নয়াদিল্লি: জনগণনা এবং জাতিগণনা একসঙ্গে হবে বলে ঘোষণা হয়েছিল আগেই। এবার আদমশুমারির নির্ঘণ্টও প্রকাশ করল কেন্দ্র। নরেন্দ্র মোদি সরকারি জাতিগণনায় রাজি হয়ে তাঁদের দাবিতেই সিলমোহর দিয়েছে বলে এতদিন দাবি করছিলেন বিরোধীরা। কিন্তু জাতি জনগণনা হলেও, শ্রেণিগণনা হবে না বলে জানা যাচ্ছে। অর্থাৎ কত সংখ্যক মানুষ তফসিলি জাতি, উপজাতি ও অনগ্রসর শ্রেণির মধ্যে পড়ছেন, তা জানা যাবে না বলে কেন্দ্রের একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে একাধিক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম। (Population Census 2027)
অবশেষে ২০২৭ সালে ভারতে জনগণনা হতে চলেছে। আর ১০০ বছর পর এই প্রথম জাতিগণনা হতে চলেছে দেশে। ২০২৭ সালের ১ মার্চের মধ্যে সমস্ত তথ্য় সংগ্রহ করে ফেলতে হবে। শেষবার ২০১১ সালের ১ মার্চ জনসংখ্যার তথ্য় সংগৃহীত হয়। এর পর ২০২০-২১ সালেই জনগণনা হওয়ার কথা ছিল। প্রথমে অতিমারির জেরে পিছিয়ে যায় জনগণনা। তার পরও কেন জনগণনা হচ্ছে না, প্রশ্ন তোলেন বিরোধীরা। শেষ পর্যন্ত অতি সম্প্রতি জনগণনার কাজে হাত দেওয়ার ঘোষণা করে কেন্দ্র। (Caste Census 2027)
শোনা যাচ্ছে, এ বছর জুন মাসের মাঝামাঝি জনগণনার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হতে পারে। দুই ধাপে সম্পূর্ণ হবে জনগণনা—প্রথমে বাড়ির তালিকা, তার পর জনসংখ্যার তালিকা। প্রথম পাঁচ-ছ’মাস ধরে বাড়ির তালিকা তৈরি হবে। দ্বিতীয় ধাপে জনগণনা শুরু হবে ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। জনগণনায় এক মাস সময় লাগতে পারে। ২০২৬ সালের ১ অক্টোবরের মধ্যেই লাদাখ, জম্মু ও কাশ্মীর, হিমাচলপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের মতো পাহাড়ি অঞ্চল থেকে পরিসংখ্যান সংগ্রহ করে ফেলতে হবে। গোটা দেশ ধরলে ২০২৭ সালের ১ মার্চ পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু সরকারের এই ঘোষণা ঘিরে কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে। জনগণনার কাজ শুরু হওয়ার কথা বলা হলেও, কবে হিসেব প্রকাশ করা হবে, তা জানানো হয়নি। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনগণনার গোটা প্রক্রিয়া শেষ করতে অনেকটা সময় নিতে পারে কেন্দ্র। ২০২৯ সালে জনগণনা রয়েছে, তার আগে চূড়ান্ত হিসেব সামনে আনা হবে কিনা, সন্দেহ রয়েছে। কারণ ২০১১ সালের হিসেব প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালের এপ্রিলে। OBC, SC, ST-র সংখ্যা প্রকাশ না করার অর্থ, শুধুমাত্র অর্থনৈতিক এবং সামাজিক মাপকাঠির নিরিখে কে, কোথায়, তাও বোঝা সম্ভব হবে না বলে মত রাজনৈতিক মহলের। ফলে মানুষের জীবনযাপন, অর্থনৈতিক অবস্থা, আড়ালেই থেকে যাবে বলে আশঙ্কা।
জনগণনার সঙ্গে সীমানা পুনর্বিন্যাসের প্রশ্নও জড়িয়ে রয়েছে। এর ফলে লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভার আসনসংখ্য়াও বাড়তে পারে। কারণ সংবিধানের ৮১ নম্বর অনুচ্ছেদে জনগণনার সঙ্গে আসন পুনর্বিন্যাসের কথা বলা রয়েছে। কিন্তু ১৯৭৬ এবং ২০০১ সালে সংবিধানে সংশোধন ঘটিয়ে তা করা হয়নি। বর্তমান নিয়ম অনুসারে, ২০২৬ সালে সীমানা পুনর্বিন্যাস করতেই হবে। কেন্দ্র কী করে, এখন তা দেখার। কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী বার বার করে জাতিভিত্তিক জনগণনার দাবি তপলছিলেন। জনসংখ্যার নিরিখে অধিকারের প্রশ্নটি বার বার তুলে ধরেন তিনি, যার প্রভাব ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনেও পড়েছিল।