শ্রীনগর: বায়ুসেনার তরুণী ফ্লাইং অফিসারকে ধর্ষণে অভিযুক্ত উইং কমান্ডার। সেই নিয়ে শোরগোলের মধ্যে এবার বিতর্ক বাধল। কারণ গ্রেফতারির আগেই জামিন পেয়ে গিয়েছেন অভিযুক্ত। জম্মু ও কাশ্মীরের হাইকোর্ট অভিযুক্তকে প্রাক-গ্রেফতারি জামিন দিয়েছে। আদালতের বক্তব্য, "বায়ুসেনার উইং কমান্ডারের গ্রেফতারির সঙ্গে তাঁর ভাবমূর্তির প্রশ্ন জড়িয়ে যেমন, তেমনই কেরিয়ারও জড়িয়ে রয়েছে।" (Indian Air Force)


নির্যাতিতার অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই ঘটনায় এফআইআর দায়ের করেছে উপত্যকার পুলিশ। কিন্তু হাইকোর্ট গ্রেফতারির আগেই জামিন মঞ্জুর করেছে অভিযুক্তের। শুধু তাই নয়, পুলিশকে জানানো হয়েছে, আদালতের অনুমতি ছাড়া এই মামলায় চার্জশিট দেওয়া যাবে না। আদালত বলে, "তদন্ত চালিয়ে যাওয়া যাবে। তবে পরিষ্কার নির্দেশ দিচ্ছি, আদালতের অনুমতি ছাড়া চার্জশিট জমা করা যাবে না।" (IAF Woman Flying Officer)


এই ঘটনায় জম্মু ও কাশ্মীরের প্রশাসনকে স্টেটাস রিপোর্ট দিতে বলেছে আদালত। গ্রেফতার করলে অভিযুক্তকে ছেড়ে দিতে হবে বলে জানিয়েছে। অভিযুক্তকে ৫০ হাজার টাকার বন্ডে জামিন দেওয়া হয়েছে গ্রেফতারির আগেই। কমান্ডিং অফিসারের অনুমতি ছাড়া উপত্যকা ছেড়ে যেতে পারবেন না তিনি। সাক্ষীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারবেন না।


জম্মু ও কাশ্মীরের বদগাম থেকে সম্প্রতি এই অভিযোগ সামনে আসে। অভিযোগকারিণী এবং অভিযুক্ত, দু'জনই উপত্যকায় বায়ুসেনা ঘাঁটিতে মোতায়েন রয়েছেন। বদগাম থানায় এফআইআর দায়ের হয়েছে।  অভিযোগকারিণী জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর, বর্ষবরণ পালিত হচ্ছিল অফিসারদের মেসে। তিনি উপহার পেয়েছিল কি না জানতে চান সিনিয়র। উপহার পাননি জানাতে, অভিযুক্ত উইং কমান্ডার জানান, তাঁর ঘরে উপহার রাখা আছে। সেই মতো ঘরে যেতে বলা হয় তাঁকে। ওই ঘরে কেউ ছিল না। পরিবারের কথা জানতে চাইলে, উইং কমান্ডার জানান, তাঁরা অন্যত্র থাকেন। এর পর তাঁর উপর যৌন নির্যাতন চালানো হয়।


নির্যাতিতার দাবি, তাঁকে 'ওরাল সেক্স'-এ বাধ্য করা হয়। এর পর শ্লীলতাহানি করেন অভিযুক্ত। বার বার বারণ করেন তিনি। বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। একটা সময় পর ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে, পালিয়ে আসেন ঘর থেকে। কিন্তু আবারও দেখা হবে বলে জানান ওই উইং কমান্ডার। বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জানাতে গেলে, তাঁকে বারণ করা হয়। এর পর ফের তাঁর সঙ্গে একই আচরণ করেন অভিযুক্ত উইং কমান্ডার। 


বিষয়টি নিয়ে দুই মহিলা অফিসারের দ্বারস্থ হন অভিযোগকারিণী। এর পর কর্নেল স্তরের এক আধিকারিক তদন্তের নির্দেশ দেন। জানুয়ারি মাসেই দু'বার মুখোমুখি বসিয়ে  বয়ান নেওয়া হয় বলে দাবি অভিযোগকারিণীর।  সেই সময় সিনিয়র আধিকারিকের উপস্থিত থাকায় আপত্তি জানান তিনি। ভুল বুঝতে পেরে তদন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয় মাঝ পথে। এর পর অভ্যন্তরীণ কমিটির কাছে নতুন করে অভিযোগ জানান তিনি। বেশ কয়েক মাস পর নেড়েচেড়ে দেখা হয় সেটি।


অবিবাহিত মেয়ে হয়ে বায়ুসেনায় যোগদানের সিদ্ধান্ত নিয়ে আক্ষেপও করতে শোনা যায় নির্যাতিতাকে। তাঁর অভিযোগ, স্টেশন কর্তৃপক্ষ পক্ষপাতিত্ব করছেন। অভিযুক্তকে আড়াল করা হচ্ছে। আইসি নিজের কাজ করছন না। অভিযুক্তকেই সমর্থন করছেন সকলে। এসব থেকে দূরে সরে যেতে ছুটি চেয়েছিলেন তিনি, তাও দেওয়া হয়নি। অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং বাকিদের সঙ্গে মিশতে বাধ্য করা হচ্ছে তাঁকে, যেন কিছু ঘটেনি। কর্তৃপক্ষের হাতে রোজ হেনস্থার শিকার হচ্ছেন তিনি। তিনি কার সঙ্গে কথা বলছেন, কোথায় যাচ্ছেন, সবকিছুর উপর নজদারি চলছে বলে অভিযোগ করেছেন নির্যাতিতা।