নয়াদিল্লি: পড়াশোনা খড়্গপুর আইআইটি থেকে। রাজস্ব বিভাগের দাপুটে আধিকারিক হিসেবেও ছিল পরিচিতি। সেখান থেকে রাজনীতির ময়দানে যখন পা রেখেছিলেন, গগনচুম্বী প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে (Arvind Kejriwal) ঘিরে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে স্কুল-কলেজ সংস্কার করে, মহল্লা ক্লিনিক খুলে, নিখরচায় বিদ্যুৎ, জল পরিষেবা প্রদান করে তাতে ভাল মতো উতরেও গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু যত সময় যাচ্ছে, সুদক্ষ শাসকের চেয়ে হিন্দুত্ব ঘেঁষা অবস্থানের জন্য সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে কেজরিওয়ালকে। বিশেষ করে গুজরাত (Gujarat Assembly Elections) ও হিমাচল প্রদেশ বিধানসভা (Himachal Pradesh Assembly Election) এবং দিল্লির পৌরসভা নির্বাচনের (MCD Polls) আগেই বিজেপি-র (BJP) বিকল্প হয়ে উঠতে তাদের বিরুদ্ধেই তিনি হিন্দুত্বের (Hindutva Card) তাস খেলতে মাঠে নেমেছেন বলে অভিযোগ উঠছে।
বিজেপি-র বিকল্প হয়ে বাজিমাতের চেষ্টা কেজরিওয়ালের!
দ্বিতীয় দফায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে নেমেই কেজরিওয়াল নিজেকে হনুমান ভক্ত হিসেবে তুলে ধরতে শুরু করেন বলে অভিযোগ বিরোধীদের। সম্প্রতি টাকায় মহাত্মা গাঁধীর ছবির পাশে লক্ষ্মী-গণেশের ছবি ছাপার পক্ষে সওয়াল করে, কেজরিওয়াল ধর্মনিরপেক্ষতার সব আবরণ ঝেড়ে ফেলেছেন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাতে কার্যতই অস্বস্তিতে পড়েছে বিজেপি। টাকায় লক্ষ্মী-গণেশের ছবি ছাপার কথা বলে কেজরিওয়াল মাস্টারস্ট্রোক হাঁকিয়ে ফেলেছেন বলে মনে করছেন লুটিয়েন্স দিল্লির গেরুয়া নেতা-সমর্থকদের একাংশ।
তবে ভক্তিভাবে গদগদ হয়ে নয়, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যসাধনেই কেজরিওয়াল সংখ্যাগরিষ্ঠের মন জয়ে হিন্দুত্বের তাস খেলছেন বলে মত আম আদমি পার্টি (Aam Aadmi Party) প্রধানের একদা ঘনিষ্ঠ কুমার বিশ্বাস। তাঁর দাবি, শুধু গুজরাত বা হিমাচল নয়, ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনকেই (Lok Sabha Election 2024) পাখির চোখ করছেন কেজরিওয়াল। কিন্তু সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অখিলেশ যাদব এবং নীতীশ কুমারদের ছাপিয়ে সংখ্যালঘু ভোট যে তিনি জিততে পারবেন না, তা বিলক্ষণ জানেন কেজরিওয়াল। তাই বিজেপি-র বিকল্প হিসেবেই হিন্দুদের কাছে নিজেকে তুলে ধরতে চাইছেন তিনি। সেই লক্ষ্যপূরণে সফল হলে বিজেপি এবং নরেন্দ্র মোদি বিরোধী সংখ্যালঘু ভোটও আপনা থেকেই তাঁর পক্ষে চলে আসবে বলে দৃঢ় বিশ্বাস কেজরিওয়ালের।
হিন্দুত্বের তাস খেলে বিজেপি-কে মাত দেওয়ার এই চেষ্টা যদিও প্রথম নয় কেজরিওয়ালের, আপ নেতা তথা দিল্লি পৌরসভার পর্যবেক্ষক দূর্গেশ পাঠক সাফ জানিয়েছেন, পৌরসভার সম্পূর্ণ দখল তাঁদের হাতে এলে, রাজধানীতে ‘রামরাজ্য’ স্থাপন করবেন তাঁরা। দুর্নীতি নামক রাবণকে বধ করে দেখাবেন।
কেজরিওয়াল নিজেও ঢের আগে থেকেই রীতিমতো পরিকল্পনা করে এগোচ্ছেন। দ্বিতীয় দফায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার সময় হনুমান চালিসা পাঠ করেন তিনি। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজেকে হনুমান ভক্ত প্রমাণ করতে হনুমান চালিসা পাঠ করেও শোনান।
জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার নিয়ে যখন একজোটে শাসকদল বিজেপি-কে নিশানা করে চলেছেন বিরোধী শিবিরের রাজনীতিকরা, সেই সময় বিজেপি বহির্ভূত একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কেজরিওয়াল কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন। জম্মু ও কাশ্মীরের মর্যাদা খর্ব নিয়ে পরবর্তী কালেও সমবেদনা জানাতে দেখা যায়নি তাঁকে। বরং অনুচ্ছেদ ৩৭০ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে সরকারের সঙ্গে একমত বলে জানান।
শুধু তাই নয়, দেশের স্কুল-কলেজগুলিতে জাতীয়তাবাদ নিয়ে যথেষ্ট শিক্ষা দেওয়া হয় না ছেলেমেয়েদের। তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘‘আমাদের স্কুলগুলিতে জাতীয়তাবাদ নিয়ে যথেষ্ট শিক্ষাদানের ব্যবস্থা নেই। প্রতিদিন অন্তত এক ঘণ্টা দেশভক্তি নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত, যাতে পড়ুয়াদের কট্টর দেশপ্রেমী করে তোলা যায়। ভগৎ সিংহ, বিআর আম্বেদকরের শিক্ষাও ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে আমাদের।’’
বিজেপি-র বিরুদ্ধেই হিন্দুত্ব তাসের ব্যবহার কেজরিওয়ালের!
হিন্দুত্ব ঘেঁষা অবস্থানের অভিযোগ নিয়ে কেজরিওয়াল যুক্তি দেন যে, তিনি রামায়ণ এবং গীতায় বর্ণিত হিন্দুত্বে বিশ্বাসী। রাম যা বলেছেন, তাঁর কাছে সেটাই হিন্দুত্ব। বিজেপি-কে বিঁধতে বলেন, ‘‘ভগবান রাম আমাদের নিজেদের মধ্যে শত্রুতা শেখাননি। কিন্তু এরা দলিতদের পিটিয়ে মারছে।’’ তবে দলিত সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচারের কথা বললেওও, কৌশলে কেজরিওয়াল সংখ্যালঘুদের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান বলেই অভিমত বিরোধীদের।