নয়াদিল্লি: আনকাট বিশেষ আলাপচারিতার পর্বে আজকের অতিথি কু (Koo) অ্যাপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ময়ঙ্ক বিদাওয়াটকা।


এবিপি লাইভ: কী এই কু?  কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন  কু-কে?


ময়ঙ্ক: কু এমন এক প্ল্যাটফর্ম যেখানে প্রত্যেকে তাঁদের মতামত জানাতে পারবেন। কোনও ব্যক্তি একে অপরকে ফলো করে তা পড়তে পারেন।


এবিপি লাইভ: ট্যুইটারের সঙ্গে পার্থক্য কোথায়?


ময়ঙ্ক: আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে গেলে ট্যুইটারের জন্ম আমেরিকায়। যেখানে সবাই ইংরেজিতে কথা বলেন। ভারত এমন দেশ যেখানে একাধিক ভাষা আছে। দেড় বছর আগে কু-এর জন্ম হয়েছে। কিন্তু এখানে ১০০ কোটিরও বেশি মানুষ ইংরেজি ভাষায় কথা বলেন না। ইন্টারনেট ব্যবস্থার উন্নতি হলেও এখনও দেশে অনেকেই তার সুবিধা পান না। অনেকেই নিজের মতামত প্রকাশ করতে পারেন না। তার কোনও সমাধান প্রয়োজন। যেহেতু আমরা এখানকার বাসিন্দা তাই এখানকার সমস্যা বুঝতে পারি। অনেকেই ইংরেজি বলতে পারেন না বা বলতে পারলেও তা ভাঙা ভাঙা ইংরেজি। তাঁদের নিজেদের ভাষাভাষি লোকের সঙ্গে কথা বলা বা নিজের মতামত প্রকাশ করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে অন্যের মতও জানা প্রয়োজন। তাঁদের জন্য সবটা সহজ করা প্রয়োজন ছিল। আমরা দেখেছি ট্যুইটারে ভারতীয় ভাষায় অত্যন্ত কম কনটেন্ট রয়েছে। যেমন কর্নাটকে ৬-৭ কোটি মানুষ বাস করেন। আর সেখানে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের ভাষায় ৬০০ থেকে ৭০০ ট্যুইট দেখতে পাওয়া যায়। সুতরাং সংশ্লিষ্টদের এমন এক মঞ্চ দরকার যেখানে তাঁরা অনায়াসে কোনও সংকোচ ছাড়াই নিজেদের মত প্রকাশ করতে পারবেন। এমন একটা টুল দরকার যেখানে এলেই তাঁদের কাছে জানতে চাওয়া হবে তাঁরা কোন ভাষায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। সেই মোতাবেক নিজের মত প্রকাশ করার অপশন থাকবে। কীবোর্ড ছাড়াই অডিও-ভিডিও-র অপশন আছে। যদি আপনি কন্নড়ে ভাষায় কথা বলেন, তবে সংশ্লিষ্ট ভাষাভাষির লোকজনের সঙ্গে কথোপকথনে অংশ নিতে পারবেন। ভারতবাসীরা কী চান সেটা আগে দেখা হয়েছে, তার পরে এটা বানানো হয়েছে। আমেরিকা বা চিনের কোনও সংস্থা উপর উপর কাজ করে প্রোডাক্ট তৈরি করে ফেলে। যাতে বিশ্ববাসী তার সুবিধা পেতে পারে। কিন্তু আমাদের জন্য এটাই প্রথম। এখান থেকেই আমরা সূচনা করেছি। কীভাবে সবাইকে ভাষাগত স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়া যায় সেদিকেই লক্ষ্য রেখেছি।


এবিপি লাইভ: এত কম সময়ে কু-এর জনপ্রিয়তা বেড়েছে, তাতে কী আপনি সন্তুষ্ট?


ময়ঙ্ক: মাত্র দেড় বছরে, কম সময়ে এতটা জনপ্রিয় হয়ে উঠবে এটা সত্যিই ভাবতে পারিনি। এর সঙ্গে অনেকেই জড়িয়ে আছেন। বলিউডের কলাকুশলী সহ ক্রিকেট তারকা, রাজনীতিবিদ থেকে সাংবাদিকরাও কু ব্যবহার করছেন। এতটা আশা করিনি। গতবছর মন কি বাত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীও কু সম্পর্কে বলেছেন। আমাদের ধারণা ভারতের অনেকেই ইন্টারনেট ব্যবহার করবেন। এই সুযোগ অন্য কোথাও পাওয়া যাবে না। ভারতবাসীকে ভাল করে বুঝতে হবে। তাঁরা কী চাইছেন তা জানতে হবে। নিজের মতামত যাতে অন্যের সামনে প্রকাশ করা যায়, সেকথা মাথায় রেখে মাইক্রো ব্লগিং সাইট হিসেবে সামনে আনা হয়েছে কু। তবে আমাদের লক্ষ্য কু ব্যবহারকারীদের চাহিদা বোঝা সেই অনুযায়ী ফিচার তৈরি।


এবিপি লাইভ: কথায় বলে ভারতীয়রা বলতে শুরু করলে আর থামে না, মাইক্রো ব্লগিং সাইট বানানোর আগে ভাবেননি?


ময়ঙ্ক: এটা ঠিকই যে ভারতীয়রা মতামত দিয়ে থাকেন। এটা খুবই ভাল বিষয়। বহু মানুষ সারাদিন একাধিক কু করে থাকেন। এমনও অনেকে আছেন যাঁরা একশোটা কু ও করে ফেলেন।


এবিপি লাইভ: বেশ কয়েকটা রাজ্যে সামনে নির্বাচন আছে, রাজনীতিবিদরা কীভাবে এটা ব্যবহার করছেন?


ময়ঙ্ক: প্রতিদিন ওঁদের কাজের বিষয় আপডেট আসে। কী ভাবছেন ওঁরা। যেমন ধরা যাক যোগী আদিত্যনাথ কী করছেন তা জানাচ্ছেন। অনেকে তা দেখছেন, মন্তব্য করছেন। যোগী আদিত্যনাথ এবং তাঁর টিমও জানতে পারছে মানুষ কী চাইছে। একটা সরাসরি যোগাযোগ রাখার মাধ্যম।


এবিপি লাইভ: ক্রিকেট নিয়ে বিশেষ কোনও ফিচার আছে?


ময়ঙ্ক: কু-এ অনেক ক্রিকেটার রয়েছেন। গত কয়েক সপ্তাহে বীরেন্দ্র শহবাগ, ওয়াসিম আক্রমও যোগ দিয়েছেন কু-তে। ওঁরা বুঝতে পারছেন একাধিক ভাষাতেই কু ব্যবহার করা যায়। অনেকেই বুঝতে পারছেন ইংরেজি ভাষা ছাড়াও নিজেদের ভাষাতেই কু ব্যবহার করা যাচ্ছে। ক্রিকেটাররাও মানুষের মতামত সম্পর্কে জানতে পারছেন। ক্রিকেটের ক্ষেত্রে লাইভ চ্যাট, লাইভ স্কোরের অপশন রয়েছে।


এবিপি লাইভ: কু করেছেন কি?’’ এই বিষয়টা কীভাবে আনলেন?


ময়ঙ্ক: ধরা যাক কেউ ভাল কাজ করেছেন। তাঁকে বলা হল কু করেছেন কি? প্রত্যেকের নিজস্ব মতামত কু-তে জানানো উচিত। কারণ এটা মতামত জানানোর মঞ্চ। এতদিন নিজেদের গণ্ডির মধ্যেই সীমিত থাকত মতামত। এবার কু-এর মঞ্চ রয়েছে। অনেকে রিঅ্যাক্ট করবেন, আপনার পোস্টে কমেন্ট করবেন। তখন নিজের গুরুত্বও বাড়ছে বলে মনে হবে। আমাদের মূলত পরিবার, বন্ধু, পরিজনদের থেকেই গুরুত্ব মেলে। এখানে আপনার অনলাইনে গুরুত্ব বাড়বে। তাই জানতে চাওয়া হয় কু করেছেন কি?


এবিপি লাইভ: বিশিষ্টদের কু-অ্যাপে আনতে কোনও উদ্যোগ নিচ্ছেন?


ময়ঙ্ক: যখন বিশিষ্ট কেউ কু-তে আসছেন তখন তাঁর আপডেট পেতে অনেকেই কু-তে যোগ দিচ্ছেন। কাউকে  দেখে মনে হয়, আরে এত আমার বন্ধু। নিজের মতামত প্রকাশ করছে কু-তে। আমাকেও তাহলে কু-তে যোগ দিতে হবে। রাজনীতিবিদ, খেলোয়াড়, তারকাদের মাধ্যমে এভাবেই অনেকে কু ব্যবহার করছেন।


এবিপি লাইভ: তথ্যের সুরক্ষা নিয়ে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন?


ময়ঙ্ক: প্রাইভেট সোশাল প্ল্যাটফর্ম, যেমন ফেসবুকে মানুষ আসে যাতে তাঁর পরিচিত সহ বাকিরা তাঁর বিষয়ে আপডেট পান। অর্থাৎ যাঁদের আমি চাইছি শুধুমাত্র তাঁরাই আমার সম্পর্কে জানতে পারেন। পাবলিক সোশাল প্ল্যাটফর্মের বিষয়টা আলাদা। কোনও তথ্য দেওয়ার অর্থ যাতে অন্যরা তাঁর সম্পর্কে জানতে পারেন। ফোন নম্বর, ইমেল আইডির মতো তথ্য সুরক্ষিত থাকবে। আমাদের তথ্যের গোপনীয়তা অত্যন্ত কড়া। দেশের প্রথম সারির অ্যাথিকল হ্যাকাররা কু-এর সঙ্গে কাজ করছে। তথ্য ফাঁসের কোনও সম্ভাবনা নেই।


এবিপি লাইভ: কী করেন এই হ্যাকাররা?


ময়ঙ্ক: প্রত্যেকেই অ্যাথিকল হ্যাকার। তথ্য সুরক্ষার যে সর্বশেষ আপডেট আছে তা নিয়ে তাঁরা কাজ করেন। ওয়েবসাইট হ্যাক যাতে না হয়, তা সুনিশ্চিত করতে অ্যাথিকল হ্যাকাররা কাজ করেন।


এবিপি লাইভ: অনেক সময়ই দেখা যায় নীতির বিরুদ্ধে কোনও পোস্ট করলে ট্যুইটার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ব্যান করে, কু-এর ক্ষেত্রেও কী এরকম নিয়ম আছে?


ময়ঙ্ক: আমাদের ক্ষেত্রে বিষয়টা আলাদা। মানুষ ভুল নয়। হতে পারে তিনি কোনও ভুল কথা বলে ফেলেছেন বা লিখে ফেলেছেন। সেটা সংবিধানের বিরুদ্ধেও হতে পারে। কিন্তু আমরা তাঁর বক্তব্যটা ভুল বলতে পারি মাত্র। ব্যান করার ক্ষেত্রে দেখা হবে সংশ্লিষ্ট কু ব্যবহারকারী কতবার একই ভুল করছেন। একাধিকবার সতর্ক করা বা জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন উঠলে ব্যান করা হবে। কিন্তু প্রাথমিকভাবে কোনও ব্যক্তিকে ভুল শোধরানোর সুযোগ দেওয়া হবে। আমরা আমেরিকা বা চিনের সংস্কৃতি এনে ভারতীয়দের উপর চাপিয়ে দেওয়া আমাদের উদ্দেশ্য নয়।


এবিপি লাইভ: নাইজেরিয়ার রাষ্ট্রপতি ট্যুইটার সরিয়ে কু-কে প্রাধান্য দিয়েছেন, এটা কীভাবে দেখছেন?


ময়ঙ্ক: আমরা চাই বিশ্বব্যাপী কু ছড়িয়ে পড়ুক। একাধিক দেশের স্থানীয় ভাষা রয়েছে। আমরা ভারতের বাইরেও কু-এর বিস্তৃতি ঘটাতে চেয়েছিলাম। নাইজেরিয়ায় যা হয়েছে সেটা একটা বড় সাফল্য। আমরা দেখছিলাম দেশের বাইরে কীভাবে আত্মপ্রকাশ করে কু। নাইজেরিয়ার অনেকেই কু-তে কাজ করছেন। এটা দারুণ অভিজ্ঞতা।


 


এবিপি লাইভ: আর কোন কোন দেশে আত্মপ্রকাশ করার লক্ষ্য রয়েছে?


ময়ঙ্ক: একাধিক দেশ রয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ সহ আফ্রিকার অন্যান্য দেশ নিজেদের স্থানীয় ভাষায় অনেকেই কথা বলেন। খুব মানুষই ইংরেজিতে কথা বলে থাকেন। তাঁদেরও যোগ করতে হবে। কু সারা বিশ্বে যাবে। যেখানে স্থানীয় ভাষাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়, সেই দেশই আমাদের লক্ষ্য। যাতে একই ভাষাভাষী মানুষ নিজেদের মধ্যে কথা বলতে পারেন। একে অন্যকে না জানলেও একই ভাষাভাষী মানুষদের মধ্যে যোগাযোগ থাকে।


এবিপি লাইভ: আগামী ৫ বছরের মধ্যে কোনও টার্গেট আছে?


ময়ঙ্ক: আমাদের লক্ষ্য আপাতত ভারত।  স্থিরভাবে কাজ করতে চাই। তারপর বিশ্বব্যাপী তা ছড়িয়ে দিতে চাই।