নয়াদিল্লি: মূল্যবৃদ্ধির ঠেলায় জেরবার সাধারণ মানুষ (Price Hike)। ফলমূল, শাক-সবজি, তেল, হাত ছোঁয়ানো যাচ্ছে না কিছুতেই। তার উপর খাঁড়া হয়ে নেমে এসেছে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি (Fuel Price Hike)। গার্হস্থ্য রান্নার (LPG Cylinder)  গ্যাসের দামই প্রায় ১১০০ টাকা ছুঁইছুঁই। উজ্জ্বলা যোজনার (Pradhan Mantri Ujjwala Yojana) আওতায় সংযোগ পেয়েছিলেন যাঁরা, তাঁদেরও সিলিন্ডার পিছু মোটা টাকা গুনতে হচ্ছে। তাই উনুনের সরিয়ে হেঁশেল ধোঁয়ামুক্ত হলেও, চোখের ভিজেই চলেছে সাধারণ মানুষের।


রান্নার গ্যাসের দাম দিতে হিমশিম গৃহস্থ


চলতি সপ্তাহে ফের ৫০ টাকা দাম বেড়েছে ১৪.২ কেজি ওজনের গার্হস্থ্য রান্নার গ্যাসের দাম। এই নিয়ে গত এক বছরে নয় নয় করে রান্নার গ্যাসের দাম বেড়েছে ২৪৪ টাকা অর্থাৎ প্রায় ৩০ শতাংশ। ভর্তুকিহীন গ্রাহকদের গ্যাসের সিলিন্ডার কিনতে খরচ করতে হচ্ছে ১০৫৩ টাকা। ৮৫৩ টাকা করে সিলিন্ডার পিছু দিতে হচ্ছে উজ্জ্বলা গ্রাহকদের (LPG Price Hike)।


মূল্য সংযোজন করের নিরিখে(VAT) এক এক রাজ্যে জ্বালানির দাম এক এক রকম হয়। কিন্তু রান্নার গ্যাস, যার উপর গৃহস্থের খাওয়া-দাওয়া নির্ভর করে, তার দাম মাত্রাতিরিক্ত হলে স্বাভাবিক ভাবেই গৃহস্থের জীবনে প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে, আয়ের নিরিখে যাঁরা পিছিয়ে, মাস গেলে যাঁদের রোজগার ১০ থেকে ১৫ হাজারের মধ্যে, ১০০০ টাকা দিয়ে সিলিন্ডার কিনতে হলে, ১০ শতাংশ বেরিয়ে যায় পকেট থেকে।


এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন কলকাতার গোলপার্কের বাসিন্দা, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কর্মী নূপুর দাশগুপ্তও। তাঁর কথায়, ‘‘আজকের দিনে রান্নার গ্যাস কেনা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি মাসে দাম বাড়ছে। তার জেরে সংসার খরচের হিসেবও ঘেঁটে যাচ্ছে। রান্নার বিকল্প উপায় খুঁজছি আমরা। সৌরশক্তি বা অন্য কোনও উপায়ে যদি করা যায় আর কী।’’


আরও পড়ুন: Adani Group News: ফের শুরু হতে পারে ট্যারিফ যুদ্ধ ! 5G স্পেকট্রামের নিলামে থাকবে আদানি গ্রুপ


কলকাতার দমদমের বাসিন্দা স্বপ্না মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, সংসার খরচে লাগাম টানতে কেরোসিন তেলের স্টোভে রান্নার কথা চলছে তাঁর বাড়িতে। তিনি বলেন, ‘‘মাসের সংসার খরচ এতটাই বেড়ে গিয়েছে, যে চালাতে কষ্ট হচ্ছে। মাসে দু’টো সিলিন্ডার লাগে আমাদের। একটি গ্যাস সংযোগ সারেন্ডার করে দেব ভাবছি। আগের মতো কেরোসিন তেলের স্টোভেই রাঁধব।’’


অন্ধ্রপ্রদেশের তেনালির বাসিন্দা, গৃহবধূ এম মল্লিকা বলেন, “এলপিজি থেকে ধোঁয়া বেরোয় না বটে। কিন্তু তাতেও চোখের জল পড়ছেই। কর বাদ দিয়ে তিন মাসে ১৫০ টাকা বেড়েছে গ্যাসের দাম। কর সমেত ১৬০ টাকা। অন্ধ্রপ্রদেশে সিলিন্ডারের দাম পড়ছে ১০৭৫ টাকা। তাই বোঝা আনেকটাই বেড়েছে।”


অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাজ্যে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার ব্যবহারকারী নাগরিকের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৪৩ লক্ষ। বর্তমানে কোথাও কোথাও সিলিন্ডার পিছু দাম বেড়ে ১১০৩ টাকা হয়েছে। তার উপর যিনি গ্যাস দিতে আসেন বাড়িতে, তাঁকে টিপও দিতে হয় বলে জানিয়েছেন গ্রাহকরা। ফলে খরচ সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠে আসছে।


গত এক বছরে রান্নার গ্যাসের দাম বেড়েছে মোট আটবার। এর জন্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করেছিলেন কেউ কেউ। কিন্তু বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে সম্প্রতি দাম ক্রমশ নিম্নমুখী হয়েছে। তার পরেও ভারতে রান্নার গ্যাসের দাম ক্রমশ নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এর আগে, মে মাসে কেন্দ্রের তরফে পেট্রোল এবং ডিজেলের দামের উপর শুল্ক যথাক্রমে প্রতি লিটারে ৮ টাকা এবং ৬ টাকা কম করে। উজ্জ্বলা যোজনার গ্রাহকরা সিলিন্ডার প্রতি ২০০ টাকা ভর্তুকি পাবেন বলেও জানানো হয় সেই সময়। তার বাইরে সকলকেই বাজারমূল্যে সিলিন্ডার কিনতে হবে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু উজ্জ্বলা গ্রাহকরাও এখন সিলিন্ডার কেনার আগে দু’বার ভাবছেন।


লাগাতার মূল্যবৃদ্ধি রান্নার গ্যাসের


শুরুতে ১২টি গ্যাস সিলিন্ডারের নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করলে তবেই বাজারমূল্যে সিলিন্ডার কিনতে হতো সাধারণ মানুষকে। ১২টির মধ্যে ব্যবহার সীমিত থাকলে, ভর্তুকি দিত সরকার। কিন্তু ২০২০-র মাঝামাঝি সময় থেকে অধিকাংশ গৃহস্থের অ্যাকাউন্টেই ভর্তুকির টাকা ঢোকা বন্ধ হয়ে যায়। তাই তখন থেকেই বাজারমূল্যে সিলিন্ডার কিনতে হচ্ছিল। লাগাতার দাম বেড়ে চলায়, হিমশিম খাচ্ছেন সকলে।