নয়াদিল্লি: সামনে বিধানসভা নির্বাচন (Gujarat Assembly Elections 2022)। তার আগে মোরবির সেতু বিপর্যয় ডেকে এনেছে বিপদ (morbi Bridge Collapse)। সেই আবহে কার্যতই বড় চমক কেন্দ্রের বিজেপি (BJP) সরকারের। বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে চলে আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি এবং ক্রিশ্চান, যাঁরা গুজরাতে দুই জেলায় দীর্ঘ দিন ধরে বসবাস করছেন, ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের আওতায় তাঁদের সকলকে ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্র (Indian Citizenship)। ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে এদেশে অন্তত ৫ বছর বসবাসের সময়সীমা এক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।


গুজরাত নির্বাচনের আগে বড় সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের


তবে ২০১৯-এর বিতর্কিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের পরিবর্তে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের আওতায় পড়শি দেশের সংখ্যালঘু মানুষদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মোদি সরকারের নয়া সংশোধিত আইনের অধীনে এখনও বিধি-নিয়মই ঠিক হয়নি। তাই তার অধীনে এই মুহূর্তে কাউকে নাগরিকত্ব দেওয়া সম্ভব নয় সরকারের পক্ষে। তাই বুঝে শুনেই কেন্দ্র পুরনো আইনেরই শরণাপন্ন হয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। 


কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গুজরাতের আনন্দ এবং মেহসানায় বসবাসকারী পড়শি দেশের সংখ্যালঘু হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি এবং খ্রিস্টানদের ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের ৫ নম্বর অনুচ্ছেদের আওতায় এবং ২০০৯ সালের নাগরিকত্ব বিধি অনুযায়ী, ভারতের স্বাভাবিক নাগরিক হিসেবে নাম নথিভুক্ত করার অনুমতি প্রদান করা হবে। তার জন্য অনলাইন আবেদন জানাতে হবে। জেলাস্তরে সেগুলি যাচাই করা হবে প্রথমে। সেই সংক্রান্ত রিপোর্টও সরকারি ওয়েবসাইটে তুলে ধরা হবে। সব কিছু ঠিক থাকলে ভারতের স্বাভাবিক নাগরিক হিসেবে শংসাপত্র প্রদান করা হবে ওই সব মানুষকে।


আরও পড়ুন: Morbi Bridge Collapse: মোরবিতে সেতু বিপর্যয়ে মৃত বেড়ে ১৩৬, মোদির সফরে ঢাকা হল সংস্থার নাম! উঠছে অভিযোগ


তবে গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে, এই সিদ্ধান্তের পিছনে বিজেপি-র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যই জড়িয়ে রয়েছে বলে মনে করছেন বিরোধীরা। কারণ গুজরাতে পরিস্থিতি প্রতিকূল বলে আগে থেকেই ইঙ্গিত মিলছিল। তার উপর আবার মোরবি বিপর্যয় আরও ছন্দপতন ঘটিয়েছে। এই আবহে পড়শি দেশ থেকে আসা শরণার্থী ভোটকে নিজেদের দখলে আনতেই এমন উদ্যোগ কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের। শুধু তাই নয়, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ-র পরিবর্তে পুরনো নাগরিকত্ব আইনের মধ্যেও রাজনীতি রয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে। কারণ সিএএ চালু করতে গেলে, অসমের মতো রাজ্যেও বিজেপি-কে অপ্রস্তুতে পড়তে হতে পারে বলে মত তাঁদের। 


সিএএ নয়, পুরনো নাগরিকত্ব আইনেরই ব্যবহার


ক্ষমতায় আসার পর পরই নাগরিক আইনে সংশোধন ঘটায় কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার। ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে আসা, সেখানকার সংখ্যালঘু অমুসলিম মানুষজনকে ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা ঘোষণা করে তারা। সেই মতো আনা হয় সিএএ। তার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদ, আন্দোলন শুরু হলেও, সংসদে বিল পাস হয়ে যায়। রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরে তা আইনেও পরিণত হয়। তার পরেও আন্দোলন চালিয়ে গিয়ে ১০০-র বেশি মানুষ প্রাণ হারান। কিন্তু এত কিছুর পরও আইন সংক্রান্ত বিধিনিষেধ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। মোট সাতবার সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে এখনও পর্যন্ত। তার মধ্যেই মোরবি বিপর্যয়ের পরই এই ঘোষণা।