নয়াদিল্লি: কর্নাটকের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মুসলিম মেয়েদের হিজাব পরা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) রায়ও (Hijab Ban Verdict)। এক দিকে, হিজাব নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে জমা পড়া আবেদন খারিজ করে দিলেন বিচারপতি হেমন্ত গুপ্ত। বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া আবার হিজাব পরায় অনুমতি দিলেন। হিজাব পরা, না পরা ঐচ্ছিক বলে জানালেন তিনি। ফলে প্রধান বিচারপতি ইউইউ ললিতের উপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে।


হিজাব মামলার রায়ে দ্বিধাবিভক্ত সুপ্রিম কোর্টও


বৃহস্পতিবার মামলার রায় ঘোষণা শুরু হলে, দুই বিচারপতির বেঞ্চ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায়। হিজাব নিষিদ্ধ (Hijab Ban Row) হওয়ার বিরুদ্ধে যে আবেদন জমা পড়েছিল, তা খারিজ করে দেন বিচারপতি হেমন্ত গুপ্ত। কর্নাটক হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে তিনি বলেন, “এ নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে।” হিজাব মামলা নিয়ে ১১টি প্রশ্ন তৈরি করেছেন বলেও জানান তিনি। শবরীমালার মতো হিজাব মামলার শুনানিও নয় বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে হওয়া উচিত কিনা, সেটি হল অন্যতম প্রশ্ন।


এ ছাড়াও, পড়ুয়ারা কী পোশাক পরবেন, তা কলেজ কর্তৃপক্ষই কি ঠিক করবেন, হিজাব নিষিদ্ধ হওয়ায় সংবিধানে উল্লেখিত ধর্মাচরণের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে কিনা, এই প্রশ্নও রয়েছে বলে জানান বিচারপতি গুপ্ত। এ ছাড়াও সরকারি নির্দেশে নাগরিকদের মতপ্রকাশের অধিকার, গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার খর্ব হচ্ছে কিনা, সেই প্রশ্নও রয়েছে বলে জানান।


আরও পড়ুন: Jagdeep Dhankar : 'আইনের শাসন নয়, শাসকের আইন চলে’, উপরাষ্ট্রপতি হওয়ার পরেও ধনকড়ের মুখে বাংলার আইনশৃঙ্খলা


হিজাব ধর্মাচরণের অপরিহার্য অধিকারের মধ্যে পড়ে কিনা, অধিকারের দোহাই দিয়ে একজন পড়ুয়া স্কুলে হিজাব পরতে পারেন কিনা, কর্নাটক সরকারের সিদ্ধান্ত সংবিধানে নথিবদ্ধ সাক্ষরতা এবং শিক্ষার অধিকারের পরিপন্থী কিনা, এ সব প্রশ্নে উত্তরে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া প্রয়োজন বলে জানান বিচারপতি গুপ্ত। কিন্তু নিজের মতামত জানাতে গিয়ে বলেন,  “আমার মতে, এই সব প্রশ্নের উত্তর আবেদনকারীদের বিরুদ্ধে। তাই আবেদনই খারিজ করছি আমি।”


এর পর বিচারপতি ধুলিয়া চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি কর্নাটক সরকারের হিজাব নিষিদ্ধ করার নির্দেশ বাতিল করে দেন। হাইকোর্টের রায়ও খারিজ করে দেন তিনি,যার ভিত্তিতে কর্নাটকের স্কুল-কলেজে মুসলিম মেয়েদের হিজাব পরা নিষিদ্ধ করা হয়। বিচারপতি ধুলিয়া বলেন, “এই বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ধর্মাচরণের অপরিহার্যতার নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ ছিল না। হাইকোর্ট ভুল পন্থা নিয়েছে। সংবিধানের ১৪ এবং ১৯ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, গোটা বিষয়টাই ঐচ্ছিক। এর বেশি বা কম কিছু নয়। মেয়েদের শিক্ষাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই নিজেকে প্রশ্ন করলাম, আমরা কি ওদের লড়াই আদৌ সহজতর করে তুলছি? তাই ৫ ফেব্রুয়ারি রাজ্য সরকারের নির্দেশ খারিজ করছি। বাতিল করছি সবরকম নিষেধাজ্ঞা।”


স্কুল-কলেজে মুসলিম মেয়েদের হিজাব পরাকে ঘিরে অশান্তি কর্নাটকে


বিজেপি শাসিত কর্নাটকে স্কুল-কলেজে মুসলিম মেয়েদের হিজাব পরা নিয়ে অশান্তি বাধে। তাতে গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাজ্য সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব পরা নিষিদ্ধ করে। সেই নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে গোটা রাজ্যে। বিষয়টি আদালতে পৌঁছয়। হাইকোর্ট হয়ে শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছয় বিষয়টি। কিন্তু সেখানেও দ্বিধাবিভক্ত রায় দিলেন বিচারপতিরা। আপাতত প্রধান বিচারপতির উপরই সবকিছু নির্ভর করছে।