নয়াদিল্লি: সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) উচ্ছেদ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়ার পরেও থামেনি বুলডোজারের চাকা। বরং একের পর এক দোকান ভাঙতে ভাঙতে ক্রমশ এগিয়ে গিয়েছে। তাতেই দিল্লির জাহাঙ্গিরপুরী (Jahangirpuri Anti-Encroachment Drive) ছুটে যেতে দেখা গেল সিপিএম (CPM) নেত্রী বৃন্দা কারাটকে (Brinda Karat)। আদালতের নির্দেশের কোনও কপি হাতে না আসা পর্যন্ত ভাঙচুর চলবে বলে যখন জানিয়ে দেন পুরসভা কর্তৃপক্ষ, সেই সময় আদালতের নির্দেশের কপি নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন বৃন্দা। সেখানে সরাসরি স্পেশাল সিপি দীপেন্দ্র পাঠকের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় বৃন্দাকে। এক ফোন থেকে দু’জনকে দফায় দফায় অপর প্রান্তে কারও সঙ্গে কথা বলতেও দেখা যায়। তার পরই বুলডোজারের চাকা কার্যত থেমে যায়।
আদালতের নির্দেশের পরও থামেনি বুলডোজার
গত শনিবার হনুমান জয়ন্তীর শোভাযাত্রা ঘিরে সাম্প্রদায়িক হিংসার পরিস্থতি তৈরি হয় দিল্লির জাহাঙ্গিরপুরী এলাকায়। তার পর ছেকে গত কয়েক দিন ধরে থমথম করছিল গোটা এলাকা। পাশাপাশি শুরু হয়েছে তদন্তও। তার মধ্যেই বুধবার সকাল ১০টা নাগাদ কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা দিল্লি পুরসভার ন’টি বুলডোজার ওই এলাকায় পৌঁছয়। ৪০০ পুলিশ নামিয়ে ঘিরে ফেলা হয় গোটা এলাকা। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি দেখা দিলে বা দাঙ্গা বাধলে তা সামাল দেওয়ার জন্য আলাদা করে রায়ট গিয়ার পরিহিত বাহিনীও নামানো হয়। তার পর বেআইনি ভাবে সরকারি জমি দখল করে থাকার অভিযোগ তুলে শুরু হয় উচ্ছেদ অভিযান।
পরিস্থিতি আঁচ করে মুহূর্তের মধ্যেই শীর্ষ আদালেত জনস্বার্থ মামলা জমা পড়ে। তাতে স্থিতাবস্থার নির্দেশ দেয় আদালত। বন্ধ রাখতে বলা হয় উচ্ছেদ অভিযান।কিন্তু আদালতের এই নির্দেশের পরেও থামেনি পুরসভার বুলডোজারের চাকা। বরং একের পর এক দোকান ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এলাকায় অবস্থিত একটি মসজিদের দেওয়াল এবং ফটকও ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ সামনে এসেছে। আদালতের নির্দেশের প্রসঙ্গ উঠলে পুরসভার আধিকারিকরা জানান, তাঁদের হাতে নির্দেশপত্র এসে পৌঁছয়নি। তা না আসা পর্যন্ত উদ্ধারকার্য চলবে। সেই নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যেই দুপুর ১২টা নাগাদ আদালতের নির্দেশের একটি প্রতিলিপি নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন বৃন্দা।
একাধিক দোকান এবং নির্মাণ ভেঙে দেওয়া হয়েছে
ঘটনাস্থল থেকে যে ভিডিও সামনে এসেছে, তাতে দেখা গিয়েছে, বুলডোজারের সামনে দাঁড়িয়ে আদালতের নির্দেশের প্রতিলিপি মেলে ধরেছেন তিনি। তাঁকে দেখে এগিয়ে যান স্পেশাল সিপি। দু’জনের মধ্যে বেশকিছু ক্ষণ কথা হয়। ফোনেও অন্য প্রান্তে কারও সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। তার পরই বুলডোজার থামিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনাস্থল থেকে বেরনোর সময় সংবাদমাধ্যমে বৃন্দা বলেন, ‘‘আমার মতে, এখানে ভাঙাভাঙির যে কাজ চলচিল, তা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং সংবিধানবিরোধী। আদালত স্থিতাবস্থার নির্দেশ দেওয়ার পরেও ভাঙার কাজ থামেনি। তাই নিজেই ছুটে এলাম, কারণ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পালন করতে বাধ্য আমরা। সিপি বলেছেন, বুলডোজার চলবে না আপাতত।’’
এ দিনের ঘটনায় নিন্দার ঝড় উঠেছে সর্বত্র। আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও কেন ভাঙাভাঙির কাজ বন্ধ হল না প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। আবার নির্দিষ্ট একটি সম্প্রদায়ের মানুষের দোকানপাটই ভাঙা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। তবে এ দিন বুলডোজার থামাতে কম ঝক্কি পোহাতে হয়নি আইনজীবী দুশ্যন্ত দাভেকেও। আদালতের নির্দেশের পরও যখন ভাঙচুর থামেনি, সেই সময় সরাসরি প্রধান বিচারতি এনভি রমণকে হস্তক্ষেপ করার আর্জি জানান তিনি। সঙ্গে সঙ্গে পুরসভার মেয়র এবং কমিশনারে নম্বর চান বিচারপতি।