নয়াদিল্লি: সভাপতি পদ থেকে তাঁদের পরিবারকে বাদ দিয়ে ভাবা হোক বলে ঢের আগেই জানিয়েছিলেন রাহুল গাঁধী (Rahul Gandhi)। সব ঠিক থাকলে, এ বার সেই পথেই হাঁটতে চলেছে কংগ্রেস (Congress Presidential Elections)। এ বারে কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন তিরুঅনন্তপুরমের সাংসদ শশী তারুর (Shashi Tharoor) এবং রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত (Ashok Gehlot)। তারুরের মনোনয়নে ইতিমধ্যেই সনিয়া গাঁধী (Sonia Gandhi) সায় দিয়েছেন বলে দলীয় সূত্রে খবর। গহলৌতও গাঁধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। তাঁদের মধ্যে যে কেউ একজন জয়ী হলে, বিগত ২০ বছরেরও বেশি সময় পর এই প্রথম গাঁধী পরিবারের বাইরের কাউকে সভাপতি হিসেবে পাবে কংগ্রেস।


আগামী ১৭ অক্টোবর কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচন


প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শশী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইচ্ছা আগেই প্রকাশ করেছিলেন। ঘটনাচক্রে কংগ্রেসের অন্দরে বিক্ষুদ্ধ জি-২৩ শিবিরের অংশও ছিলেন তিনি, অভ্যন্তরীণ রদবদল, নয়া সভাপতি নির্বাচনের দাবিতে সরব হয়েছিলেন যিনি। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে পরাজয়ের দায় স্বীকার করে সভাপতি পদ থেকে যখন সরে দাঁড়ান রাহুল, সেই সময় সনিয়াকে লেখা চিঠিতে সংগঠনে রদবদল ঘটানোর আর্জি জানিয়ে লেখা চিঠিতে স্বাক্ষর ছিল শশীরও। মায়ের মৃত্যু এবং বিদেশে চিকিৎসা করিয়ে সম্প্রতিই দেশে ফিরেছেন সনিয়া। সোমবার সন্ধেয় তাঁর সঙ্গে দেখা করেন শশী। আগামী ১৭ অক্টোবর কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচেন অংশ নেবেন তিনি।


এর কয়েক ঘণ্টা পরই শশীর বিরুদ্ধে গহলৌত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে সামনে আসে। গাঁধীদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ গহলৌত। এতদিন সভাপতি পদে রাহুলকে ফেরানোর দাবিতে সরব ছিলেন তিনি। তাই রাহুল-ঘনিষ্ঠদের সমর্থন তাঁর দিকেই যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে গাঁধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ গহলৌত সভাপতি হলে, আড়াল থেকে গাঁধী পরিবারই তাঁকে পরিচালনা করবেন কি না, সেই আশঙ্কাও মাথাচাড়া দিচ্ছে। আবার গহলৌতের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে রাহুলের কৌশল হিসেবেও দেখছেন অনেকে। কারণ রাজস্থানে গহলৌতের সঙ্গে সচিন পায়লটের বনিবনা না হওয়ার খবর কারও কাছে চাপা নেই। গহলৌতকে দলের সভাপতি করে, রাজস্থানে পায়লটকে গুরুত্ব দেওয়া হতে পারে বলেও মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।


আরও পড়ুন: Tajpur Port: বিপুল কর্মসংস্থানের আশা, তাজপুরে সমুদ্র বন্দর নির্মাণের বরাত পেল আদানি গোষ্ঠী


আসন্ন দলীয় নির্বাচন নিয়ে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, ‘‘চাইলে যে কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। সকলকে স্বাগত। কংগ্রেস এবং রাহুল গাঁধী বরাবর এমনটাই মনে করে এসেছেন। সুষ্ঠ, স্বচ্ছ এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ক্ষেত্রে কাও মতামত বা অনুমতির প্রয়োজন নেই।’’ আগামী তিন দিন ধরে মনোনয়ন জমা নেওয়ার পর্ব চলবে।  সর্বশেষ গোলাম নবি আজাদ-সহ একে একে হেভিওয়েট নেতাদের দলত্যাগের পর নির্বাচন হতে চলেছে কংগ্রেসে।


দীর্ঘ ১৭ বছর কংগ্রেস সভাপতি থাকার পর ২০১৭ সালে রাহুলের হাতে দায়িত্ব তুলে দেন সনিয়া।। কিন্তু ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে পরাজয়ের দায় স্বীকার করে সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দেন রাহুল। তার পর থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি হিসেবে কংগ্রেসের কাজকর্ম দেখছেন সনিয়া। কিন্তু তার পরও নির্বাচনী রাজনীতিতে সঙ্কটমুক্ত হয়নি কংগ্রেস। বরং একের পর এক রাজ্য হাতছাড়া হয়েছে তাদের। একের পর এক হেভিওয়েট নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে দল ছেড়েছেন।  


মুখোমুখি লড়াইয়ে শশী তারুর এবং অশোক গহলৌত


বিগত কয়েক বছর ধরেই রাহুলকে ফের সভাপতি পদে ফিরিয়ে আনার দাবি তুলছিলেন কংগ্রেস নেতাদের একাংশ। কিন্তু সেই সম্ভাবনা খারিজ করে দিয়েছেন রাহুল নিজেই। তাঁকে এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের বাদ দিয়ে নেতাদের ভাবতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন। ১৯৯৮ সালে কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন সনিয়া। তার আগে সীতারাম কেশরীই কংগ্রেসের গাঁধী পরিবার বহির্ভূত শেষ সভাপতি।