মুম্বই: মিউকরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস এখন অতীত। এবার কোভিড-১৯ পরবর্তী অধ্যায়ে বা করোনা থেকে মুক্ত হওয়ার পর শরীরে বাসা বাঁধা নতুন রোগের সন্ধান পেলেন চিকিৎসকরা। যার নাম 'বোন ডেথ'।
ইতিমধ্য়েই, করোনা থেকে আরোগ্য লাভ করা তিন রোগীর মধ্য়ে এই উপসর্গ দেখা দিয়েছে। যা চিকিৎসকমহলে একইসঙ্গে আলোড়ন ও আশঙ্কা তৈরি করেছে। অনেকেই মনে করছেন, আগামী কয়েকমাসে এই রোগের প্রসার ঘটবে। তখন জটিল পরিস্থিতি তৈরি হবে।
কী এই বোন ডেথ?
চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই রোগের নাম আভ্য়াস্কুলার নেক্রোসিস (এভিএন)। সাধারণ ভাষায়, এর ফলে, হাড়ের টিস্যুর মৃত্যু। মিউকরমাইকোসিস ও এভিএন-এর একটা সাদৃশ্য হল-- দুটি ক্ষেত্রেই স্টেরয়েডের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে। অর্থাৎ, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের মতোই এক্ষেত্রেও, স্টেরয়েডের ব্যবহারের ফলে এই রোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
ফলত, গুরুতর কোভিড সংক্রমণে যাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন, অনেকক্ষেত্রেই স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করতে হচ্ছে। তাতে, কোভিড সেরে গেলেও,মিউকরমাইকোসিস বা হালে এভিএন-এ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনার দরজা খুলে যাচ্ছে।
কোথায় প্রথম ধরা পড়ল বোন ডেথ?
মুম্বইয়ের মাহিমে হিন্দুজা হাসপাতালে তিন রোগীর শরীরে এই উপসর্গ দেখা দেয়। তিনজনের বয়সই ৪০-এর নীচে। জানা গিয়েছে, কোভিড থেকে সেরে ওঠার ২ মাসের মাথায় এই রোগীদের এভিএন ধরা পড়ে। ওই হাসপাতালের চিকিৎসক সঞ্জয় আগরওয়াল বলেন, এই তিন রোগীর ফেমার বোন(থাই-য়ের হাড়)-এ ব্যথা শুরু হয়। তিনজনই চিকিৎসক হওয়ায় নিজেরাই বিষয়টিকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হন। ফলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু হয়।
আভ্য়াস্কুলার নেক্রোসিস ঠিক কী?
জন হপকিন্স মেডিসিনের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আভ্য়াস্কুলার নেক্রোসিস বা এভিএন যে কারোর হতে পারে। এমনকী, কোভিড না হলেও, এমনিও হতে পারে। অনেকক্ষেত্রে হাড়ে রক্ত সঞ্চালন ঠিকঠাক না হলেও এই রোগ হয়। রক্ত না পৌঁছানোয় ওই টিস্যু মরে যায়। হাড় নষ্ট হয়ে যায়। যদি এভিএন কোনও গাঁটে হয়, তাহলে গাঁটের স্তর নষ্ট হয়ে যায়। এটা যে কোনও হাড়ে হতে পারে।
সঞ্জয় আগরওয়ালের মতে, কোভিড-১৯ চিকিৎসায় কর্টিকোস্টেরয়েড জাতীয় ওষুধের দীর্ঘ ব্যবহারের ফলে, এভিএন-এর সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়।
তিনি জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে কোনও উপসর্গ নাও থাকতে পারে। পরে, অবস্থার অবনতি হলে গাঁটে ব্যথা হতে পারে। ব্যথার মান হাল্কা বা বেশি হতে পারে। আভ্য়াস্কুলার নেক্রোসিসের ব্যথা সাধারণত কোমরে হয়। এছাড়া, কুঁচকি, থাই ও নিতম্বে হতে পারে। এছাড়া, কাঁধ, হাঁটু, হাত ও পায়েও প্রভাব ফেলতে পারে ব্যথা।
কী করে রোখা সম্ভব?
কোমর বা থাইয়ে ব্যথা হলে দ্রুত এমআরআই করাতে হবে। এভিএন-এর স্টেজ ওয়ান এবং স্টেজ টু-তে আক্রান্ত হলে বাইফসফোনেট থেরাপির মাধ্যমে পূর্ণ আরোগ্য লাভ সম্ভব।