উত্তরাখণ্ড: কেদারনাথ মন্দির চত্বরে আদি শঙ্করাচার্যের সমাধিস্থল ও মূর্তির আবরণ উন্মোচন করলেন প্রধানমন্ত্রী। আজ সকালে তিনি উত্তরাখণ্ডের কেদারনাথে হেলিকপ্টারে পৌঁছোন। তারপর হেঁটেই যান মন্দিরে। সেখানে পুজো দেন নরেন্দ্র মোদি। এরপর ১২ ফুট উঁচু আদি শঙ্করাচার্যের মূর্তির আবরণ উন্মোচন করার পর মূর্তির সামনে বসে কিছুক্ষণ প্রার্থনা করেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া আজ উত্তরাখণ্ডে অন্য কর্মসূচিও ছিল তাঁর। প্রায় ৪০০ কোটি টাকার প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মোদি বেশ কয়েকবারই কেদারনাথে এসেছেন। ২০১৩-র প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর মোদি কেদারনাথের পুণনির্মাণ কার্যের আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু তখন অনুমতি মেলেনি। এরপর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি বেশ কয়েকবারই কেদারনাথ সফর করেছেন এবং বহু কোটি টাকা ব্যয়ে নয়া কেদারপুরী নির্মাণের সংকল্প গ্রহণ করেছিলেন। এই লক্ষ্যে ধারাবাহিকভাবে কাজ হচ্ছে। নয়া কেদারপুরী নির্মাণের কাজ ৯০ শতাংশ সম্পূর্ণ হয়েছে বলে খবর। উল্লেখ্য, ২০১৩-র প্রবল বন্যায় উত্তরাখণ্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। এরইমধ্যে শঙ্করাচার্যের সমাধিক্ষেত্রও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এরই মধ্যে আগামিকাল অর্থাৎ ৬ নভেম্বর কেদারনাথ মন্দিরের দরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
শুক্রবার একেবারে সাত সকালেই দেহরাদুন থেকে কেদারনাথ রওনা হন প্রধানমন্ত্রী। সকাল ৭ টা ৩০ মিনিট নাগাদ দেরাদুন বিমানবন্দরে নামেন মোদি। সেখানে তাঁকে স্বাগত জানান উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ঝামি এবং রাজ্যপাল তথা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) গুরমিত সিং।
এর পর সেখান থেকে ভারতীয় বায়ুসেনার বিমানে কেদারনাথ মন্দিরের উদ্দেশে রওনা দেন প্রধানমন্ত্রী। সকালে আটটা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত মোদি কেদারনাথ মন্দিরে পৌঁছে প্রথমে মন্দিরের বিভিন্ন সংস্কারমূলক কাজের পর্যালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁকে সংস্কারের ভিডিও দেখানো হয়। তারপর মন্দিরে প্রবেশ করে বিশেষ রুদ্রাভিষেকের পুজো করেন। পুজোর পর নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেন এবং আদি শঙ্করাচার্যর সমাধিস্থলে পৌঁছন। সমাধির নবনির্মাণের উদ্বোধণের পর প্রধানমন্ত্রী শঙ্করাচার্যের মূর্তির আবরণ উন্মোচন করেন। এরই মধ্যে সকাল ৯.৫০ টায় ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী।
কী বললেন মোদি
- ২০১৩ সালের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কেদারনাথ তীর্থক্ষেত্র পুনর্গঠনের কথা আমার অন্তর বার বারই বলেছে
- উত্তরাখণ্ডের শিখ তীর্থক্ষেত্র হেমকুন্ড সাহিবে শীঘ্রই রোপওয়েযোগাযোগ চালু হবে
- গতকাল ভারতীয় জওয়ানদের সঙ্গে ছিলাম
- আজ আমি জওয়ানদের ভূমিতে রয়েছি।
- আমি উৎসবের খুশি জওয়ানদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছি
- আমি ১৩০ কোটি দেশবাসীর আশীর্বাদ নিয়ে ওনার কাছে গিয়েছিলাম
- গোবর্ধন পুজোর দিনে কেদারনাথের দর্শন আর পুজো করা আমার কাছে অনেক সৌভাগ্যের বিষয়।
- দু-দিন আগে অযোধ্যায় দীপ উৎসবের আয়োজন গোটা বিশ্ব দেখেছে।
- আজ অযোধ্যায় শ্রী রাম চন্দ্রের মন্দির গৌরবের সঙ্গে বানানো হচ্ছে।
- অযোধ্যা তাঁর গৌরব ফেরৎ পেয়েছে।
- বর্তমানে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, বিশ্বাসের কেন্দ্রগুলিকে একই গর্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। এমনটাই হওয়া উচিত।
প্রধানমন্ত্রীর এই সফর ঘিরে সাজো সাজো রব উত্তরাখণ্ডে। কেদারনাথে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। তাঁর সফর ঘিরে প্রস্তুতি চূড়ান্ত। এরইমধ্যে একদিকে প্রধানমন্ত্রীর সফর, অন্যদিকে, দেবস্থানম বোর্ডের বিরুদ্ধে তীর্থ পুরোহিতদের বিরোধ দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশাল সংখ্যায় পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যখন কেদারনাথ মন্দিরে পুজো দেন, তখন অন্য পূণ্যার্থীদের কেদার ধাম মন্দির পরিসরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর সফর ঘিরে ফুলে ফুলে সাজিয়ে তোলা হয় মন্দির চত্বর।