কলকাতা: কলেজের সেকেন্ড ইয়ারে ড্রপ আউট থেকে টাটা, বিড়লা এমনকি, আম্বানিদেরও টপকে বিশ্বের সেরা ধনী তালিকায় উঠে আসা (Gautam Adani)। ব্য়বসায় গৌতম আদানির এই চমকপ্রদ উত্থানের অনেকটাই, নরেন্দ্র মোদি গুজরাতের মুখ্য়মন্ত্রী এবং তারপর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর (Narendra Modi)। কিন্তু, মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট প্রকাশের পর, সেই আদানির সাম্রাজ্য়ই টলমল করছে। হুড়মুড়িয়ে ধস নেমেছে শেয়ারে।


হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট প্রকাশের পর আদানির সাম্রাজ্য়ই টলমল করছে


২৬/১১-র মুম্বই হামলা চলাকালীন তাজ হোটেলে আটকে পড়েও, যাঁরা প্রাণে বেঁচেছিলেন, চোখের সামনে জঙ্গিদের গুলিতে মানুষ মরতে দেখেও যাঁরা শেষমেশ অক্ষত অবস্থায় ফিরেছিলেন, তাঁদের মধ্য়ে একটি নাম নিয়েই এখন গোটা দেশে তোলপাড়। তিনি আর কেউ নন, গৌতম আদানি। 


দ্বিতীয় বর্ষে পাঠরত অবস্থায় কলেজ জীবনে ইতি টানেন আদানি। হিরের ব্য়বসা দিয়ে বাণিজ্য়ে পা রাখা। তারপর দাদার প্লাস্টিকের ব্য়বসায় হাত পাকানো। সেখান থেকে হঠাৎই রকেট গতিতে বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তিদের মধ্যে একজন হয়ে ওঠা। তা-ও আবার মুকেশ আম্বানিকে ছাড়িয়ে।

দেশের প্রায় সর্বশক্তিমান ব্য়বসায়ী হয়ে উঠেছিলেন আদানি। কিন্তু  মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট সামনে আসার পরই সেই আদানির ব্য়বসায় কার্যত টলমল করছে। তাঁকে নিয়ে উত্তাল গোটা দেশ।  অথচ নরেন্দ্র মোদি গুজরাতে ক্ষমতায় আসার আগে অবধি, গৌতম আদানির নাম ভারতীয় শিল্পমহলের প্রথম সারিতে কার্যত শোনাই যেত না।

২০০১ সালে নরেন্দ্র মোদি যখন গুজরাতের মুখ্য়মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন, সেই সময় বিশ্বের ধনীর তালিকা তো দূরের কথা, আদানি গোষ্ঠীর একমাত্র লিস্টেড সংস্থা, আদানি এন্টারপ্রাইসেস লিমিটেডের বাজারদর মুকেশ আম্বানির সংস্থার ৫০০ ভাগের একভাগ ছিল। কিন্তু তার পরই একটি ঘটনা সব বদলে দেয়।


২০০২ সালে গুজরাত হিংসার পর, শিল্পপতিদের একাংশের সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন গুজরাতের তৎকালীন মুখ্য়মন্ত্রী মোদি। ২০০৩ সালে CII'এর একটি সভায় সরাসরি মোদির সমালোচনা করেছিলেন শিল্পপতি রাহুল বাজাজ। সেদিন মোদির পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন  তৎকালীন উঠতি শিল্পপতি আদানি।

গুজরাতের আরও কয়েক জন শিল্পপতিকে নিয়ে আদানি রিসার্জেন্ট গুজরাত গ্রুপ তৈরি করেন। CII-কে কার্যত তুলোধনা করেন, যার জেরে CII ক্ষমা চাইত বাধ্য় হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এর পর থেকেই শুরু হয় মোদি-আদান গভীর সম্পর্ক। আর সেইসঙ্গে আদানির ভাগ্য়ের চাকা ঘুরতে শুরু করে।

২০০০ সালে আদানি গোষ্ঠীর ব্য়বসার অঙ্ক ছিল ৩ হাজার ৩০০ কোটির। কিন্তু ২০১৩ সালে হঠাৎই সেটা বেড়ে হয় ৪৭ হাজার কোটি। বিরোধীদের দাবি, আদানির বিমানে চড়েই লোকসভা ভোটের প্রচার সেরেছিলেন মোদি। এমনকি, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি যে বিমানে গুজরাত থেকে দিল্লি এসেছিলেন, সেটিও আদানিরই ছিল।


আরও পড়ুন: Adani Group Crisis: অকাতরে ঋণদান আদানিদের! বিশেষ নির্দেশেই কি! কী করছিল SEBI, উঠছে প্রশ্ন

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মোদির সঙ্গে বিভিন্ন দেশে দেখা গেছে আদানিকে। আর সেখানে একের পর এক চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে লাফিয়ে বেড়েছে তাঁর সম্পত্তি।এরকমই এক সফরে আদানির সংস্থাকে ১ বিলিয়ন ডলারের ঋণ দিয়েছিল স্টেট ব্য়াঙ্ক অফ ইন্ডিয়া।

২০১৩ সালে গৌতম আদানির সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩-এ সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লক্ষ ২৭ হাজার কোটি টাকা। অর্থনীতিবীদ সৈকত সিংহ রায় বলেন, "আদানির সঙ্গে মোদিরর গুজরাত থেকে আলাপ। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সেই সুযোগে সম্পর্ক দৃঢ়। কলেজ ড্রপ আউট। বাঁকা পথ ভাল বোঝে।"

গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়ে সবাইকে টপকে বিশ্বের তৃতীয়, এমনকf কিছুদিনের জন্য় দ্বিতীয় ধনীর জায়গাও নিয়ে নেন আদানি। কিন্তু, হিন্ডেনবার্গের চাঞ্চল্য়কর রিপোর্ট সামনে আসার পরই আদানির সংস্থার শেয়ারে ধস নেমেছে। ব্লুমবার্গের তথ্য় অনুযায়ী, ১৭ জানুয়ারি আদানি গোষ্ঠীর মোট সম্পত্তি ছিল ১০ লক্ষ কোটি। বিশ্বের ধনীদের তালিকায় গৌতম আদানির স্থান ছিল তৃতীয়। কিন্তু হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টের পর ৩ ফেব্রুয়ারি তিনি নেমে এসেছেন ২১ নম্বরে। সম্পত্তির পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৫ লক্ষ ৪ হাজার কোটি টাকা। হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্টের পর থেকে শেয়ার বাজারে প্রায় ১০ লক্ষ কোটি টাকা খুইয়েছে আদানি গ্রুপ। সেইসঙ্গে মার্কিন বাজারের ডাও জোন্স সূচক থেকে আদানি এন্টারপ্রাইজের নথিভুক্তি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।


আদানির সংস্থার শেয়ারে ধস নেমেছে

শোনা যায়, ১৯৯৭ সালে বন্দুক ঠেকিয়ে, আদানিকে অপহরণ করেছিল দুষ্কৃতীরা। কিন্তু তার পরও সাহসে ভর করে রক্ষা পেয়েছিলেন তিনি। এবার কি শেয়ার বাজারের এই বিপর্যয় থেকে সংস্থাকে রক্ষা করতে পারবেন তিনি? উত্তর দেবে সময়।