বেঙ্গালুরু: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মুসলিম মেয়েদের হিজাব পরার মামলা আদালতে ঝুলছে। তার মধ্যেই ফের সাম্প্রদায়িত অশান্তির ছায়া কর্নাটকে। দশেরার মিছিল নিয়ে হেরিটেজ তকমা পাওয়া একটি মাদ্রাসায় তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ সামনে আসছে (Dussehra Procession)। স্লোগান দিতে দিতে ওই ভিড় মাদ্রাসায় ঢুকে পড়ে এবং সেখানে হিন্দু উপাচার মেনে পুজোও সারে বলে অভিযোগ উঠছে। তা নিয়ে ফের উত্তেজনার পারদ চড়ছে। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় ন’জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। তবে কেউ গ্রেফতার হননি। শুক্রবারের মধ্যে কাউকে গ্রেফতার করা না হলে, বিরাট মিছিল নিয়ে রাস্তায় নামা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে সেখানকার মুসলিম সংগঠনগুলি (Communal Tension in Karnataka)। 


ফের সাম্প্রদায়িক অশান্তির ছায়া কর্নাটকে


কর্নাটকের বিদার জেলার ঘটনা। যে মাদ্রাসায় ঢুকে তাণ্ডব চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ, সেটির নাম ‘মাহমুদ গওয়ান মাদ্রাসা’ (Mahmud Gawan Madrasa)। ১৪৬০ সালে ওই মাদ্রাসাটি নির্মিত হয়। বর্তমানে ভারতীয় প্রত্নতাত্বিক বিভাগের অধীনে রয়েছে সেটি। ঐতিহ্যবাহী ওই মাদ্রাসার কাঠামোটি দেশের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতিসৌধের তালিকাতেও রয়েছে। বুধবার সন্ধেয় দশেরা উপলক্ষে বেরনো একটি মিছিল তালা ভেঙে ওই মাদ্রাসায় ঢুকে পড়ে এবং তাণ্ডব চালায়, পূজা-অর্চনা সারে বলে অভিযোগ। 


প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ‘জয় শ্রী রাম’ এবং ‘হিন্দু ধর্ম জয়’ স্লোগান দিতে দিতে ওই মাদ্রাসার সামনে হাজির হয় ভিড়। তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে মাদ্রাসার সিঁড়িতে দাঁড়িয়েও ওই স্লোগান দিতে থাকেন ভিড়ে শামিল মানুষজন। এর পর মাদ্রাসার এক কোণে পুজো সারেন তাঁরা। অশান্তি চলাকালীন মোবাইল ফোনে কিছু জন গোটা ঘটনা ক্যামেরাবন্দি করেন। সেই ছবি এবং ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। 




আরও পড়ুন: Vande Bharat Train: মোদির হাতে উদ্বোধন ক’দিন আগেই, সটান মোষের দলকে ধাক্কা, ক্ষতিগ্রস্ত সুপারফাস্ট বন্দেভারত এক্সপ্রেস


এই ঘটনায় থানীয় অভিযোগ দায়ের করেন স্থানীয়রা। তাতে ন’জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের হয়েছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। তাতে হুঁশিয়ারি দিয়েছে সেখানকার মুসলিম সংগঠনগুলি। বৃহস্পতিবারই এ নিয়ে ছোট ছোট প্রতিবাদসভা চোখে পড়ে। অভিযুক্তদের গ্রেফতার না করা গেলে, শুক্রবার নমাজের পর বিরাট প্রতিবাদ মিছিল বার করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। 


এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারকে গোটা ঘটনার জন্য দায়ী করেছেন তিনি। মুসলিমদের ছোট করে দেখানোর কারণেই এই ধরনের ঘটনা উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। ট্যুইটারে আসাদউদ্দিন লেখেন, ‘কর্নাটকের বিদারের ঐতিহাসিক মাহমুদ গাওয়ান মসজিদ এবং মাদ্রাসার ভিডিও প্রকাশ্যে।  উগ্রপন্থীরা তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়ে এবং ওই স্থানটিতে অপবিত্র করে তোলে। বিদার পুলিশ এবং মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বম্মাইকে বলব, কী করে এমন ঘটতে দিতে পারেন আপনারা? মুসলিমদের ছোট করে দেখিয়ে বিজেপি-ই এই ধরনের ঘটনায় উস্কানি জোগাচ্ছে’।


একের পর এক সাম্প্রদায়িক অশান্তির ঘটনা কর্নাটকে


ওয়েইসিই প্রথম নন, কর্নাটকে সাম্প্রদায়িক অশান্তির জন্য় বিজেপি-কে সরাসরি দায়ী করেছেন অন্য দলের প্রতিনিধিরাও। স্কুল-কলেজে মুসলিম মেয়েদের হিজাব পরাকে ঘইরে যার সূত্রপাত ঘটে বলে দাবি তাঁদের। মন্দিরের বাইরে, মেলাপ্রাঙ্গনে মুসলিম ব্য়বসায়ীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা নিয়েও বিজেপি-কেই কাঠগড়ায় তুলছেন বিরোধীরা। এর আগে, অগাস্ট মাসেই হুব্বালি ইদগার মাঠে গণেশ চতুর্থী পালন ঘিরে অশান্তি ছডা়য়।