নয়াদিল্লি : ২৬ জুলাই, আসমুদ্র হিমাচলের প্রত্যেক ভারতবাসীর কাছে গর্বের দিন। কারণ, এই দিনটা যে কার্গিল বিজয় দিবস। এই বছর যার ২২ বছর পূর্তি। গর্বের পাশাপাশি মনটা দুঃখেও ভরে ওঠে ভারতবাসীর। কারণ, কার্গিলের যুদ্ধে ভারতের ৫২৭ জন বীর জওয়ান শহিদ হয়েছিলেন। ১৯৭১-এর যুদ্ধের পর সেই অর্থে অস্ত্র হামলা করেনি ভারত-পাকিস্তান দুই দেশই। পরের দু-দশক দু দেশের সম্পর্কটা ছিল সীমান্তে চাপানউতোরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।  পাকিস্তানি সেনা খাপছাড়াভাবে ভারতের সীমান্ত অতিক্রম করতে চেয়েছে প্রায়শই। জবাবি হামলা করেছে ভারতও। ইঁটের জবাবে পাটকেল দিতে দ্বিধা করেনি ভারতীয় সেনারা। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে প্রায়ই দাবি করা হয়েছে কাশ্মীর নিয়ে। যদিও ভারত কোনও কিছুতেই ঝামেলায় জড়াতে চায়নি পাকিস্তানের সঙ্গে। বরং, কার্গিল নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে আলোচনা বজায় রেখেছিল ভারত। 


১৯৯৮-৯৯ শীতের মরশুমে খানিকটা অধৈর্য হয়ে পড়েছিল পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। কারণ, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে বিচক্ষণতার পরিচয় দিচ্ছিল ভারত। তাই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের কাছে পেরে উঠছিল না পাকিস্তান। আবার যখন তাদের সেনাবাহিনী সীমান্তে সামান্য় সংঘর্ষও করেছে, সঙ্গে সঙ্গে মুখের মতো জবাব পাচ্ছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছ থেকে। তাই বোধহয়, দু-দিক থেকেই পেরে না ওঠায় খানিকটা বেপরোয়া হয়ে পদক্ষেপ নিয়েছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ১৯৯৯ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সশস্ত্র সেনারা নিয়ন্ত্রণ রেখা বা লাইন অফ কন্ট্রোল (LOC) পেরিয়ে ঢুকে পড়তে থাকে ভারতীয় সীমান্তের কাশ্মীরের কার্গিল জেলায়। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে নাম দেওয়া হয়েছিল 'অপারেশন বদ্রি'। সীমান্তে ভারতীয় অতন্দ্র প্রহরীদের চোখ এড়িয়ে যায়নি কোনও কিছুই। শুরু হয় দু পক্ষের সংঘর্ষ। পাকিস্তান যে বেশ পরিকল্পনা করে হামলা চালাচ্ছে, তা বুঝে যায় ভারতও। তাই প্রায় ২ লক্ষ সেনা কার্গিল সীমান্তে হাজির করে ভারতীয় সেনাবাহিনী। ভারতের পক্ষ থেকে এই অপারেশনের নাম দেওয়া হয় 'অপারেশন বিজয়'। শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ। দু পক্ষেরই জওয়ানরা প্রাণ হারাতে থাকে। তবে, কিছুতেই পিছু হঠতে চাইছিল না পাক সেনারা। ভারতই বা শান্ত হয়ে বসে থাকে কীভাবে। তাই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলতে থাকে প্রায় দু মাসেরও বেশি সময় ধরে।


অবশেষে আসে ২৬ জুলাই ১৯৯৯। ওই দিন পাকিস্তানি সেনাদের পিছু হঠতে বাধ্য করে ভারতীয় সেনারা। কার্গিলের ওই যুদ্ধে জয় হয় ভারতের। তাই ২৬ জুলাইকেই কার্গিল বিজয় দিবস হিসেবে পালন করা হয়। পরের বছর থেকে কার্গিলে এবং রাজধানী নয়াদিল্লিতে ২৬ জুলাই বিশেষ অনুষ্ঠান করে পালন করা হয় কার্গিল বিজয় দিবস। দেশের প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেক বছর ২৬ জুলাই ইন্ডিয়া গেটের সামনে অমর জওয়ান জ্যোতিতে কার্গিল যুদ্ধের নায়কদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। পিছিয়ে থাকে না গোটা দেশও। ভারতবর্ষের প্রতিটা কোণে ২৬ জুলাই গর্বের সঙ্গে পালন করা হয়। কার্গিল বিজয় দিবসের ২২ বছর পূর্তিতে এবার দুদিনের একটি মোটর বাইক Rally-রও আয়োজন করা হয়েছে।