চণ্ডীগড়: প্রথম বার রথের চাকা আটকে গিয়েছিল ২০ আসনে। কিন্তু পাঞ্জাবে এ বার তরতরিয়ে একেবারে শাসকের আসনে বসে পড়ল আম আদমি পার্টি (Aam Aadmi Party/AAP)। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সুযোগ্য নেতৃত্ব এবং কংগ্রেসের প্রতি সাধারণ মানুষের অনাস্থা, এই দুইয়ে ভর করেই আপের পালে হাওয়া লেগেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। আর তার সঙ্গে সঙ্গেই আগামী দিনে জাতীয় রাজনীতিতে আপের ভূমিকা নিয়ে শুরু হয়েছে বিচার-বিশ্লেষণ। কিন্তু পাঞ্জাবে আপের এই বিরাট জয়ের আরও বেশ কিছু বিষয় কাজ করেছে।


পরিবর্তনের হাওয়া


গত ৭০ বছরে এ যাবৎ শিরোমণি অকালি দল এবং কংগ্রেসই পালা করে ক্ষমতায় থেকেছে পাঞ্জাবে। কিন্তু পাঁচ বছর অন্তর সরকার বদলালেও, দুই শিবিরের বিরুদ্ধেই দুর্নীতি, অপশাসনের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি পৃথক দল হলেও, কংগ্রেস এবং অকালি আসলে একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ, এমন অভিযোগও করেছেন সাধারণ মানুষ।


তাই ২০১৭ সালে ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংহের কাঁধে ভর করে কংগ্রেস বিপুল ভোটে জয়ী হলেও, তখন থেকেই পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করেছিল। যে কারণে প্রথম বার পা রেখেই রাজ্যে ২০টি আসনে জিতে যায় আপ। কিন্তু কৃষি আন্দোলনই মূলত পাঞ্জাবে হাওয়াবদলের পক্ষে সহায়ক হয় এ বার।


দিল্লি মডেল


মাদক বিরোধী অভিযান, সীমান্ত সুরক্ষা—বছর বছর এই ইস্যুতেই ভোট হয়েছে পাঞ্জাবে। ব্যাপক আন্দোলনের জেরে হালফিলে তাতে যোগ হয় কৃষি এবং কৃষক। কিন্তু এ সবের বদলে দিল্লি মডেলকে সামনে রেখেই জয়লাভ করে আপ। নামমাত্র মূল্যে বিশ্বমানের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ এবং পানীয় জল পরিষেবা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। পঞ্জাবে স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা মূলত বেসরকারিকরণের আওতায়ই রয়েছে। তাই দিল্লিবাসীর মতো সরকারি পরিষেবাকেই প্রাধান্য দেন পাঞ্জাববাসী।


আরও পড়ুন: Punjab Assembly Poll Result 2022: পঞ্জাবও হাতছাড়া কংগ্রেসের, বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে সরকার গড়ার পথে আপ


নারী এবং যুবসমাজ


এদিক ওদিক হাতেগোনা কয়েক জন মহিলা সাংসদ-নেত্রী থাকলেও, পঞ্জাবের রাজনীতি এখনও পুরুষতান্ত্রিকই। তাই মহিলা ভোট এবং যুবসমাজের সমর্থনকে পাখির চোখ করেই ময়দানে নেমেছিল আপ। বাংলার লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের অনুকরণে  প্রতি মাসে মহিলাদের অ্যাকাউন্টে ১ হাজার টাকা করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল তারা। এই জনকল্যাণমূলক পরিকল্পনাগুলিতে সার্বিক সাড়া মিলেছে।


ভগবন্ত সিংহ মান


বহিরাগত বিতর্কের ধারও মাড়ায়নি আপ। পাঞ্জাববাসীর মতামতকে গুরুত্ব দিতে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ভগবন্ত সিংহ মানকেও তারা জনভোটের মাধ্যমেই বেছে নেয়। কৌতূকশিল্পী থেকে রাজনীতিক ভগবন্ত অন্যদের থেকে চেয়ে আলাদা। বাড়ি-গাড়ি হাঁকানোর বদলে অনায়াসে ভাড়াবাড়িতে জীবন কাটানোর কথা বলতে পারেন। তাই তাঁর সঙ্গে ব্যক্তিগত সংযোগ অনুভব করেন পাঞ্জাবের মানুষ।