নয়াদিল্লি: দেশের বিচার ব্যবস্থার শীর্ষে থেকে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মতামত জানাতে কুণ্ঠা করেননি তিনি। মেয়াদ শেষ হওয়ার মুখেও সেই রীতি বজায় রাখলেন দেশের প্রধান বিচারপতি এনভি রমনা (CJI NV Ramana)। বিভাজন নয়, ঐক্যই শান্তি এবং সমৃদ্ধির চাবিকাঠি বলে মন্তব্য করলেন তিনি। একই সঙ্গে জানিয়ে দিলেন, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল হোক বা বিরোধী পক্ষ, সংবিধান ছাড়া (Indian Constitution) কারও কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নয় দেশের বিচারবিভাগ (Indian Judiciary)।
প্রবাসী ভারতীয়দের অনুষ্ঠানে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য প্রধান বিচারপতির
আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকোয় ভারতীয়-মার্কিন নাগরিকদের তরফে একটি বিশেষ সম্মান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানেই এমন মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি রমনা (NV Ramana)। তিনি বলেন, "ঐক্যের মধ্যেই সামাজিক শান্তি এবং সমৃদ্ধির চাবিকাঠি লুকিয়ে। যা কিছু আমাদের ঐক্যবদ্ধ করে, সে দিকে নজর দিতে হবে, বিভেদমূলক বিষয়ে নয়। ২১ শতকে পৌঁছে ক্ষুদ্র, সঙ্কীর্ণ, বিভাজন সৃষ্টিকারী শক্তিকে সামাজিক এবং মানবিক সম্পর্কের উপর ছড়ি ঘোরাতে দেওয়া উচিত নয় আমাদের। মানবিকতার খাতিরেই এ সবের ঊর্ধ্বে উঠতে হবে আমাদের। নইলে বিপর্যয় অনিবার্য।"
বিচার বিভাগের ভূমিকা বর্ণনা করতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, "স্বাধীনতার ৭৫ বছরে পা রাখতে চলেছি আমরা। প্রজাতন্ত্র হিসেবে ৭২ বছর উত্তীর্ণ করেছি। কিন্তু দুঃখের সঙ্গেই বলতে হচ্ছে যে, এখনও পর্যন্ত সংবিধানে নির্ধারিত দায়দায়িত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নই আমরা। ক্ষমতাসীন দল চায়, বিচারবিভাগ তাদের যাবতীয় পদক্ষেপপে অনুমোদন দিক। বিরোধীরা চায়, তাদের রাজনৈতিক অবস্থান মজবুত করার সহায়ক হোক বিচারবিভাগ। এই ভুল চিন্তা-ভাবনাই সংবিধান সম্পর্কে সম্যক ধারণার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলির কার্যপ্রক্রিয়াতেও তার প্রভাব পড়ে। মানুষ সংবিধান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন বলেই স্বাধীন, স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানগুলিকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার সাহস দেখাতে পারে এক ধরনের শক্তি।"
আরও পড়ুন: PM Modi: ‘বাংলায় আমাদের কর্মীরা খুন হচ্ছেন', এবার মোদির মুখেও 'বাংলার সন্ত্রাস'!
দেশ ছেড়ে চলে গেলেও, দেশের সামাজিক পরিস্থিতি সম্পর্কে উদাসীনতা কাম্য নয় বলেও মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি রমনা। তিনি বলেন, "আজ হয়ত কোটিপতি হয়ে গিয়েছেন আপনারা। কিন্তু সেই সম্পদ উপভোগ করতে হলেও চারপাশে শান্তি থাকা কাম্য। দেশে আপনাদের বাবা-মায়েরা রয়েছেন। তাঁরা যাতে হিংসামুক্ত, ঘৃণামুক্ত সমাজে বসবাস করতে পারেন, তাও দেখা জরুরি।"
বিভাজন নয় ঐক্যের উপর জোর প্রধান বিচারপতির
ভারত এবং আমেরিকা, দুই দেশই বৈচিত্রের জন্য পরিচিত। সেই পরিচয়কে লালন-পালন করাও প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি। আমেরিকা বৈচিত্রকে সম্মান করাতেই, তাদের পরিশ্রম, দক্ষতা গোটা বিশ্বে সমাদৃত বলেও জানান।