নয়াদিল্লি: শত্রুর রেডারের নজরে আসা থেকে ভারতীয় বায়ুসেনার যুদ্ধবিমানগুলিকে রক্ষা করার জন্য "অত্যাধুনিক শাফ প্রযুক্তি" তৈরি করল প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও)। 


ভারতীয় বায়ুসেনার নির্ধারিত গুণমান অনুযায়ী, পুণের হাই এনার্জি মেটিরিয়াল রিসার্চ ল্যাব (এইচইএমআরএল)-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে এই অত্যাধুনিক শাফ ও তার কার্টরিজ তৈরি করেছে যোধপুরে ডিআরডিও ডিফেন্স ল্যাবোরেটরি। 


এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, কয়েকমাস আগে, ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য একই ধরনের শাফ প্রযুক্তি তৈরি করেছিল ডিআরডিও, যাতে যে কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে রণতরীগুলিকে রক্ষা করা যায়।


ওই প্রযুক্তির তিনটি সংস্করণ ছিল। একটি স্বল্পপাল্লা, একটি মাঝারি পাল্লা ও একটি দূরপাল্লার শাফ রকেট। তিনটিই তৈরি হয়েছিল যোধপুরের গবেষণাগারে। আরবসাগরে সেগুলির পরীক্ষা হয়। নৌসেনা এই প্রযুক্তিতে সন্তুষ্ট। 


শাফ হল একটি রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি কাউন্টারমেজার (বেতার-তরঙ্গ নির্ভর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা)। শত্রুর রেডারকে বিভ্রান্ত করার জন্য যা ব্যবহার করে থাকে যুদ্ধবিমান, জাহাজ এবং সামরিক যানগুলি।


সাধারণত, রেডার গাইডেড (সক্রিয় বা আধা সক্রিয়) ক্ষেপণাস্ত্রকে বিভ্রান্ত করতে শাফ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। প্রত্যেক যুদ্ধবিমানের পিছনদিকে শাফ পড (আধার) রাখা থাকে। 


ওই পডের মধ্য়ে একই আকার এবং আকৃতির বেশ কয়েকটি ছোট ছোট ধাতব অংশ থাকে এবং তাদের লক্ষ্য রেডারে থেকে আসা তরঙ্গকে বিভ্রান্ত করা, যাতে না রেডার ওই যুদ্ধবিমানে ক্ষেপণাস্ত্র লক করতে পারে। 


প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে এক বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, এই পদক্ষেপ নরেন্দ্র মোদি সরকারের আত্মনির্ভর ভারত মিশনের অন্তর্গত। 


সম্প্রতি, ইউজার ট্রায়াল সফলভাবে শেষ হয়েছে। এরপরই, এই অত্যন্ত জটিল সামরিক প্রযুক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করতে প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা। 


প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, এই প্রযুক্তির বিশেষত্ব হলো এই যে, শত্রুর ক্ষেপণাস্ত্রকে প্রতিহত করতে এবং দেশের যুদ্ধবিমানের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে যতটুকু প্রয়োজন, ততটা পরিমাণ শাফ নিক্ষেপ করা হয় বাতাসে। 


প্রতিরক্ষামন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে, প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ফলে আধুনিক প্রজন্মের রেডারগুলি অত্যন্ত তীক্ষ্ণ। ফলে, তাকে ফাঁকি দেওয়াটা চ্যালেঞ্জের বিষয়। আর, বর্তমান বৈদ্যুতিন রণকৌশলের যুগে যুদ্ধবিমানকে রক্ষা করা উদ্বেগের বিষয়।


সেই উদ্বেগ কাটাতে এবং বিমানের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রায় সকলেই কাউন্টার মেজার ডিসপেন্সিং সিস্টেম ব্যবহার করে থাকে,  যা ইনফ্রারেড (অবলোহিত) এবং রেডারগুলিকে প্যাসিভ জ্যামিংয়ের মাধ্যমে অকেজো করে দেয়।


মন্ত্রক জানিয়েছে, বায়ুসেনার বিমানগুলির নিরাপত্তার কথা মাথা রেখে ইতিমধ্যেই বিপুল পরিমাণ এই শাফ উৎপাদনের সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হয়েছে।