নয়াদিল্লি: I.N.D.I.A জোট থেকে বাকি কেউ না গেলেও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় NITI আয়োগের বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু মাঝপথেই বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে এলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। কথা বলার সময় তাঁর মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন মমতা। তাঁর দাবি, বাকি রাজ্য়ের মুখ্যমন্ত্রীদের কাউকে ২০ মিনিট, কাউকে ১২ মিনিট সময় দেওয়া হলেও, তাঁর বেলায় পাঁচ মিনিটের মধ্যেই মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাই বৈঠক বয়কট করে বেরিয়ে এসেছেন তিনি। (Mamata Banerjee)


NITI আয়োগের বৈঠকে মমতা যাবেন কি না, সেই ধন্দ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু শনিবার সকাল ১০টা থেকে দিল্লিতে বৈঠক শুরু হলে, বিরোধীদের তরফে সেখানে উপস্থিত হন তিনি। কিন্তু কিছু ক্ষণ পরই বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসেন। সংবাদমাধ্যমে জানান, তাঁর আগে অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু ২৫ মিনিট কথা বলেন। এর পর অসম, গোয়া, ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রীরাও ১৫ মিনিট-১২ মিনিট করে কথা বলেন। কিন্তু তিনি বলতে শুরু করার পর পাঁচ মিনিটও কাটেনি, তাঁর মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়। (NITI Aayog)


এদিন মমতা বলেন, "মিটিং বয়কট করে এলাম আমি। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ধরে রাখে, সব রাজ্যের স্বার্থের কথা ভেবে গিয়েছিলাম। বিরোধীদের তরফে একমাত্র আমিই ছিলাম। রাজনৈতিক বাবে কেন পক্ষপাতিত্ব করছে সরকার? বাজেটে কেন পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে? আমাদের সঙ্গে কেন বৈষম্য হচ্ছে, জানতে চাই। প্রত্যেক রাজ্যের হয়ে কথা বলেছি। কারণ আপনারা নির্দেশ দেন, কাজটা আমাদের করতে হয়। আগে প্ল্যানিং কমিশন ছিল, এখন নীতি আয়োগের অর্থনৈতিক ক্ষমতা নেই। হয় তাকে অর্থনৈতিক ক্ষমতা দিন, নইলে প্ল্যানিং কমিশন ফিরিয়ে আনুন। গত তিন বছর ধরে আমার রাজ্যকে ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা, সড়ক যোজনার টাকা আটকে রাখা হয়েছে। এভাবে সরকার চলে না। এমন বৈষম্য করলে দেশ চলবে কী করে, জানতে চাই। এর পরই আমার মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়। এটা অন্যায়, এটা অপমান। আগামী দিনে আর কোনও বৈঠকে থাকব না আমি।"


আজকের বৈঠকে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনেরও যোগদানের কথা ছিল। কিন্তু কোনও কারণে দিল্লি এসে পৌঁছতে পারেননি তিনি। এর পর মমতা একাই বিরোধীপক্ষের প্রতিনিধি হয়ে বৈঠকে যোগ দেন। কিন্তু দিল্লিতে এদিন মমতা জানান, বিরোধী দলগুলিকে কোনও সুযোগ দেয় না কেন্দ্র। বাংলার খাবারের ভর্তুকি পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। গত বছর পর্যন্ত হিসেবে বাংলার মোট ১ লক্ষ ৭১ হাজার কোটি আটকে রাখা হয়েছে। বাজেটেও কিছু দেওয়া হয়নি। একথা বলার পরই তাঁর মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিরোধীদের তরফে যেখানে একজন উপস্থিত হয়েছেন বৈঠকে, কেন তাঁর মাইক বন্ধ করে দেওয়া হল, কেন এভাবে অপমান করা হল, প্রশ্ন তুলেছেন মমতা। তাঁকে অপমান করা নয় শুধু, সব বিরোধীদের কেন্দ্র অপমান করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। 


এর আগে, শুক্রবার মমতা জানিয়েছিলেন, তাঁকে বলতে দেওয়া না হলে, বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে আসবেন। এদিন সেই ঘটনাই ঘটল। এ প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপি-র মুখপাত্র তথা রাজ্যসভা সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "অত্যন্ত দুর্বল চিত্রনাট্য। এই চিত্রনাট্যে উপস্থাপিত করার জন্যই দিল্লি গিয়েছিলেন উনি। কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপনের লক্ষ্য নেই ওঁর। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রতি সম্মান জানানো নয়, পশ্চিমবঙ্গের প্রান্তিক মানুষের আর্থ-সামাজিক উত্তরণ নয়, অন্য রাজ্যে যেখানে পরিকাঠামোর বৈপ্লবিক পরিবর্তন হচ্ছে, তাতে পশ্চিমবঙ্গকে শামিল করা ওঁর লক্ষ্য নয়। রাজ্যে শিল্পবান্ধব পরিস্থিতি তৈরির লক্ষ্যও নেই ওঁর। ওঁর একটাই লক্ষ্য, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের অন্ধ বিরোধিতা করা। চিরকাল বিরোধী অবস্থানের রাজনীতি করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরও বিরোধীদলনেত্রীর ভূমিকা পালন করছেন। মুখ্যমন্ত্রী নয়, বিরোধী নেত্রী মমতা থেকে গিয়েছেন।" এভাবে মমতা কাউকে প্রভাবিত করতে পারবেন না, কোনও বার্তা দিতে পারবেন না সর্বভারতীয় রাজনীতিকে, দাবি শমীকের।


সিপিএম-এর রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, "উনি নাটক করতে ভালবাসেন, নাটক করেছেন। চিত্রনাট্য অনুযায়ী, যা যা করার করেছেন। একেবারে ছকে বাঁধা। এর মধ্যে কোনও নতুনত্ব নেই, বিশেষত্ব নেই। বিজেপি বিরোধী সব মুখ্যমন্ত্রীরা যেখানে বৈঠক বয়কট করলেন, ওঁকে কে দায়িত্ব দিল দিল অন্য রাজ্যের হয়ে কথা বলতে! বঞ্চনা নিয়ে উনি কেন শ্বেতপত্র প্রকাশ করছেন না? শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন, তার পর আমরা বুঝে নেব, কেন্দ্র টাকা দেয় কি না। আসলে উনি রাজনৈতিক মঞ্চে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এসব নাটক করছেন। এর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ, দেশের স্বার্থ জড়িয়ে নেই।"


প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায় বলেন, "আমরা প্রথম থেকে বলছি, কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা বৈঠক বয়কট করেছে, কারণ বিজেপি সার্বিক ভাবে বিরোধীদের সঙ্গে বঞ্চনা করেছে। মুখ্যমন্ত্রী কেনই বা গেলেন! আগেই তো বলেছিলেন বেরিয়ে চলে আসবেন! আসলে ওঁর যাওয়া, বেরিয়ে আসার কোনও সমাধান বুঝতে পারছি না। বিজেপি-র তো মাইক বন্ধ করে দেওয়া অভ্যাস! কিন্তু ওঁর যাওয়া, না যাওয়ার যে দ্বৈরথ...কোনও বিরোধী মুখ্যমন্ত্রী যাননি, উনি কেন গেলেন, এর মধ্যে কি পরিকল্পিত কিছু আছে?"


যদিও তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, "এ রাজ্য়ের সিপিএম বা কংগ্রেস কী বলছে, তাতে কিছু যায় আসে না। কারণ এ রাজ্যে তার হচ্ছে বিজেপি-র অপভ্রংশ দল। এখানকার বিজেপি যা বলবে, ওরাও সুর মেলাবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার কথা বলতে গিয়েছেন। বাংলার হয়ে কথা বলার অধিকার রয়েছে ওঁর, কেন ছাড়বেন? বাংলার হয়ে কথা বলার আর কে আছে? আজ যদি না যেতেন, বিজেপি-র স্বৈরাচারী মনোভাবের এই দৃষ্টান্ত সামনে আসত না।" এমনটা হতে পারে বলে আগেই মমতা আশঙ্কা করেছিলেন মমতা, তাও সৌজন্য দেখাতে গিয়েছিলেন বলে দাবি রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসুরও।