দিল্লি: শুধু দেশের মধ্যেই নয়, পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত শহরের তকমা সেঁটে রয়েছে গায়ে (Delhi Pollution)। সংলগ্ন নয়ডার জোড়া টাওয়ার গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর, রাজধানীর বুকে দূষণের আরও ভয়াবহ অধ্যায় শুরু হতে চলেছে বলে আশঙ্কা মাথাচাড়া দিচ্ছে (Noida Twin Tower Demolition)। কারণ প্রায় ৪ হাজার কেজি বিস্ফোরক দিয়ে মাত্র ৯ সেকেন্ডে জোড়া টাওয়ার ধূলিসাৎ হলেও, দিল্লি এবং সংলগ্ন এলাকার মানুষের জীবনে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তে চলেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
দিল্লির জোড়া টাওয়ার ধ্বংসে পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব
রবিবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ জোড়া টাওয়ার গুঁড়িয়ে দেওয়ার আগেই স্থানীয় মানুষদের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল প্রশাসন। জোড়া টাওয়ারের ৫০০ মিটার পর্যন্ত এলাকাকয় প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু জোড়া টাওয়ার ধ্বংসের পর যে ৮০ হাজার টন ধ্বংস্তূপ জমা হয়েছে, তা সরাতে কমপক্ষে তিন মাস সময় লাগতে পারে বলে অনুমান। এ ছাড়াও ধ্বংসস্তূপ সরাতে আসা-যাওয়া মিলিয়ে কমপক্ষে ১৩০০ বার যাতায়াত যাতায়াত করতে হবে ট্রাক-লরিকে।
তাই দীপাবলির বাজি, পড়শি রাজ্যের ফসলের গোড়া পোড়ানো থেকে নির্গত ধোঁয়ার চেয়েও দিল্লির আকাশে আরও গাঢ় মেঘ জমা হতে চলেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ জোড়া টাওয়ার গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর ইতিমধ্যেই আশেপাশের কিছু নির্মাণে ফাটল দেখা দিয়েছে। যে সমস্ত বাড়িতে ফাটল দেখা যায়নি এখনও পর্যন্ত, তার ভিত নড়বড়ে হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ৮০ হাজার টনের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে ৫০ হাজার টন জোড়া টাওয়ারের বেসমেন্টেই পুঁতে দেওয়া হবে। বাকি ৩০ হাজার টনকে টাইলসে পরিণত করা হবে। কিন্তু ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কারের সময় ধুলোর ঝড় এবং বেসমেন্টে জমা ধ্বংসাবেশষ থেকে ভূগর্ভস্থ জলের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে নিয়ে গিয়ে যেখানে ফেলা হবে, সেখানকার জমিতে আগামী দিনে চাষবাসও করা যাবে না বলে মত তাঁদের।
আরও পড়ুন: Twin Tower News Live Updates: নয়ডার টুইন টাওয়ার ভাঙার সময় ১০০ মিটারের মধ্যে ছিলেন ৬ জন
মাত্র ৯ সেকেন্ডে গগনচুম্বী জোড়া টাওয়ার গুঁড়িয়ে দেওয়ায় প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞানের অগ্রগতি নিয়ে যতই লম্ফঝম্প হোক না কেন, তার প্রভাব টের পাওয়া গিয়েছে কিছু ক্ষণর মধ্যেই। মুহূর্তের মধ্যে জোড়া টাওয়ার ধসে যাওয়ার পর, ধুলোয় ঢেকে যায় গোটা এলাকা। শ্বাসকষ্ট, কাশির সমস্যা দেখা দেয় অনেকের মধ্যে। গাছের পাতা থেকে বাড়ি ঘর, ধুলোর পরতে ঢেকে যায় সবকিছু। পরিস্থিতি আঁচ করে এয়ারপোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া এবং ভারতীয় বায়ুসেনাকে ইতিমধ্যেই সতর্ক করা হয়েছে প্রশাসনের তরফে। বলা হয়েছে, ধুলোর আস্তরণ মাটি থেকে ৩০০ মিটার উপর পর্যন্ত এলাকা ঢেকে ফেলতে পারে।
রক্ষা পাবে না ভূগর্ভস্থ জলের ভাণ্ডারও!
পেল্লাই নির্মাণ ভেঙে ফেলার পর জল এবং বাতাসের সঙ্গে মিশে গিয়ছে সূক্ষ্ম ধূলিকণা। তাতে সিমেন্ট, বালি, কাঁকড়, চুন, কাঠের গুঁড়ো, তামা, পলিভিনাইল ক্লোরাইড এবং সর্বোপরি বিস্ফোরকে ব্যবহৃত উপাদানও রয়েছে, মানবশরীরের জন্য যা অত্যন্ত ক্ষতিকর। এর ফলে আগামী দিনে দিল্লি এবং সংলগ্ন এলাকার মানুষের মধ্যে যক্ষ্মা, ক্যানসার, হৃদরোগে এবং স্টমাক আলসারের মতো রোগ বাড়বে বলে আশঙ্কা। তাই প্রশ্ন উঠছে, দুর্নীতি রুখতে ব্যর্থ প্রশাসনিক ব্যর্থতার মূল্য কেন জীবন দিয়ে চোকাতে হবে সাধারণ মানুষকে!