বেঙ্গালুরু: ভালবাসা, আবেগ ধুয়েমুছে সাফ বহুদিন আগেই। সমাজের কথা ভেবে শুধু দাম্পত্য বয়ে নিয়ে যাওয়া (Married Life)। জনসংখ্যায় ১৪০ কোটি ছুঁইছুঁই দেশে না জানি কত সম্পর্ক টিকে আছে এই সমাজের দোহাই দিয়ে। সেই নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ রায় শোনাল কর্নাটক হাইকোর্ট (Karnataka High court)। মন থেকে ভালবাসা, আবেগ উবে গিয়েছে যে সম্পর্কে, দুগ্ধবতী গাভী এবং টাকার মেশিন হয়ে থাকা ছাড়া যে সম্পর্কে অস্তিত্ব নেই স্ত্রীর, তাতে ইতি টানার পক্ষে রায় দিল আদালত (Divorce Case)।


দীর্ঘ তিন দশকের বিবাহে ইতি টানতে চেয়ে সম্প্রতি আদালতের দ্বারস্থ হন এক মহিলা। তিনি জানান, গত দেড় দশক ধরে শুধু তাঁর কাছ থেকে টাকা নিয়ে গিয়েছেন স্বামী। তার কানাকড়িও ফেরত দেননি। বরং দিনের পর দিন তাঁকে অবহেলা করে গিয়েছেন। তা নিয়ে অসম্ভব মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে রয়েছেন তিনি। বাড়িতে অশান্তি লেগেই থাকে। তাই এই বিবাহ থেকে মুক্তি চান তিনি। কিন্তু রাজ্যের ফ্যামিলি কোর্টে ওই মহিলার বিবাহবিচ্ছেদের আর্জি খারিজ হয়ে যায়। উল্টে আদালত জানায়, স্বামী তাঁর উপর নির্যাতন চালিয়েছেন,তার সপক্ষে কোনও প্রমাণই দিতে পারেননি আবেদনকারী ওই মহিলা।


বিবাহবিচ্ছেদ মামলায় গুরুত্বপূর্ণ রায় আদালতের


নিম্ন আদালতে বিচ্ছেদ পেতে ব্যর্থ হয়ে এর পর হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ওই মহিলা। বিচারপতি অলোক আরাধে এবং জেএম কাজির ডিভিশন বেঞ্চে সেই আবেদন গৃহীত হয়।তাতে নিম্ন আদালতের রায় খারিজ করে দেয় আদালত। অনুমোদন দেওয়া হয় ওই মহিলার বিবাহবিচ্ছেদের আর্জিতে। এই ধরনের ঘটনা, যেখানে সাংসারিক অশান্তি, মনোমালিন্যের বিষয় জড়িয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে নির্যাতন বলতে শুধু শারীরিক নির্যাতন নয়, মানসিক নির্যাতনের প্রশ্নে জড়িয়ে থাকে। তাই সবদিক ভাল করে খতিয়ে দেখা উচিত বলে জানায় আদালত।


মামলার রায় শোনাতে গিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে বলে, ‘‘কোনও রকম মনের টান, আবেগ না থাকা সত্ত্বেওনিজের উদ্দেশ্যসাধনে স্ত্রীকে ব্যবহার করা, তাঁকে দুগ্ধবতী গাভীর এবং টাকার মেশিন হিসেবে ধরে নেওয়া মানসিক নিগ্রহের মধ্যেই পড়ে। এ ক্ষেত্রে স্ত্রীকে দুগ্ধবতী গাভীর ন্যায়ই ধরে নিয়েছিলেন স্বামী। কোনও আবেগ ছিল না স্ত্রীর প্রতি, নিজের উদ্দেশ্যসাধনে সম্প্রকের বাঁধনে বেঁধে রেখেছিলেন। স্বামীর এই আচরণে মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে গিয়েছেন স্ত্রী।’’


আরও পড়ুন: West Bengal Governor: মুখতার আব্বাস নকভি বাংলার রাজ্যপাল! ট্যুইট করেও মুছে দিলেন বিজেপি সাংসদ


বিচারপতিরা আরও বলেন, ‘‘এই ধরনের মামলায় স্বামীর হাতে যন্ত্রণাবিদ্ধ হওয়া মানসিক নির্যাতনের আওতায় পড়তে পারে। ফ্যামিলি কোর্ট সবদিক বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। দু’জনকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ, বয়ান রেকর্ডও করা হয়নি। তাই স্ত্রীর বক্তব্য শুনে বিচ্ছেদে অনুমোদন দেওয়া হল।’’


এই মামলায় আবেদনকারী মহিলা জানিয়েছেন, ১৯৯১ সালে বিয়ে হয় তাঁর। ২০০১ সালে বিবাহ বহির্ভূত ভাবে এক কন্যাসন্তানেরও আবির্ভাব হয় তাঁদের জীবনে। পেশায় ব্যবসায়ী স্বামী ব্যবসা চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। দেনার দায়ে মাথা তুলতে পারছিলেন না। সেই অবস্থা থেকে স্বামীকে মুক্ত করতে ২০০৮ সাল থেকে টাকা দিয়ে সাহায্য করতেন তিনি। এই দেড় দশকে নয় নয় করে স্বামীকে ৬০ লক্ষ টাকা দিয়েছেন তিনি। মেয়ে এবং তাঁর নামে জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে স্বামী ওই টাকা নিতেন বলে জানান আবেদনকারী ওই মহিলা।


মানসিক নির্যাতন বৈধতা পেল বিচ্ছেদ মামলায়


কিন্তু ওই টাকায় আসলে কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না বলে কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি বুঝতে পারেন বলে আদালতে জানান ওই মহিলা।  তাঁর দাঁবি, দুবাইয়ে স্যালোঁ খুলতে স্বামীকে টাকা জোগাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু ব্যবসা চালানোয় কোনও আগ্রহই ছিল না স্বামীর। বরং সব ফেলে রেখে দেশে চলে আসেন। ফলে ব্যবসা মার খায়। সব টাকা জলে ডুবে যায় তাঁর, যার সিকিভাগও স্বামী ফেরত দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। বরং ফেরত চাইলে ব্ল্যাকমেইল করতেন, বিচ্ছেদ চাইলে সমাজের কথা তুলতেন। সেই নিয়ে দীর্ঘদিন দোটানায় কাটানোর পরি আইনের দ্বারস্থ হন তিনি।