কলকাতা: সম্প্রতি, সংবাদমাধ্যমে একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, লাদাখে চিন সীমান্ত থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে সামরিক মহড়া চালাচ্ছে সেনার টি-৯০ ভীষ্ম যুদ্ধট্য়াঙ্ক।
প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৪ হাজার ফুট উচ্চতায় পূর্ব লাদাখে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রোসিডিওর (এসওপি) আক্রমণের মহড়া চালাচ্ছে সেনার আর্মার্ড রেজিমেন্ট।
সেনার এক কর্তা জানান, যেখানে ওই মহড়া চলছে, সেখানকার তাপমাত্রা মাইনাস ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই অতি প্রতিকূল আবহাওয়া ও তার সঙ্গে ততধিক প্রতিকূল ভৌগলিক অবস্থানে ট্যাঙ্কগুলিকে মানিয়ে নেওয়ার সুযোগ দিতেই ওই মহড়া।
গালওয়ান উপত্যকায় চিনের সঙ্গে সীমান্ত সংঘাতের পরই পূর্ব লাদাখ সীমান্তে তৃতীয় প্রজন্মের টি-৯০ ভীষ্ম ট্যাঙ্ক মোতায়েন করেছে ভারত। শুধু টি-৯০ নয়, তার সঙ্গে রয়েছে রুশ-নির্মিত টি-৭২এম১ ট্যাঙ্ক এবং বিএমপি-২ সহ অন্যান্য আর্মার্ড ভেহিকল।
লাদাখের চুমার, চশুল সেক্টরে টি-৯০ ট্যাঙ্কগুলি মোতায়েন করা হয়েছে, বিশেষ করে সাব-সেক্টর নর্থের ডেপসাং সমভূমিতে, যেখানে ভারতীয় বাহিনীকে প্যাট্রলিংয়ে বাধা দিয়েছিল চিনা সেনা।
বর্তমানে ভারত ব্যবহার করে টি-৯০ এস, যা সেনার মূল যুদ্ধট্যাঙ্ক। হল রাশিয়ার নিঝনি তাগিলের উরালভাগানজভোড দ্বারা নির্মিত রুশ টি-সিরিজের ট্যাঙ্কের এটিই সর্বশেষ ভার্সান।
যদিও, প্রযুক্তি হস্তান্তরের চুক্তি মোতাবেক, বর্তমানে ট্যাঙ্কগুলি ভারতে তৈরি হচ্ছে তামিলনাড়ুর অবধিতে স্থিত হেভি ভেহিকল্স ফ্যাক্টরিতে। ভারতে তৈরি ট্যাঙ্কগুলির নামকরণ করা হয়েছে'ভীষ্ম'। এই ট্যাঙ্কে স্টোরা স্ব-সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং ফ্রান্সের থ্যালেস এবং বেলারুশের পেলেংয়ের ক্যাথরিন থার্মাল ইমেজার লাগানো হয়েছে।
সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, লাদাখ, সিকিম এবং অরুণাচল প্রদেশ অঞ্চলের ঠান্ডা এবং কঠোর পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে বিশেষভাবে নির্মিত টি-৯০ ট্যাঙ্ক। এতে বিশেষ জ্বালানি ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যা সাব-জিরো তাপমাত্রায় জমে না। যে কারণে, ট্যাঙ্কগুলি মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও কাজ করতে পারে।
২০০১ সালে রাশিয়ার থেকে প্রথমবার ৩১০টি টি-৯০ ট্যাঙ্ক কিনেছিল ভারত। এরমধ্যে ১২৪টি পুরোপুরি তৈরি হয়ে আসে। বাকি ১৮৬টি তৈরি হয় ভারতে। ভারত তার আগে থেকে টি-৭২ ট্যাঙ্ক ব্যবহার করত।
ফলে, টি-৯০-র নকশা, অনেকটা তার পূর্বসূরীর মতো। এতে ভারতের সুবিধা হয়। কারণ, প্রশিক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ অনেকটাই সহজ ও সাশ্রয়কর হয়ে যায়। উপরন্তু, পাকিস্তান ব্যবহার করে টি-৮০ ট্যাঙ্ক। ফলে, তার চেয়ে উন্নতমানের ট্যাঙ্কের প্রয়োজন ছিল।
ভারতে নির্মিত টি-৯০ ভীষ্ম ট্যাঙ্কের প্রথম ব্যাচ দিনের আলো দেখে ২০০৪ সালে। সবকটিই তৈরি হয়েছিল অবধির কারখানায়। সেই থেকে প্রতিনিয়ত টি-৯০ ট্যাঙ্কের উৎপাদন হয়ে চলেছে।
এরমধ্যে বহুবার এই ট্যাঙ্কের আধুনিকীকরণও হয়েছে। এর শক্তি ও অস্ত্রক্ষমতা সবকিছুই বাড়ানো হয়েছে। এতে বসানো হয়েছে অত্যাধুনিক থার্মাল ইমাজিং ও ইনফ্রা ক্যামেরা ও ট্যাঙ্ক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র রোধক বিশেষ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
এক মার্কিন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ সম্প্রতি তাঁর ব্লগে বর্তমান প্রজন্মের টি-৯০ ভীষ্ম ট্যাঙ্ককে বিশ্বের অন্য়তম সেরা যুদ্ধট্যাঙ্ক হিসেবে উল্লেখ করেন। লাদাখে ভারতের টি-৯০ ট্যাঙ্ক মোতায়েন বনাম চিনের টাইপ-১৫ ট্যাঙ্কের তুলনা করছিলেন ওই বিশেষজ্ঞ।
সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওই দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে, টি-৯০ ট্য়াঙ্কের ধারেকাছে কেউ নেই। লাদাখে ভারত একটা কারণেই এগিয়ে। কারণ, তাদের কাছে রয়েছে টি-৯০ ভীষ্ম। কাঠামো রাশিয়ার হওয়ায় চরম প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে অনায়াসে মানিয়ে নিতে পারে টি-৯০।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক টি-৯০ ভীষ্ম ট্যাঙ্কের বৈশিষ্ট্য--
ওজন - ৪৬.৫ টন
ক্রু - ৩
দৈর্ঘ্য - ৯.৫৩ মিটার
উচ্চতা - ২.৮৬ মিটার
প্রস্থ - ৩.৭৮ মিটার
সর্বোচ্চ গতি - ৬০ কিমি/ঘণ্টা
ইঞ্জিন - ১০০০ এইচপি
প্রধান তোপ - ১২৫ মিমি
তোপের ক্ষমতা - ৮ রাউন্ড/মিনিট
গোলা - ৪৩ (গাইডেড মিসাইল/ হিট/ এইচই/ এফএসএপিডিএস)
কো-অ্যাক্সিয়াল মেশিন গান - ৭.৬২ মিমি
অ্যান্টি-এয়ারক্র্যাফট গান - ১২.৭ মিমি