশের সবচেয়ে বড় দুই সরকারি কর্মক্ষেত্র, রেল এবং সেনার চাকরিতে ঠিকে প্রথা এলে, যুবসমাজ কোথায় যাবে, প্রশ্ন তোলেন তিনি। 


সেনায় নিযুক্তির ক্ষেত্রে সম্প্রতি নয়া 'অগ্নিপথ' প্রকল্প চালু করে কেন্দ্র। তার আওতায় নৌসেনা এবং বায়ুসেনায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কথা জানানো হয়। বলা হয়, 'অগ্নিপথ' প্রকল্পের আওতায় চার বছরের জন্য ‘অগ্নিবীর’ নিয়োগ করা হবে। প্রথম বছর এই ‘অগ্নিবীর’রা পাবেন মাসে ৩০ হাজার টাকা।  চতুর্থ বছরে সেই টাকার অঙ্ক দাঁড়াবে ৪০ হাজারে।  আয়ের ৩০ শতাংশ তাঁরা জমাতে পারবেন। সম পরিমাণ টাকা দেবে সরকারও। 



নয়া প্রকল্পে চার বছরের মেয়াদ শেষে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের ২৫ শতাংশকে স্থায়ী কর্মী হিসেবে সেনাবাহিনীতে নেওয়া হবে বলে জানানো হয়। বাকি ৭৫ শতাংশ আর সেনাবাহিনীতে রাখা হবে না। সেই সময় তাঁদের দেওয়া হবে ১০-১১ লক্ষ টাকা ভাতা, যা হবে সম্পূর্ণ করমুক্ত। চার বছর পর স্কিল গেইন সার্টিফিকেট, ক্রেডিট ফর হায়ার এডুকেশন সার্টিফিকেট পাবেন প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা। তবে অবসরের পরে ওই ৭৫ শতাংশ ‘অগ্নিবীর’রা সেনাবাহিনীর অবসরকালীন কোনও সুবিধা পাবে না। 


'অগ্নিপথ' প্রকল্প ঘিরে বিতর্ক


কেন্দ্রের তরফে আরও জানানো হয় যে, মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে চুক্তিভিত্তিক ওই অগ্নিবীররা নিজেদের 'প্রাক্তন সেনাকর্মী’ বলে উল্লেখ করতে পারবেন না। পাবেন না পেনশন কিংবা গ্র্যাচুইটির সুবিধাও। তবে চার বছর কর্মরত অবস্থায় কোনও ‘অগ্নিবীর’এর মৃত্যু বা অঙ্গহানি হলে মিলবে আর্থিক সাহায্য। আগামী ৩ মাসের মধ্যেই দেশজুড়ে ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র।