কলকাতা : বাংলার সঙ্গে ছিল তাঁর আত্মিক সম্পর্ক। অসংখ্য বাংলা গান কালজয়ী হয়ে উঠেছে সুর সম্রাজ্ঞীর কণ্ঠে। 


লতা মঙ্গেশকর (Lata Mangeshkar) বাঙালি ছিলেন না। কিন্তু, বাংলার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল হৃদয়ের এবং সম্পর্কটা শুধু এই টুকুই নয় যে লতা মঙ্গেশকর তাঁর কেরিয়ারের ২০০-র কাছাকাছি বাংলা গান গেয়েছেন। কিংবা বহু বাঙালি সুরকার-গীতিকারের সঙ্গে কাজ করেছেন। আসলে বাংলা ভাষার প্রতি লতা মঙ্গেশকরের একটা আলাদা টান ছিল। যেটা বাঙালি সুরকারদের সঙ্গে কাজের ক্ষেত্রেও প্লাস পয়েন্ট হিসেবে কাজ করত। 


হেমন্ত মুখোপাধ্যায় (Hemanta Mukherjee) যেমন আত্মজীবনীতে লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতার কথা লিখেছিলেন। শশধর মুখোপাধ্যায়ের প্রস্তাবে তিনি তখন বম্বেতে কাজ শুরু করেছেন। "আনন্দমঠ" ছবির কাজ শুরু হয়েছে। বন্দে মাতরম গানের সুর করতে হবে। গান কে গাইবে ? হেমন্তের পছন্দ ছিলেন লতা। কথাটা বলেন প্রযোজন শশধর মুখোপাধ্যায়কে। তা শুনে শশধর বলেন, লতা ফিল্মিস্তানে আসবে না। ও অনেক ব্যাপার। তুমি অন্য কাউকে দিয়ে গাওয়াও। হেমন্ত তো উভয় সঙ্কটে। লতাকে দিয়ে এই গান গাওয়ানো যাবে কি না নিশ্চিত নন। আবার লতা না গাইলে গানটাই মাটি। শেষে প্রায় মরিয়া হয়ে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় একটা সিদ্ধান্ত নেন, তিনি শশধর মুখোপাধ্যায়কে বলেন আপনি বলছেন লতা আসবে না। কিন্তু, আমি যদি ওকে আনতে পারি তাহলে আপনাদের কোনও আপত্তি আছে কি ? শশধর শুনে বলেন, না। তাঁর তরফে কোনও আপত্তি নেই। বরং ও এলে ভালই হয়। কিন্তু, ও আসবে না। এরপর হেমন্ত নিজের উদ্যোগে এগোতে শুরু করেন। 


আরও পড়ুন ; ' তিনি সঠিক অর্থেই ভারতের নাইটিঙ্গল ' ,সুরসম্রাজ্ঞীর প্রয়াণে শোকবার্তা মুখ্যমন্ত্রীর


লতা মঙ্গেশকর তখন নানাচকের একতলা বাড়িতে থাকেন। সেখানেই গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। লতার আদর-আপ্যায়ণে তো তিনি মুগ্ধ। তারপর কথায় কথায় নিজের প্রস্তাব পেশ করেন তিনি। লতা একটু ভেবে বললেন, যদিও ফিল্মিস্তানের সঙ্গে আমার ঝগড়া, আমি ওখানে গাইব না ঠিক করেছি, কিন্তু শুধু আপনার জন্য গাইব। তখম হেমন্ত জিজ্ঞাসা করেন, কত টাকা লাগবে ? এর উত্তরেও লতা মঙ্গেশকর চমকে দেন। লতা শুনে বলেন, শুধু আপনার জন্যই গাইছি। পয়সার জন্য নয়। সুতরাং ফিল্মিস্তানের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনও কথা বলার দরকার নেই। সেই থেকে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে লতা মঙ্গেশকরের সম্পর্ক শুরু। যা ছিল আজীবন।


লতা মঙ্গেশকর জন্মগতভাবে বাঙালি ছিলেন না। বাংলা বুঝতেনও না। কিন্তু, ভাষাটার প্রেমে গিয়েছিলেন তিনি। তাই শুধু বাংলা শিখবেন বলে বাড়িতে শিক্ষক রেখেছিলেন লতা। শিক্ষকের নাম ছিল বাসু ভট্টাচার্য। দায়সারা ভাবে নয়, রীতিমতো লিখতে ও পড়তে যাতে পারেন, রীতিমতো সেই চেষ্টা  করেছিলেন তিনি। 


লতা মঙ্গেশকরের অসীম শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন সুরকার সলিল চৌধুরী। সুর সম্রাজ্ঞী খোলাখুলি সবার কাছে বলতেন, সলিল চৌধুরী বিরলতম প্রতিভা।