নয়াদিল্লি: আদালতের নির্দেশে জ্ঞানব্যাপী মসজিদের ভিতরে ভিডিওগ্রাফি করা হয়েছিল। সূত্রের খবর, সেখানেই নাকি দেখা গিয়েছিল যে মসজিদ চত্বরের ভিতরে একটি কিছু রয়েছে, যেটিকে শিবলিঙ্গ বলে দাবি করা হয়েছিল। তারপরেই মামলাকারী হিন্দু সংগঠনের তরফে ওই 'শিবলিঙ্গ'-এর কার্বন ডেটিংয়ের দাবি জানিয়ে আদালতে মামলা করা হয়। বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের আবেদনও জানানো হয়। শুক্রবার সেই দাবি খারিজ করে দিয়েছে বারাণসী আদালত।
হিন্দু মামলাকারীদের তরফে দাবি করা হয়েছিল, মসজিদ চত্বরের ভিতরে শিবলিঙ্গ পাওয়া গিয়েছে। পাল্টা মুসলিম মামলাকারীদের দাবি, সেটি আসলে এটি ফোয়ারার অংশ। এরপরে ২২ সেপ্টেম্বর হিন্দু মামলাকারীদের তরফে 'শিবলিঙ্গ'-এর কার্বন ডেটিংয়ের দাবি জানানো হয়।
কার্বন ডেটিং কী?
কোনও পুরাতাত্ত্বিক সামগ্রীর বয়স নির্ধারণের জন্য কার্বন ডেটিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
কার্বন ডেটিংয়ের বিরোধিতা যাঁরা করছেন, তাঁদের তরফে আখলাখ আহমেদের দাবি, কার্বন ডেটিংয়ের দাবি অন্যায্য কারণ এটি সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পরিপন্থী। দেশের শীর্ষ আদালত, ওই বিষয়টিকে রক্ষা করতে বলেছেন। তাই সেটিকে নিয়ে পরীক্ষা করা যাবে না।
বহু পুরনো মামলা:
১৯৯১ সালে এই জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে একটি মামলা হয় বারাণসী আদালতে। সেখানে দাবি করা হয়েছিল ঔরঙ্গজেবের নির্দেশে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের একটি অংশ ভেঙে এই মসজিদ তৈরি করা হয়। জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্বরে পুজোর অনুমতি চেয়ে মামলা করা হয়েছিল। মামলকারীর তরফে ASI সমীক্ষার দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু ২০১৯ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্টের নির্দেশে তার উপর স্থগিতাদেশ জারি হয়েছিল।
তারপরে এবার ওই মসজিদ চত্বরে শ্রীঙ্গার গৌরির পুজোপাঠের দাবি করে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন পাঁচ মহিলা। তা নিয়েই এখন চলছে তরজা। এই বিবাদ কয়েক দশকের পুরনো। একবার দেখে নেওয়া যাক এর ইতিহাস।
১৯৯৮: আঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ কমিটি তরফে এলাহাবাদ হাইকোর্টে যাওয়া হয়েছিল। তাদের আবেদন ছিল, আইন অনুযায়ী মন্দির-মসজিদ সংক্রান্ত এই বিবাদ কোনও সিভিল কোর্ট বা দেওয়ানি আদালত বিচার করতে পারে না। সেই মামলায় হাইকোর্ট এই বিচারপ্রক্রিয়ার উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। যা ২২ বছর ধরে চলেছে।
২০১৯: ফের উঠে আসে এই মামলা। স্বয়ম্ভু জ্যোতির্লিঙ্গ ভগবান বিশ্বেশ্বরের তরফে বারাণসী আদালতে একটি মামলা হয়। সেখানে যিনি আবেদনকারী, তিনি মসজিদ চত্বরে ASI-কে দিয়ে একটি সমীক্ষা করার দাবি জানান।
২০২০: ASI-কে দিয়ে জ্ঞানব্যাপী মসজিদ চত্বরে সমীক্ষা করানোর আবেদনের বিরোধিতা করে আঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ কমিটির তরফে একটি পিটিশন দায়ের করা হয়।
২০২০: আবেদনকারী ফের নিম্ন আদালতের শরণাপন্ন হন। ১৯৯১ সালের ওই মামলার শুনানি শুরু করার দাবি জানান।
আগস্ট ২০২১: পাঁচজন হিন্দু মহিলা বারাণসী আদালতে একটি পিটিশন দাখিল করেন। জ্ঞানব্যাপী মসজিদ চত্বরে হনুমান, নন্দী এবং শ্রীঙ্গার গৌরিকে পুজো দেওয়ার আবেদন জানানো হয়।
সেপ্টেম্বর, ২০২১: এলাহাবাদ হাইকোর্ট জানায় যে এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই চলা মামলাগুলিতে আদালতের আরও রায়ের জন্য অপেক্ষা করা উচিত।
এপ্রিল, ২০২২: ২০২১ সালের আগস্টে করা মামলার ভিত্তিতে বারাণসী আদালত একজন কোর্ট কমিশনারকে নিয়োগ করে, মসজিদ চত্বরে সমীক্ষা করার নির্দেশও দেয়। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এলাহাবাদ হাইকোর্টে যায় আঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ কমিটি। পাশাপাশি মসজিদ কমিটির তরফে সুপ্রিম কোর্টে একটি স্পেশাল লিভ পিটিশন দাখিল করা হয়।
৬ মে, ২০২২: জ্ঞানব্যাপী মসজিদ চত্বরে ভিডিওগ্রাফি সমীক্ষা শুরু হয়।
১২ মে, ২০২২: আদালতের তরফে বরিষ্ঠ আইনজীবী বিশাল সিংহকে সমীক্ষা দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাকে স্পেশাল কোর্ট কমিশনার হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। ১৭ মে-এর মধ্যে সেই রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়।
১৪-১৯ মে, ২০২২: ফের শুরু হয় সমীক্ষা। ২দিন ধরে চলে। সমীক্ষার সব রিপোর্ট আদালতের কাছে জমা দেওয়া হয়।
২০ মে, ২০২২: সুপ্রিম কোর্টের তরফে গোটা বিচারপ্রক্রিয়া জেলা আদালতের বিচারকের কাছে পাঠানো হয়।
২৬ মে, ২০২২: আবেদন গ্রাহ্য কিনা তা নিয়ে শুনানি শুরু হয় জেলা আদালতে।
১১ জুলাই, ২০২২: জ্ঞানব্যাপী মামলায় যাঁরা হিন্দু আবেদনকারী, তাঁরা নতুন একটি ট্রাস্ট তৈরি করেন। নাম শ্রী আদিমহাদেহ কাশী ধর্মালয় মুক্তি ন্যাস (Shri AdiMahadev Kashi Dharmalaya Mukti Nyas)
১৮ জুলাই, ২০২২: জ্ঞানব্য়াপী মসজিদ চত্বরে 'পূজা', 'দর্শন', ASI-কে দিয়ে গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং রাডার সার্ভে (ground penetrating radar survey) এবং কার্বন ডেটিং পরীক্ষার একটি আবেদন তালিকাভুক্ত করতে সম্মতি জানায় সুপ্রিম কোর্ট। আদালত-নির্দেশিত সমীক্ষার পর দাবি করা হয়েছিল মসজিদ চত্বরে একটি শিবলিঙ্গের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে, যেটির কার্বন ডেটিং পরীক্ষা করার আবেদন করা হয়েছিল।