পটনা: রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই, এই প্রবাদকে সত্য প্রমাণিত করে লালুপ্রসাদ যাদবের (Lalu Prasad yadav) দুয়ারে নীতীশ কুমার (Nitish Kumar)। বিজেপি-র (BJP) সঙ্গে দীর্ঘ টানাপোড়েনে মঙ্গলবারই ইতি টেনেছেনে নীতীশ। ইস্তফা দিয়েছেন জোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে। আর তার পরই পটনায় সটান লালুজায়া রাবড়ি দেবীর বাড়িতে হাজির হন নীতীশ (Bihar Political Crisis)। রাষ্ট্রীয় জনতা দল (RJD) সূত্রে জানা যাচ্ছে, লালুপুত্র তেজস্বী যাদবের (Tejashwi Yadav) সঙ্গে কথা প্রায় পাকা হয়ে গিয়েছে। নীতীশের সংযুক্ত জনতা দল (JDU) ফের তাঁদের সঙ্গে জোট সরকার গড়তে চলেছে বিহারে। শীঘ্রই রাজ্যপালের কাছে সরকার গঠনের প্রস্তাব নিয়ে পৌঁছবেন তাঁরা। মঙ্গলবার সন্ধেয় লালুপুত্র তেজস্বীও নীতীশের সঙ্গে রাজভবনে যাবেন বলে জানা যাচ্ছে।
বিজেপি-র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেই লালুর দুয়ারে নীতীশ
এখনও পর্যন্ত যে খবর মিলেছে, সেই অনুযায়ী, সম্ভাব্য আরজেডি-জেডিইউ জোট সরকারে নীতীশই মুখ্যমন্ত্রী হবেন। আগের মতো তাঁর ডেপুটি নিযুক্ত হবেন তেজস্বী। নয়া সরকারে নীতীশের কথাই শেষ কথা বলে মানতে বাধ্য থাকবেন সব মন্ত্রী-বিধায়ক। বিধানসভার স্পিকারের পদে থাকবেন আরজেডি-র কেউ।
বিগত কয়েক মাস ধরেই নীতীশের সঙ্গে জোট শরিক বিজেপি-র টানাপোড়েন চলছিল। সংখ্যার জোরে নীতীশকে নামমাত্র মুখ্যমন্ত্রী রেখে, অমিত শাহের অঙ্গুলিহেলনেই বিহারে জোট সরকার পরিচালনা করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ। সেই আবহে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ডাকা নীতী আয়োগের বৈঠকও এড়িয়ে যান নীতীশ। তার পর মঙ্গলবার দলের বিধায়ক-সাংসদদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন। সূত্রের খবর, সেখানে সকলে নীতীশের সিদ্ধান্তকেই সমর্থন করেন। তাঁকে নিঃশর্ত সমর্থন জানান সকলে। এর পরই জোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে রাবড়ির বাড়িতে পৌঁছন নীতীশ।
আরও পড়ুন: Nitish Kumar Resigns : "বিজেপির সঙ্গে কাজ করা মুশকিল হয়ে পড়ছিল", মুখ্যমন্ত্রী-পদে ইস্তফা নীতীশের
এর আগে, ২০১৪ সালেও বিজেপি-র সঙ্গে জোট সরকার ভেঙে দিয়েছিলেন নীতীশ। তার পর লালুর হাত ধরে ২০১৫ সালে ফের বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হন তিনি। সে বার তাঁদের জোটসঙ্গী ছিল কংগ্রেসও। কিন্তু তেজস্বীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে ২০১৭ সালে সেই জোট থেকেও বেরিয়ে আসেন নীতীশ। বিজেপি-র সঙ্গে ফের জোট গড়ে মুখ্যমন্ত্রী হন। কিন্তু গোড়া থেকেই এই জোট গলায় বিঁধছিল নীতীশের। কেন্দ্রীয় সরকারের সংশোধিত্ব নাগরিক আইন থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া কৃষি আইন, একাধিক সিদ্ধান্তের বিরোধিতা প্রকাশ্যেই করতে দেখা গিয়েছে নীতীশকে। আবার তাঁকে টপকে বিহারে নিজেদের ক্ষমতা জাহির করতে দেখা গিয়েছে বিজেপি-র বিধায়কদের।
বিহারের রাজনীতিতে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি
গত বিধানসভা নির্বাচনে নীতীশের দল সংখ্যায় পিছিয়ে থাকলেও, তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী করেই বিজেপি জোট সরকার গড়ে রাজ্যে। তার পর থেকেই নীতীশের উপর দিল্লি থেকে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছিল বলে দলীয় সূত্রে একাধিক বার দাবি করা হয়েছে। অন্য দিকে, লালু জেলবন্দি থাকলেও, কার্যত একার ক্ষমতায় আরজেডি-কে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে তুলে আনেন তেজস্বী। তার পর থেকে দু’তরফে সমীকরণে বদলের ইঙ্গিত মিলছিল। ইদে লালুর বাড়ির ইফতার পার্টিতেও কার্যত যেচে উপস্থিত হন নীতীশ। সম্প্রতি দেলর নেতা আরসিপি সিংহ নীতীশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলে বিজেপি-র সঙ্গে ফাটল আরও চওড়া হয় নীতীশের দলের, যা শেষমেশ জোটো ভাঙন ধরাল যেমন, তেমনই ফের লালুর কাছে নিয়ে গেল নীতীশকে।