নয়াদিল্লি: কৃষক আন্দোলন ঘিরে ফের উত্তাল পরিস্থিতি। পঞ্জাব এবং হরিয়ানা সীমানায় কৃষকদের আন্দোলন আটকাল পুলিশ। দিল্লি অভিমুখে রওনা দিলে কৃষকদের আটকানো হয় সেখানে। শম্ভু সীমানার কাছে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে পুলিশ ও কৃষকদের মধ্যে। কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে আন্দোলনকারী কৃষকদের ছত্রখান করতে চেষ্টা চালায় পুলিশ। (Farmers Protests 2024)
ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য এবং অন্যান্য দাবিদাওয়া নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে কৃষক আন্দোলন। সেই মতো দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেয় শতাধিক কৃষকের একটি দল। কৃষকদের ওই দিল্লি অভিযান রুখতে এগিয়ে আসে হরিয়ানা পুলিশ। সেখানে দু'পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে, চলে ধস্তাধস্তি। আন্দোলনকারীদের হটাতে কাঁদানে গ্যাসের শেলও ফাটায় পুলিশ। (Delhi Farmers Protests)
পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে বলে আঁচ করেছিলেন কৃষকরা। তাই মাস্কে মুখ ঢেকে, চশমায় চোখ ঢেকেই আন্দোলেন নেমেছিলেন তাঁরা, যাতে কাঁদানে গ্যাসের মোকাবিলা করতে পারেন। পুলিশ দাবি করে, আন্দোলনকারীদের অনেকে কৃষকই নন। তাঁদের শনাক্ত করতে গেলে বাধা দেওয়া হয়। যদিও কৃষকদের দাবি, সরকারের নির্দেশে তাঁদের দিল্লি যাওয়া আটকানো হচ্ছে।
কৃষকদের এই আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছে সংযুক্ত কিসান মোর্চা (অরাজনৈতিক) এবং কিসান মজদুর মোর্চা। শম্ভু সীমানায় আটকে পড়ার পর কৃষকরা বলেন, "পুলিশ পরিচয়পত্র চাইছে। তার আগে পুলিশকেও তো গ্যারান্টি দিতে হবে যে আমাদের দিল্লি যেতে দেওয়া হবে! বলছে, দিল্লি যাওয়ার অনুমতি নেই। তাহলে কেন পরিচয়পত্র দেখাব আমরা? দিল্লি যেতে দিলে তবেই পরিচয়পত্র দেখাব।" পুলিশ যে তালিকা নিয়ে হাজির হয়, তাতে আন্দোলনকারী কারও নাম ছিল না বলেও দাবি করেন কৃষকরা।
পঞ্জাবের কৃষক নেতা সারওয়ান সিংহ পান্ধের গতকালই জানান, সরকারের তরফে আলোচনার কোনও প্রস্তাব আসেনি তাঁদের কাছে। এমন পরিস্থিতিতে দিল্লি যাওয়া ছাড়া অন্য রাস্তা নেই বলে জানান তিনি। কৃষকদের দিল্লি অভিযান রুখতে পুলিশের তরফেও প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয় আগে থেকেই। শম্ভু সীমানায় ব্যারিকেড বসানোর পাশাপাশি, রাস্তার অনেকটা জায়গা জুড়ে পেরেক পোঁতা হয়। চোখে পড়ে কাঁটাতারের বেড়াও। সীমানা অঞ্চলে জারি করা হয় ১৬৩ ধারা (পূর্বতন ১৪৪ ধারা)। পাঁচ জনের বেশি জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়।
একাধিক দাবি নিয়ে নতুন করে আন্দোলনে নেমেছেন কৃষকরা, যার মধ্যে রয়েছে ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য,কৃষিঋণ মকুব, পেনশন এবং বিদ্যুতের দাম না বৃদ্ধি করা। ২০২১ সালে লখিমপুর খেরিতে হিংসার শিকারদের জন্য ন্যায্য বিচার চাওয়ার পাশাপাশি, কৃষকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা তুলে নেওয়ার দাবিও তুলেছেন কৃষকরা। দাবি তুলেছেন ২০১৩ সালের জমি অধিগ্রহণ আইন ফিরিয়ে আনারও।
এর আগে, শুক্রবারও দিল্লি অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন কৃষকরা। সেবারও পুলিশের বাধায় রাজধানী পৌঁছনো হয়নি তাঁদের। পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ, কাঁদানে গ্যাসে বেশ কয়েক জন আহতও হন। একজনের শ্রবণশক্তিও চলে গিয়েছে বলে জানা যায়। কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েত, যিনি ভারতীয় কিসান ইউনিয়নের সর্বভারতীয় মুখপাত্র, তিনি কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিয়েছেন। সরকারকে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।