কলকাতা : রঙের উৎসব (Festival of Colour)। বন্ধু-বান্ধব, পরিবার ও প্রতিবেশীর একে অপরকে রং-বেরঙের আবিরে রাঙিয়ে দেওয়ার দিন। যার সঙ্গে জুড়ে রয়েছে শান্তি (Peace) ও সম্প্রীতির বার্তা। শ্রীকৃষ্ণ (ভগবান বিষ্ণুর নবম অবতার) ও রাধার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে এই রঙের উৎসব। হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, চৈত্রর প্রতিপদ তিথি, কৃষ্ণপক্ষ অথবা ফাল্গুন কৃষ্ণ পক্ষের প্রতিপদ তিথিতে হোলি (Holi) পালিত হয়। যদিও ভারতের কিছু অংশে ফাল্গুন পূর্ণিমা তিথিতে দিনটি উদযাপন করা হয়। রঙের এই উৎসবের আগে দেখে নেওয়া যাক, ভারতের কোথায় কীভাবে পালিত হয় হোলি ...


১. লাঠমার হোলি (উত্তরপ্রদেশ)-


পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, হোলি ভারতের বারসানা অঞ্চলে শুরু হয়েছিল। যার মধ্যে রয়েছে বৃন্দাবন, মথুরা, নন্দগাঁও এবং বারসানা। মজার বিষয় হল, এখানে এই উৎসব শুধু রং নয়, লাঠি দিয়ে পালিত হয়। প্রথা অনুযায়ী, মহিলারা লাঠি নিয়ে পুরুষদের তাড়ায়। তবে, লাঠিপেটার কোনও বিষয় নেই। এটা আনন্দ উদযাপনের একটা উপায়মাত্র এবং পুরুষরাও সেভাবেই প্রস্তুত হয়ে আসে।


২. খাদি হোলি (কুমায়ুন অঞ্চল, উত্তরাখণ্ড)-


খাদি হোলি কুমায়ুন অঞ্চলে খেলা হয়। যার মধ্যে প্রধানত উত্তরাখণ্ডের শহরগুলি রয়েছে। এই উৎসব উদযাপনের সময় স্থানীয়রা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে, খারি গান গায় এবং দলে দলে নাচ করে। পাশ দিয়ে যাওয়া লোকেদের অভিবাদন জানায়। এই অঞ্চলে, হোলি সাধারণত বৈথিকা হোলি, খাদি হোলি এবং মহিলা হোলি নামে পরিচিত বিভিন্ন সংস্করণের একটি সঙ্গীতমুখর সমাবেশ।


৩. হোলা মহল্লা (পাঞ্জাব) -


হোলা মহল্লা, যোদ্ধা হোলি নামে পরিচিত। পাঞ্জাবে পালিত হয়। নিহঙ্গ শিখরা এই উৎসব পালন করে। তারা মার্শাল আর্ট প্রদর্শন করে এবং এই দিনে মন খুলে গান গায়। যেটি সাধারণত হোলির এক দিন আগে উদযাপিত হয়।


৪. বসন্ত উৎসব ও দোল যাত্রা (পশ্চিমবঙ্গ)-


বসন্ত উৎসব বসন্ত ঋতুকে স্বাগত জানানোর একটি উপায়। এই দিনে শান্তিনিকেতনে বিশেষ অনুষ্ঠান হয়। ছেলে-মেয়েরা নাচ-গানে দিনটি উদযাপন করে। অন্যদিকে, দোল যাত্রা হল মূল হোলি উৎসবের একটি অংশ। দোল পূর্ণিমায় রাধা ও কৃষ্ণের মূর্তি নিয়ে রাস্তায় শোভাযাত্রা বের হয়। আবির ও বিভিন্ন রঙে একে অপরকে রাঙিয়ে তোলে পরিচিতরা। জল ও রং মিশিয়ে একে অপরের গায়ে স্প্রে করে।


৫. শিগমো (গোয়া)-


গোয়ায় বিশাল বসন্ত উদযাপনই হল- শিগমো। এটি হিন্দুদের অন্যতম প্রধান উৎসব। এখানে কৃষকরা ঐতিহ্যবাহী নৃত্যে সামিল হয়। এমনকী গোয়ার পর্যটকরাও এই উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠে।


আরও পড়ুন ; শীত তো যেতে বসেছে, চলতি বছর কবে পড়েছে দোল উৎসব?


৬. ইয়াওসাং (মণিপুর)-


মণিপুরে, হোলি বা ইয়াওসাং ছয় দিন ধরে পালিত হয়। এটি পূর্ণিমার দিনে শুরু হয় এবং হিন্দু ও আদিবাসী ঐতিহ্যকে একত্রিত করে। উৎসবের বিশেষত্ব হল- এই সময়ে মণিপুরী লোকনৃত্য থাবাল চোংবা পরিবেশিত হয়। এর পাশাপাশি মণিপুরের হিন্দুরা এই উৎসবে রঙ খেলে।


৭. মঞ্জল কুলি (কেরল)-


উত্তর ভারতের মতো দক্ষিণ ভারতে ততটা জনপ্রিয় নয় হোলি। তবে, কিছু সম্প্রদায় হোলি উদযাপন করে, স্বতন্ত্র ঐতিহ্যের সাথে। কেরলে হোলিকে মঞ্জল কুলি বলা হয় এবং গোসরিপুরম থিরুমালার কোঙ্কনি মন্দিরে পালিত হয়।


৮. ফাগুয়া (বিহার)-


বিহার আর হোলি কার্যত সমার্থক হয়ে উঠেছে। স্থানীয় ভোজপুরি ভাষায় উৎসবটি ফাগুয়া নামে পরিচিত। বিহারে, হোলি খেলার আগে হোলিকা চিতা জ্বালানো গুরুত্বপূর্ণ। এরপর লোকগান, জল ও গুঁড়ো রং দিয়ে হোলি খেলা হয়। ভাং খাওয়াও রাজ্যে হোলি উদযাপনের একটি অংশ।


৯. ফাকুয়া (অসম)-


অসমে হোলির নাম ফাগওয়া। এটি বাংলার 'দোল যাত্রা'-এর মতোই। এখানে উৎসবটি দুই দিনব্যাপী পালিত হয়। প্রথম দিনে, হোলিকা দহনের কিংবদন্তি অনুযায়ী, মাটির কুঁড়েঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয় । দ্বিতীয় দিনে, স্থানীয়রা এটিকে অন্য সবার মতো রং দিয়ে উদযাপন করে।


১০. রং পঞ্চমী (মহারাষ্ট্র ও মধ্যপ্রদেশ)-


মহারাষ্ট্রে খুবই মজা করে হোলি খেলা হয়। হোলিকা দহনের পর পঞ্চম দিনে রং খেলা হয় এবং এটি রাঙ্গা পঞ্চমী নামে পরিচিত।


১১. রয়্যাল হোলি (উদয়পুর, রাজস্থান)-


হোলির প্রাক্কালে, স্থানীয়রা হোলিকা দহনে অশুভ আত্মা থেকে মুক্তি পেতে আগুন জ্বালায়। উদয়পুরের মেওয়ার রাজপরিবার জমকালোভাবে এই উৎসব উদযাপন করে। অভিনব শোভাযাত্রায় সজ্জিত ঘোড়া এবং রাজকীয় ব্যান্ড থাকে। পরে, ঐতিহ্যবাহী পবিত্র আগুন জ্বালানো হয় এবং হোলিকার একটি মূর্তি পোড়ানো হয়।