বেঙ্গালুরু: বিএস ইয়েদুরাপ্পা কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রীর পর থেকে পদত্যাগ করার পর কে হতে পারেন সেরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী? গোটা কর্ণাটক তো বটেই, বলা ভাল গোটা দেশ এখন ভাবছে সেই কথাই। 


কর্ণাটকের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন, সেই বিষয়ে  চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বিজেপির কেন্দ্রীয় কমিটিই। কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী বিএস ইয়েদুরাপ্পা একজন লিঙ্গায়েত। আর এই সম্প্রদায়ের মানুষ উত্তর কর্ণাটক এবং মধ্য কর্ণাটকে বেশি। 


বর্তমান কর্ণাটকের প্রায় ২০ শতাংশ মানুষই লিঙ্গায়েত সম্প্রদায়ের। বর্তমানে কর্ণাটকের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন, এমন সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছেন সাতজন। 


১) মুর্গেশ নিরানি - মুর্গেশ নিরানির বয়স এখন প্রায় ৫৬ বছর। ইয়েদুরাপ্পার পর তাঁর কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী পদে বসার একটা সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বর্তমান কর্ণাটক সরকারের ভূতত্ত্ব এবং খনি মন্ত্রীও বটে। মুর্গেশ নিরানি পঞ্চমশালী অঞ্চলের মানুষ। যে অঞ্চল আবার লিঙ্গায়েত অধ্যুষিত অঞ্চল বলেই পরিচিত। তিনি তিনবারের বিধায়কও বটে। দেখার পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর কথা বিবেচনা করা হয় কিনা।


২) অরবিন্দ বেল্লাদ - অরবিন্দ বেল্লাদ দু'বারের বিধায়ক। পাশাপাশি তিনি একেবারে রাজনৈতিক পরিবার থেকে এসেছেন। কর্ণাটকের তরুণ নেতাদের মধ্য অন্যতম। চন্দ্রকান্ত বেল্লাদ তাঁর বাবা। চন্দ্রকান্ত বেল্লাদ দীর্ঘদিনের আরএসএস কর্মী এবং বিজেপি নেতা। অরবিন্দ বেল্লাদ মেধাবী মানুষ। তিনি এসডিএম কলেজ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছেন। ৫১ বছর বয়সী অরবিন্দ বেল্লাদও কিন্তু পঞ্চমশালী অঞ্চলের বাসিন্দা এবং লিঙ্গায়েত সম্প্রদায়ের মানুষ। তাই তাঁকেও পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ। অনভিজ্ঞতা ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে যাওয়ার মতো তেমন কোনও কারণ নেই।


৩) বাসবরাজ বোম্মাই - কর্ণাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই। ৬১ বছর বয়সী বাসবরাজের রাজনৈতিক রসায়ন ইয়েদুরাপ্পার সঙ্গে বেশ ভাল। তিনিও একজন লিঙ্গায়েত সম্প্রদায়ের মানুষ। তার থেকেও বড় কথা বাসবরাজ বোম্মাইয়ের বাবা এসআর বোম্মাই কর্ণাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীও বটে। যদিও এসআর বোম্মাই তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শুরুর দিকে জনতা দল করতেন। ২০০৮ সালে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আগে বোম্মাই জনতা দলের সিনিয়র নেতা দেবগৌড়া এবং রামকৃষ্ণ হেগড়ের সঙ্গেও কাজ করেছেন।


৪) সিএন অশ্বথ নারায়ণ - কর্ণাটকের উপ-মুখ্যমন্ত্রী সিএন অশ্বথ নারায়ণ পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে থাকবেন সেটাই স্বাভাবিক। বিশেষ করে তিনি যখন উপ-মুখ্যমন্ত্রীর পদ সামলাচ্ছেনই। ৫২ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ যদিও লিঙ্গায়েত গোষ্ঠীর নন। তিনি ভোক্কালিগা সম্প্রদায়ের মানুষ। আর পেশায় একজন চিকিৎসক। ২০০৮ সাল থেকে তিনি বেঙ্গালুরুর মালশ্বরম কেন্দ্রের বিধায়ক। কর্ণাটকের রাজনীতিতে তাঁর ভাবমূর্তি যথেষ্ট স্বচ্ছ।


৫) সিটি রবি - বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক পদে রয়েছেন। ৫৪ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ আগে ইয়েদুরাপ্পার মন্ত্রিসভার সদস্যও ছিলেন। পরে কেন্দ্রীয় বিজেপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন।  তিনিও কিন্তু সিএন অশ্বথ নারায়ণের মতো ভোক্কালিগা সম্প্রদায়ের মানুষ। রবি চারবারের বিধায়ক চিকমাগালুরু কেন্দ্র থেকে। যদিও তিনি বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে থাকতেই বেশি পছন্দ করেন। সংঘ পরিবারের অত্যন্ত কাছের নেতাও তিনি। হিন্দুত্ববাদী ভাবমূর্তি রয়েছে তাঁর। লিঙ্গায়েত ছাড়া অন্য কোনও সম্প্রদায়ের মানুষ কর্ণাটকের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হলে রবি নিশ্চয়ই এগিয়ে থাকবেন।


৬) প্রহ্লাদ জোশি - কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব সামলাচ্ছেন। এবার তাঁর সামনে খুলে যেতে পারে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দরজাও। ধারওয়াদ কেন্দ্র থেকে প্রহ্লাদ চারবার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। উত্তর কর্ণাটকের ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান। আরএসএস এবং বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব তথা নরেন্দ্র মোদিরও অত্যন্ত কাছের মানুষ তিনি। ২০১৩ সালে ইয়েদুরাপ্পা কর্নাটক জনতা পার্টি তরির পর প্রহ্লাদ জোশিই কর্ণাটকে দলের হাল ধরেছিলেন। একজন দক্ষ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসেবেই রাজনৈতিক মহলে তিনি পরিচিত। শুধু তাঁর বিরুদ্ধে যাচ্ছে একটাই পয়েন্ট। তা হল, ১৯৮৮ সালের পর থেকে কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রীর পদে কোনও ব্রাহ্মণ সন্তান বসেননি।


৭) বিএল সন্তোষ - বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদকের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। সংঘ পরিবারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবেই তিনি কাজ করেছেন। উড়ুপির মানুষ। ব্রাহ্মণও বটে। পড়াশোনায় ভাল ছিলেন। ইঞ্জিনিয়ারিং করেছেন। ইয়েদুরাপ্পার কাছাকাছিই থাকেন। অনেক বড় কাজ করেও চিরকাল রাজনীতির আঙিনায় নিজেকে লো প্রোফাইলে রেখেছেন। তবে, সংঘ পরিবার চাইলে সন্তোষও হতে পারেন কর্ণাটকের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী।