সুদীপ্ত আচার্য, অরিত্রিক ভট্টাচার্য, রাজীব চৌধুরী, কলকাতা: আমলা নিয়ে সংঘাতের মধ্যেই জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠক করলেন প্রধানমন্ত্রী (PM Narendra Modi)। সূত্রের খবর, ভার্চুয়াল বৈঠকে ছিলেন না বাংলার কোনও ডিএম (DM)। কেন মুখ্যমন্ত্রী (CM Mamata Banerjee), মুখ্যসচিবকে (Harikrishna Dwibedi) এড়িয়ে বৈঠক? প্রশ্ন তুলে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল (TMC)। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ ছাড়া ডিএম-রা কি প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে অনুপস্থিত থাকতে পারেন? পাল্টা কটাক্ষ করেছে বিজেপি (BJP)।


১৯৫৪ সালের IAS-ক্যাডার বিধিতে বদল আনতে চেয়ে মোদি সরকারের পাঠানো প্রস্তাব ঘিরে ইতিমধ্যেই সংঘাতে জড়িয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্য। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীকে দু-বার চিঠিও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 


এই প্রেক্ষাপটেই শনিবার দেশের জেলাশাসকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করলেন নরেন্দ্র মোদি। যদিও নবান্ন সূত্রে খবর, এদিন বাংলার কোনও জেলাশাসক নরেন্দ্র মোদির বৈঠকে অংশ নেননি। সরাসরি জেলাশাসকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক ও সেখানে বাংলার ডিএম-দের অংশ না নেওয়া, সব মিলিয়ে মাথাচাড়া দিয়েছে বিতর্ক!


বৈঠকে একদিকে কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয় ও যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর প্রশংসার সুর শোনা গিয়েছে নরেন্দ্র মোদির গলায়। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, মুখে প্রশংসা করলেও, রাজ্যের সঙ্গে কেন্দ্রের সমন্বয় ও যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর উল্টোদিকে হাঁটছেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই!


কংগ্রেস লোকসভার দলনেতা অধীর চৌধুরীর কথায়, যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোতে আজকের কেন্দ্র সরকার আজকের বিজেপি পার্টি নির্লজ্জ ভাবে হস্তক্ষেপ করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোকে ভেঙে চুরমার করে দিতে চাইছে। আইএএস, আই এফ এস, এই সমস্ত চাকরি গুলো যারা করে অফিসাররা তাদের নিজেদের মতো করে নিয়ন্ত্রন এবং পরিচালনা করার জন্য তাদের জন্য নতুন করে রুল তৈরি করছে যাতে রাজ্যগুলোর আর নিজস্ব কোন ক্ষমতা না থাকে।


তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়ের কথায়, কেন্দ্র-রাজ্য পার্টনারশিপ ফমুর্লা। গত ৭৫ বছরে কোনও অসুবিধা হইনি। আজ কি এমন সমন্বয়ের অভাব হল? কারণ ব্যুরোক্রেসিকে আয়ত্ত করতে চায়। ডিএম সাথে সরাসরি মিটিং করছেন কেন? কেন রাজ্যের সিএস বাদ। খতিয়ান নিতে গেলে তো রাজ্যকে দরকার। যুক্তরাষ্ট্রীয় নীতির বিপক্ষে। কোথায় কাজ হচ্ছে আর হচ্ছে না, তা দেখে রাজ্য সরকার। টাইম টু টাইম রাজ্য জানায়। তাহলে পিএম কথা বলছেন কেন?


বিরোধীরা যখন এই অভিযোগ তুলছেন, তখন সুর চড়িয়েছে কেন্দ্রের শাসকদলও।  রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, এই সরকার কোনও কাঠামোতে বিশ্বস করে না। যা হবার মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ হয়েছে। উনি নিজেকে হয়তো প্রধানমন্ত্রী মনে করেন। কিন্তু উনি নির্দেশ না দিলে কারুর ক্ষমতা নাই মিটিংয়ে যোগদান করার। 


এবারই প্রথম নয়, সরাসরি জেলাশাসকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক ডাকা নিয়ে আগেও সংঘাতে জড়িয়েছে দুই সরকার। ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতি নিয়ে গতবছর বিশে মে, জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠক ডেকেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে পরে, ওই দিনের বৈঠকে কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রীকেও অংশ নিতে বলা হয়। যার মধ্যে ছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীও। যদিও সেই বৈঠকে তাঁকে বলতেই দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছিলেন মমতা। এই ঘটনার আট মাসের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী-জেলাশাসকদের বৈঠক নিয়ে ফের সংঘাতে জড়াল কেন্দ্র-রাজ্য।