ঝিলম করঞ্জাই, কলকাতা: মাস তিনেক আগে দাম বেড়েছে প্রায় ৮০০ জীবনদায়ী ওষুধের। এ বার হাসপাতালে রোগীভর্তির খরচও বাড়তে চলেছে। কারণ হাসপাতালের শয্যাভাড়া থেকে ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান্টের উপর পণ্য ও পরিষেবা কর (Goods and Services Tax) বসানোর সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্র। গত সপ্তাহে জিএসটি কাউন্সিলের (GST Council) বৈঠকে এমনই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।  ফলে চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের কাঁধে বাড়তি খরচের বোঝা চাপল। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট চিকিৎসক মহলও।


হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবার উপরও জিএসটি


জিএসটি কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ বার থেকে ICU বাদে হাসপাতালের শয্যা ভাড়া দৈনিক ৫ হাজার টাকার বেশি হলে, তার উপর ৫ শতাংশ হারে জিএসটি (GST) চাপবে। হাসপাতালে ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান্ট বসালে, দিতে হবে ১২ শতাংশ জিএসটি। রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধিতে জেরবার সাধারণ মানুষ। উদ্বেগজনক জায়গায় রয়েছে বেকারত্ব। সাধারণ মানুষের হাতে নগদের জোগান কমেছে বলেও উঠে এসেছে রিপোর্ট। এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতালের পরিষেবার উপরও জিএসটি বসল। 


গত সপ্তাহের বুধবার, অর্থাৎ  গত ২৯ জুন বুধবার চণ্ডীগড়ে ৪৭তম জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠক বসে। সেখানেই ৫ হাজার টাকার বেশি ভাড়াযুক্ত হাসপাতালের শয্যার ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ হারে জিএসটি ধার্য করা হয়।  ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান্টের ক্ষেত্রে ১২ শতাংশ হারে জিএসটি দিতে হবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। তবে স্বাস্থ্য বিমার উপর ১৮ শতাংশ জিএসটির হার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। ফলে পরিষেবা বাবদ ফি বাড়িয়ে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীদের কাছ থেকেই করের টাকা আদায় করবেন বলে আশঙ্কা চিকিৎসক মহলের। 


আরও পড়ুন: Viral News: করোনাকালে ক্লাসবিমুখ পড়ুয়ারা, প্রায় তিন বছরের বেতন ফেরালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক


বিশিষ্ট চিকিৎসক কুণাল সরকার এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, "এই ভাবে ৫ শতাংশ ট্যাক্স, এতে একটাই ব্যাপার। যা ট্যাক্স বসানো হবে, হাসপাতাল নিজে দেবে না। এটা রোগীদের কাছ থেকেই আদায় করবে। ফলে চিকিৎসার খরচ বাড়বে। কোভিডে হাসপাতালের পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। এখন এসব চাপালে রোগীদের পাশাপাশি হাসপাতাল যাঁরা চালাচ্ছেন, তাঁদের উপরও চাপ পড়বে। এই ৫ শতাংশ ,১২ শতাংশের জিএসটি অবশ্যই বিবেচনা করে দেখা উচিত।"


ঘুরেফিরে সাধারণ মানুষের ঘাড়েই খরচের বোঝা


অ্যাসোসিয়েশন অফ হসপিটালস অফ ইসটার্ন ইন্ডিয়ার সভাপতি রূপক বড়ুয়া বলেন, "বেডের উপর কর হাসপাতাল দেবে না। রোগীদের উপর চাপবে। চার্জ বাড়বে। কম মনে হলেও, শেষে গিয়ে অনেকটা টাকা বেড়ে যাবে। বায়ো মেডিক্যাল ওয়েস্ট প্ল্যান্ট বসাতে পারে। এখানে ১২ শতাংশ জিএসটি বসানো হলে, সেই খরচের ভারও রোগীদের উপরই গিয়ে পড়বে।"


অর্থাৎ সব মিলিয়ে চাপ বাড়ছে সেই সাধারণের ওপরেই। কিন্তু ৫ শতাংশ জিএসটি আহামরি কিছু নয় বলে মত রাজস্ব সচিব তরুণ বজাজের। তাঁর মতে ছোট শহরগুলিতে ৫ হাজার টাকা শয্যাভাড়ার হাসপাতাল আদৌ রয়েছে কিনা, সন্দেহ রয়েছে। গোটা দেশে ৫ হাজার টাকার শয্যা রয়েছে, এমন হাসপাতালের সংখ্যা খুব বেশি নয়, আর থাকলেও সেখানে এত বেশি ভাড়াযুক্ত শয্যার সংখ্যা হাতেগোনা বলে দাবি তাঁর। তাঁর কথায়, "যাঁরা ৫ হাজার টাকার শয্যা বুক করতে পারেন, জিএসটি বাবদ ২৫০ টাকা বাড়তি দেওয়া তাঁদের পক্ষে কোনও ব্যাপার নয়।" এই জিএসটি থেকে প্রাপ্ত অর্থ দরিদ্র মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করা হবে বলে জানান তিনি।