নয়াদিল্লি: সোনার দামে ওঠানামা যদিও লেগেই রয়েছে। কিন্তু ভারতীয়দের মধ্যে সোনার চাহিদা কমেছে। পরিসংখ্যান অন্তত তেমনই জানান দিচ্ছে। চলতি অর্থবর্ষের এপ্রিল থেকে জুন ত্রৈমাসিকে সোনার চাহিদা কমে ১৫৮.১ টনে গিয়ে পৌঁছেছে (Gold Demand in India)। গত বছর প্রথম এই একই সময়ে ভারতে সোনার চাহিদা ছিল ১৭০.৭ টন। শুধু সোনার গহনার চাহিদাই কমেনি, সোনায় বিনিয়োগের প্রতিও মানুষের মধ্য অনীহা তৈরি হয়েছে বলে মত বাজার বিশেষজ্ঞদের। কারণ রিজার্ভ ব্য়াঙ্ক অফ ইন্ডিয়া এবং কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক থেকেও সোনার ক্রয় কমেছে। (Gold Demand)


ওয়র্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তরফে এই পরিসংখ্য়ান প্রকাশ করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায়, এ বছর এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে সোনার চাহিদা ৭ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছে তারা। বলা হয়েছে, গত বছর এই সময় যে পরিমাণ সোনার চাহিদা ছিল ভারতে, তার বাজারমূল্য ছিল ৮২ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। কিন্তু এ বছর তা কমে ৭৯ হাজার ২৭০ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।


সোনার গহনার নিরিখে হিসেব করলে, এবছর এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত চাহিদায় ৮ শতাংশ পতন দেখা গিয়েছে। গত বছর যেখানে সোনার গহনার চাহিদা ছিল ১৪০.৩ টন, এবছর তা কমে ১২৮.৬ টন হয়েছে। তবে সোনার দামে ওঠা পড়া লেগেই রয়েছে। যে কারণে গত বছর সোনার গহনার যে চাহিদা ছিল, তার মোট বাজারমূল্য ছিল ৬৫ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। এ বছর তা ৬৭ হাজার ১২০ কোটিতে রয়েছে।


আরও পড়ুন: Gold Price Today : মঙ্গলে সোনা কিনে লক্ষ্মীকে বেঁধে রাখুন ঘরে, জেনে নিন বাংলায় কত আজ দাম


বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সোনাকে ভরসা করেন অনেকে। বিনিয়োগের জন্য সোনাকে নিরাপদ বলেও ধরা হয়। কিন্তু এবছর এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত ২৯.৫ টন সোনায় বিনিয়োগ হয়েছে। সেই তুলনায় গতবছক ৩০.৪ টন সোনায় বিনিয়োগ হয়। বাজারমূল্য ধরলে গত বছর মোট ১৪ হাজার ১৪০ কোটি টাকার বিনিয়োগ হয় সোনায়, এ বছর ১৫ হাজার ৪১০ কোটির। সোনার দাম বৃদ্ধি হওয়ার কারণেই এই ফারাক।


কিন্তু সোনার চাহিদা কমে যাওয়ার কারণ কী?  ওয়র্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের ভারতীয় শাখার সিইও আধিকারিক সোমসুন্দরম পিআর জানিয়েছেন, সোনার দাম উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়াতেই সোনা কেনা থেকে বিরত এক শ্রেণির মানুষ। গত অর্থবর্ষে এই সময় যেখানে ৪৬,৪৩০ টাকা ভরি ছিল সোনার, এবছর তা ৬০ হাজার টাকা ভরি হওয়ার মুখে। তাতেই একশ্রেণির মানুষ পিছু হটেছেন বলে মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।


২ হাজার টাকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্তও কি কোনও ভাবে কাজ করছে সোনার চাহিদা কমে যাওয়ার নেপথ্যে? কিছুটা হলেও প্রভাব রয়েছে বলে মনে করছেন সোমসুন্দরম। তাঁর মতে, ২০০০ টাকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত কিছুটা হলেও সোনা বিক্রিতে প্রভাব ফেলেছে। ২০১৬ সালে নোটবন্দির সময় সোনা কেনার হিড়িক দেখা গিয়েছিল। কিন্তু এবার সোনা কেনার দিকে ঝুঁকতে দেখায়নি বড় অংশের মানুষকে। 


এপ্রিল থেকে জুন মাসে ১০ টন সোনা কিনেছে রিজার্ভ ব্য়াঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। সেই তুলনায় গত বছর ১৫ টন সোনা কেনা হয়েছিল। জুন মাসের শেষ পর্যন্ত রিজার্ভ ব্য়াঙ্কের ভাঁড়াড়ে ৭৯৭.৪ টন সোনা সঞ্চিত রয়েছে। এমনিতে সোনার চাহিদার নিরিখে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। কিন্তু সোনার চাহিদায় লাগাতার পতন চোখে পড়ছে। তবে দুর্গাপুজো, দীপাবলি এবং ধনতেরাসের সময় বিক্রি বাড়বে বলে আশাবাদী ব্যবসায়ীরা।