নয়াদিল্লি: ভ্যাকসিনের আকালের মধ্যে দেদার অপচয়। রাজস্থানে ডাস্টবিনের মধ্যে মিলেছে প্রায় পাঁচশো ভায়াল। এমনই অভিযোগ ঘিরে বিতর্কে কংগ্রেস শাসিত রাজস্থান সরকার।


অভিযোগ উড়িয়ে মাত্র ১ শতাংশ ভ্যাকসিন নষ্ট হয়েছে বলে রাজস্থান সরকারের দাবি করলেও, কেন্দ্রের নির্দেশে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করেছে রাজস্থান প্রশাসন। 


কোনও ভায়ালে অর্ধেকটা রয়েছে।  কোনওটায় তার থেকে একটু কম।  যেমন-তেমন নয়, সব করোনা ভ্যাকসিনের ভায়াল। যার একেকটা ডোজ পাওয়ার জন্য মানুষ এখন হন্যে হয়ে ঘুরছে। অথচ, সেই ভ্যাকসিনশুদ্ধ ভায়ালের জায়গা হয়েছে ডাস্টবিনে।


হেলায় ভ্যাকসিন অপচয়ের এই ছবি দেখা গেছে রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড থেকে শুরু করে উত্তরপ্রদেশে। রাজস্থান সরকার অভিযোগ করেছে যে, তারা কেন্দ্রের থেকে প্রয়োজনের এক চতুর্থাংশ ভ্যাকসিনও পাচ্ছে না। অথচ, সেই রাজ্যের বুন্দিতে একটি ভ্যাকসিনেশন সেন্টারে পৌঁছে দেখা যায়, বর্জ্য ফেলার জায়গায় পড়ে রয়েছে ভ্যাকসিনশুদ্ধ ভায়াল।


কংগ্রেস শাসিত রাজস্থানে ভ্যাকসিন অপচয়ের অভিযোগ উঠতেই তা নিয়ে সরব হয়েছে বিজেপি। দলের আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য ট্যুইট করেছেন, রাজস্থানে করোনার ভ্যাকসিন আবর্জনার স্তূপে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। একদিকে রাহুল গাঁধী রোজ ভ্যাকসিন নিয়ে উপদেশ দেন, অন্যদিকে কংগ্রেসের সরকার ভ্যাকসিন নষ্ট করে। ঝাড়খণ্ড, ছত্তীসগড়, রাজস্থান এর উদাহরণ।
করোনার বিরুদ্ধে লড়াইকে দুর্বল করছে কংগ্রেস।


রাজস্থানের স্বাস্থ্য আধিকারিকদের পাল্টা দাবি, একটি ভায়াল থেকে ১০-১১ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া যায়। তবে একটি ভায়াল খোলার পর চার ঘণ্টা রাখা যায়। ভায়াল খোলার পর চার ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে, ভ্যাকসিন থাকলেও, তা দেওয়া যায় না। বুন্দির স্বাস্থ্যকর্মী শিমলা গোস্বামী বলেন, আমরা একটি ভায়াল সবথেকে বেশি ভ্যাকসিন দেওয়ার চেষ্টা করি, যাতে ভ্যাকসিন বাঁচানো যায়। 


কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত সবথেকে বেশি ভ্যাকসিন অপচয় হয়েছে ঝাড়খণ্ডে, প্রায় ৩৭ শতাংশ। তারপরই রয়েছে ছত্তীসগঢ়, যেখানে ৩০ শতাংশ ভ্যাকসিন অপচয় হয়েছে। এছাড়া, তামিলনাড়ুতে ১৬ শতাংশ, জম্মু-কাশ্মীরে ১১ শতাংশ এবং মধ্যপ্রদেশেও প্রায় ১১ শতাংশ ভ্যাকসিন নষ্ট হয়েছে। 


তবে বিজেপি যখন কংগ্রেস শাসিত রাজ্যে করোনা-ভ্যাকসিনের অপচয় নিয়ে সরব, তখন বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশের আলিগড়েও দেখা গিয়েছে একই ছবি। আলিগড়ে জামালপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও দেখা গেছে, বর্জ্য ফেলার জায়গায় পড়ে রয়েছে ভ্যাকসিন ভরা সিরিঞ্জ। একটা দু’টো নয়, ভ্যাকসিন ভরা ২৯টা সিরিঞ্জ। 


সংবাদমাধ্যমে এই খবর প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে রাজস্থান স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন। কেন্দ্র জানিয়ে দেয়, ভ্যাকসিনের অপচয় কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। এরপরই, নড়েচড়ে বসে রাজস্থান প্রশাসন। আলিগড়ের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, এনকোয়ারি কমিটি তৈরি করেছি। দ্রুত করতে বলেছি। 


সব মিলিয়ে, মানুষ যখন ভ্যাকসিনের একটা ডোজ পেতে জুতোর শুকতলা ক্ষইয়ে ফেলছে, তখন বিভিন্ন রাজ্যে ভ্যাকসিন অপচয়ের ছবি দেখে বিস্মিত অনেকেই।