নয়াদিল্লি : হিজাব বিতর্ক কি থামল ? উত্তরটা এখনও পর্যন্ত না। কর্ণাটক হাই কোর্টের নির্দেশের বিরুদ্ধে এবার সুপ্রিম কোর্টে দাখিল হল আবেদন। দেশের সর্বোচ্চ আদালতে দরবারে জমা পড়ল নতুন আবেদন। মঙ্গলবার সকালেই বহু চর্চিত ও বিতর্কিত হিজাব মামলার রায় দিয়েছে কর্ণাটক হাইকোর্ট। যেখানে আদালতের পক্ষে সমস্ত আবেদন খারিজ করে দিয়ে জানানো হয়েছে, ইসলাম ধর্মপালনের সঙ্গে হিজাব পরা অঙ্গঙ্গীভাবে জড়িত নয়। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনও নির্দিষ্ট পোশাক বিধি বেঁধে দেওয়ার ক্ষেত্রে তা ব্যক্তিগত পরিসরে ঢুকে পড়া হয় না।


যদিও হিজাব পরার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে যে আবেদনগুলি জমা পড়েছিল, তাও খারিজ করে দেওয়া হয়েছে কর্ণাটক হাইকোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চের পক্ষে। সন্ধের দিকে এক মুসলমান ছাত্রের পক্ষ থেকে কর্ণাটক হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন দাখিল করা হয়েছে।






এর আগে গত মাসে কর্ণাটক হাইকোর্ট সাময়িকভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব, গেরুয়া স্কার্ফ সহ যাবতীয় ধর্মীয় প্রতীক বহনকারী পোশাক নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল। এদিন আদালতের এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে যাতে কোনওরকম অশান্তি বা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সেটা নিশ্চিত করার জন্য আজ থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত বিক্ষোভ ও বিজয় মিছিলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বেঙ্গালুরু পুলিশ।  এ প্রসঙ্গে বেঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনার কমল পন্থ জানিয়েছেন, ‘১৫ মার্চ থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত এক সপ্তাহ বেঙ্গালুরুতে সবরকম জমায়েত, বিক্ষোভ, প্রতিবাদ বা আদালতের রায় উদযাপন করা যাবে না।’


পড়ুন কর্ণাটক হাইকোর্টের রায়- ‘ইসলামে বাধ্যতামূলক নয়’, কর্ণাটকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে আর্জি খারিজ হাইকোর্টের


গত জানুয়ারি মাসে হিজাব ঘিরে বিতর্ক চরমে ওঠে। উদুপির গভর্নমেন্ট গার্লস পিইউ কলেজে হিজাব পরিহিত ছয় মেয়েকে কলেজে ঢুকতে না  দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। দক্ষিণপন্থী সংগঠনের তরফে এই দাবি ওঠে বলে অভিযোগ করেন হেনস্থার শিকার ওই মেয়েরা। ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে নতুন করে সেই বিতর্কের আগুনে ঘি পড়ে। উদুপি এবং চিকমাগালুরুর দক্ষিণপন্থী সংগঠনগুলি মুসলিম মেয়েদের হিজাব পরে স্কুল-কলেজে ঢোকায় আপত্তি তোলে। বিবাদ এতটাই চরমে পৌঁছয় যে, মুসলিম মেয়েদের হিজাবের পাল্টা গেরুয়া ওড়না পরে কলেজে আসতে দেখা যায় পড়ুয়াদের একাংশকে। বিক্ষোভ হিংসাত্মক আকার ধারণ করে সেখানে। বিক্ষোৎভকারী পড়ুয়াদের টপকে কলেজের ফটকে গেরুয়া পতাকা টাঙিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। সেই নিয়ে বচসা থেকে পরস্পরকে লক্ষ্য করে চলে পাথর ছোড়াছুড়ি।


অন্য দিকে, মাণ্ড্যর একটি কলেজে একটি মুসলিম মেয়েক ঘিরে  গেরুয়া পরিহিত যুবকদের ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি তোলার ভিডিও উঠে আসে নেটমাধ্যমে। পাল্টা ওই তরুণীকে ‘আল্লাহ্ হু আকবর’ বলতে শোনা গিয়েছে। যা হয়ে ওঠে ভাইরাল। একাধিক রাজনীতিবিদ থেকে সেলিব্রিটি এই বিষয়ে মুখ খোলেন। কর্ণাটক হাইকোর্টের রায়ের পর বিতর্ক থামবে বলে মনে করা হলেও, তা থামার কোনও লক্ষ্মণ এখনও পাওয়া যায়নি।